দেশের ১১ জেলায় বন্যার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে

আপডেট: September 4, 2021 |

দেশের বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারতের গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ায় দেশের উত্তর ও মধ্যভাগের ১১ জেলায় বন্যার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ১০টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চল ও নদীপাড়ের মানুষ। সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

বসতঘর ও ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বন্যা কবলিত মানুষ। তবে এসব এলাকায় ত্রাণ বা পুনর্বাসন কার্যক্রম এখনো জোরালোভাবে নেওয়া হয়নি।

শুক্রবার দুপুরে আগামী ২৪ ঘণ্টার বন্যার পরিস্থিতি তুলে ধরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এসব তথ্য জানায়। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় প্রায় সারা দেশে ভারী অথবা মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতেও বন্যার অবনতি হবে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বর্তমানে দেশের ১৫ জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে: কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর।

আক্রান্ত এসব জেলার মধ্যে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

এ ছাড়া দেশের ১০টি নদীর পানি ২২টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে দুধকুমার, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, ঘাঘট, তুরাগ, পদ্মা, আত্রাই ও ধলেশ্বরী।

 

জানা গেছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। কারণ পাহাড়ি ঢলের চাপ সামলাতে না পেরে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলায় তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে তিস্তার ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার কমপক্ষে পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে প্রবল ভাঙন।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে হু হু করে বাড়তে শুরু করে তিস্তার পানি। এ অবস্থায় তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বাড়ি-ঘরে পানি উঠে গেছে। পাশাপাশি চর এলাকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। অনেকের বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনের শিকার ২ হাজার পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

জানা যায়, পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে।

সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, হঠাৎ করে আবারও পানি বেড়ে তিস্তার চর এলাকায় শত শত মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। চর সিন্দুর্না ও চিলমারীপাড়ায় প্রায় ৩০০ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা বলেন, ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়ায় কি পরিমাণ পানি আসছে তা নির্ণয় করা যায়নি। তবে এর কারণে বিপদ বেড়েছে।

উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর পাশাপাশি মধ্যভাগের জেলাগুলোতেও বন্যার প্রকোপ বেড়েছে।

ফরিদপুর: ফরিদপুরে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার। ফরিদপুরের চার উপজেলা সদর, চরভদ্রাসন, ভাঙ্গা ও সদরপুরের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকার দেড় শতাধিক গ্রামের ফসলি জমি, সড়ক, নিচু এলাকার বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে মধুখালী, আলফাডাঙ্গা ও সদরপুরের মানুষজন। প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে বসতঘর ও ফসলি জমি। জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, বন্যা কবলিত এলাকায় ৫০ মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে নয় লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

 

এদিকে উত্তরাঞ্চলের আরেক বড় নদী ব্রহ্মপুত্রের পানি সমতলে স্থিতিশীল আছে। অপরদিকে যমুনা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি সমতলে হ্রাস পাচ্ছে যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

শুক্রবার আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় আছে এবং বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

বৈশাখী নিউজ/ ইডি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর