ভারতে কৃষক মৃত্যুতে উত্তেজনা, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে হেনস্তার দাবি

আপডেট: October 4, 2021 |

কংগ্রেস নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদ্রা দাবি করছেন ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের লাখিমপুর খেরিতে কৃষি সংস্কারের প্রতিবাদে বিক্ষোভে রবিবার আটজনের মৃত্যুর ঘটনার পর সেখানে যেতে গিয়ে পুলিশের হাতে তিনি আটক এবং নিহগ্রের শিকার হয়েছেন।

দিল্লি থেকে বিবিসি বাংলার শুভজ্যোতি ঘোষ জানাচ্ছেন, উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে আটক করে থানায় নিয়ে যাবার পর তাকে এখন ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

তবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদ্রা সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, সহিংসতায় নিহত কৃষকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি লাখিমপুর খেরায় পৌঁছানর চেষ্টা করলে তাকে পথে একাধিকবার বাধা দেয়া হয়।

উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে কৃষকদের বিক্ষোভে বিজেপির একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলে গাড়িচাপা দিয়ে অন্তত চারজন কৃষককে হত্যা করেছেন, এই অভিযোগ ওঠার পর জাতীয় রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রার ছেলে আশিস মিশ্রা বিবিসির কাছে এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও উত্তরপ্রদেশ সরকার তার বিরুদ্ধে আজ হত্যার চার্জ এনেছে।

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ‘আটক’

বিবিসি বাংলার দিল্লি সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, কংগ্রেস সূত্র থেকে বলা হয়েছে সোমবার খুব সকালে সড়কপথে লাখিমপুর খেরির দিকে রওনা হওয়া প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে আটকে দেয় রাজ্য পুলিশ।

কংগ্রেস নেত্রী পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়লে তাকে কিছু সময়ের জন্য গ্রেপ্তার করে একটি সরকারি গেস্ট হাউসেও আটক রাখা হয়।

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী পরে বলেন, “আমি লাখিমপুর খেরি গেলে সেখানে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হবে এটা একদম বাজে কথা।”

”ওখানে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে কারণ কেউ সেখানে গাড়িচাপা দিয়ে নিরীহ মানুষকে মেরেছে।

”তাদেরকে সমবেদনা জানাতেও আমরা যেতে পারছি না, কোনও আইনি পরোয়ানা বা নির্দেশ ছাড়াই আমাদের আটক করা হচ্ছে।”

কংগ্রেসের একজন ঊর্ধ্বতন নেতাও এনডিটিভি সংবাদমাধ্যমে জানান পুলিশ মিজ গান্ধী এবং তার “পেছু ধাওয়া করে এবং তাদের যেতে বাধা দিয়ে পেছনে ঠেলে দেয়”।

তিনি জানান, এরপর পুলিশ “বৈধ কোন কাগজপত্র ছাড়াই” তাদের আটক করে।

কংগ্রেসের এমপি মি. হুদা যিনি প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাচ্ছিলেন, তিনি জানিয়েছেন “লিখিত নির্দেশ” ছাড়া তাদের আটক করা হয়েছে এবং তিনি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন “তার এবং মিজ গান্ধীর ওপর শারীরিকভাবে বল প্রয়োগ করা হয়েছে”।

মিজ গান্ধীর এই অভিযোগ নিয়ে পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোন মন্তব্য করেনি।

লাখিমপুর থমথমে, কঠোর নিরাপত্তা

রবিবার নেপাল সীমান্ত লাগোয়া উত্তর প্রদেশের লাখিমপুর খেরিতে ভারতে কৃষি সংস্কারের প্রতিবাদে বিক্ষোভের ঘটনায় চারজন কৃষকসহ আটজনের মৃত্যুর পর শহরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং রক্তাক্ত অবস্থায় মৃতদেহ পড়ে রয়েছে।

শহরের পরিস্থিতি এখনও থমথমে এবং উত্তেজনা চরমে রয়েছে বলে দিল্লি থেকে জানাচ্ছেন শুভজ্যোতি ঘোষ।

উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে কৃষকদের বিক্ষোভে বিজেপির একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলে গাড়িচাপা দিয়ে অন্তত চারজন কৃষককে হত্যা করেছেন, এই অভিযোগ ওঠার পর জাতীয় রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে।

এই ঘটনা থেকেই লাখিমপুর খেরিতে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে রবিবার।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রার ছেলে আশিস মিশ্রা বিবিসির কাছে এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও উত্তরপ্রদেশ সরকার তার বিরুদ্ধে আজ হত্যার চার্জ এনেছে।

বেশ কয়েকজন বড় মাপের কৃষক নেতা আজ সোমবার ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। এদের একজন রাকেশ টিকায়েত সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন তারা গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন।

ভারত সরকারের প্রস্তাবিত কৃষি সংস্কারের বিরুদ্ধে দশ মাস ধরে যে বিক্ষোভ চলছে, রবিবার লাখিমপুর খেরির সহিংসতা তাতে নাটকীয় মাত্রা যোগ করেছে।

সহিংসতার শুরু যেভাবে

উত্তরপ্রদেশের লাখিমপুর খেরিতে গতকাল রবিবার রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌরিয়া ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রার সফরের সময় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন স্থানীয় কৃষক নেতারা।

ভারতের বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ হঠাৎই সহিংস মোড় নেয় – যখন মন্ত্রীর ছেলের কনভয় আন্দোলনরত কৃষকদের অন্তত চারজনকে পিষে দিয়ে যায়। এর পর সেখানে যে তীব্র সহিংসতা শুরু হয়, তাতে মারা যান আরও অন্তত চারজন।

স্থানীয় কৃষক নেতা পিন্দার সিং সিন্ধু বিবিসিকে বলেন, “আমরা হেলিপ্যাডের বাইরে কালো পতাকা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। প্রশাসন পরে সেই রুট বদলে দেয়, হেলিকপ্টারের বদলে মন্ত্রীরা গাড়িতে আসেন। তারপরও যখন কৃষকরা শান্তিপূর্ণভাবে জমায়েত করছিলেন, তখন মন্ত্রী অজয় মিশ্রার ছেলে কিছু গুন্ডাকে সঙ্গে নিয়ে এসে তাদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়।”

জাতীয় স্তরের কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতও অভিযোগ করেন, শুধু গাড়ি দিয়েই হামলা চালানো হয়নি – কৃষকদের ওপর গুলিও চালানো হয়েছে।

নিহত কৃষকদের দেহ নিয়ে এরপর শুরু হয় পথ অবরোধ – কৃষকরা দাবি জানাতে থাকেন দোষীদের সাজা না-হওয়া পর্যন্ত তারা সহকর্মীদের দেহ সৎকারও করতে দেবেন না।

রবিবার মাঝরাতের পর অভিযুক্ত আশিস মিশ্রা অবশ্য বিবিসির কাছে দাবি করেন, তিনি সকাল নটা থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান শেষ না-হওয়া পর্যন্ত সভাস্থলেই ছিলেন, কৃষকদের বিক্ষোভের ধারেকাছেও যাননি। কৃষকদের কারা হত্যা করল, সেই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বৈশাখী নিউজ/ এপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর