স্কুইড গেম থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোন নম্বর বাদ দিচ্ছে নেটফ্লিক্স

আপডেট: October 8, 2021 |

খুব জনপ্রিয় সিরিজ স্কুইড গেম-এর একটি দৃশ্যে দেখানো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোন নম্বর তারা এডিট করে বাদ দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেটফ্লিক্স। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এক নারী বলছেন এটি বাস্তবে তার ফোন নম্বর এবং তার মোবাইলে আসা ফোন কল সামাল দিতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।

টান টান উত্তেজনার এই দক্ষিণ কোরিয় টিভি নাটক সিরিজে ঋণে জর্জরিত প্রতিযোগীদের একটি গেম বা খেলায় অংশ নেয়ার জন্য এই নম্বরেই ফোন করতে বলা হয়। বিজয়ীর জন্য থাকে বিশাল অঙ্কের নগদ অর্থ পুরস্কার হিসাবে জেতার সুযোগ। তাদের অংশ নিতে হয় শিশুরা যে ধরনের খেলা খেলে, সেরকম এক গেমে। তবে এই গেম একেবারে জীবন-মৃত্যুর লড়াই। এতে হারলে মৃত্যু। আর জিতলে খেলার পরের ধাপে যাবেন প্রতিযোগী।

কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার এক নারী বলেছেন সিরিজটিতে প্রতিযোগীরা যে নম্বরে ফোন করছেন বলে দেখানো হয়, সেটি আসলে তার ফোন নম্বর। বহু মানুষ এখন তার নম্বরে কল করে খেলায় অংশ নেবার জন্য অসংখ্য অনুরোধ করছে। বিশ্ব জুড়ে তুমুল জনপ্রিয় স্কুইড গেম এখন নেটফ্লিক্সের বিশ্ব র‍্যাংকিং এর এক নম্বর স্থানে পৌঁছে গেছে।

দক্ষিণ কোরিয় নারীর অভিযোগ কী?

দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে সিয়ংজু এলাকার এক ব্যবসায়ী নারী স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন যে, তার ফোনে তিনি হাজার হাজার টেক্সট মেসেজ এবং ফোনকল পাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ফোন মেসেজ ও কলের সংখ্যা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে তার প্রাত্যহিক জীবন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল।

দশ বছরের বেশি সময় আমি এই ফোন নম্বর ব্যবহার করছি, কাজেই আমি হতচকিত হয়ে গেছি। আমার মোবাইল থেকে চার হাজারের ওপর কল আসা ফোন নম্বর আমাকে ডিলিট করতে হয়েছে, মানি টুডে অনুষ্ঠানকে তিনি বলেন। প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি কী হচ্ছে। পরে আমার বন্ধু জানায় যে আমার নম্বর এসেছে স্কুইড গেমে। তখন ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারি।

তাকে স্থানীয় মুদ্রায় ৫০ লক্ষ ওয়ন (৪,১৭৮ ডলার সম-পরিমাণ) ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেয়া হয়, তবে সেটা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানিয়েছেন।

এই নম্বর নিয়ে কী করছে নেটফ্লিক্স?

নেটফ্লিক্স ওই নারী ব্যবসায়ীকে ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছে বলে তিনি যে দাবি করেছেন, সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি নেটফ্লিক্স। তবে তারা অনুষ্ঠানের ভক্ত দর্শকদের কাছে অনুরোধ করেছেন তারা যেন ওই নম্বরে ফোন না করেন।

বুধবার নেটফ্লিক্স জানিয়েছে, প্রযোজক সংস্থার সাথে আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি এবং সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছি। যেসব দৃশ্যে ওই নম্বরটি এসেছে, সেসব দৃশ্য প্রয়োজনে এডিট করে বাদ দেবার বিষয়টি আমরা বিবেচনা করছি, এই গেম শোটি প্রথম শুরু হয়েছে ১৭ই সেপ্টেম্বর এবং নেটফ্লিক্স বলছে মাত্র দশ দিনের মধ্যে ৯০টি দেশে এই শো র‍্যাংকিং-এ এক নম্বরে উঠে গেছে।

স্কুইড গেমের জনপ্রিয়তা কী কারণে?

এই ধরনের অনুষ্ঠানের ধরন খুব যে নতুন বা অভিনব তা নয়। তবে বিবিসির ওয়েই ইপ এবং উইলিয়াম লি বলছেন সিরিজ অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় ভিস্যুয়াল, চরিত্রগুলোর সাথে বাস্তবের মিল এবং মানব চরিত্রের কিছু কঠিন ও বেদনাদায়ক দিক যেভাবে এতে উঠে এসেছে, তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষের মনকে ছুঁয়েছে।

স্কুইড গেম খেলায় আছে ৪৫৬জন প্রতিযোগী। এদের সবাই ঋণে জর্জরিত এবং উঠে দাঁড়াতে মরিয়া। এই খেলা জীবন বাজি রেখে লড়ার – বাঁচার জন্য এক মরণ-পণ গেম। ছয়টি খেলার এই সিরিজ জিতলে বিজয়ীর হাতে আসবে ৪৫.৬ বিলিয়ন কোরিয়ান ওয়ন বা ৩৯ মিলিয়ন ডলার। আর হারলে মৃত্যু অবধারিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই গেম সিরিজের সাফল্যের চাবিকাঠি হল এর চরিত্রদের বেশিরভাগই সমাজের প্রান্তিক মানুষ। তাদের সকলেই বিশাল আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত হলেও তারা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

যেমন, প্রধান চরিত্র একজন বেকার যার জুয়ার সমস্যা রয়েছে। ফলে পরিবারের কারোর কাছ থেকে সে সম্মান পায় না। এই গেম সিরিজে সে দেখা পেয়েছে একজন তরুণীর যে উত্তর কোরিয়া ত্যাগ করে দক্ষিণে চলে এসেছে। তার জীবনে অনেক কঠিন অভিঘাত এসেছে। তার সাথে দেখা আরেকজন পাকিস্তানি শ্রমিকের যার মালিক তার সাথে খুব দুর্ব্যবহার করেন।

সাংমিউং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব সংস্কৃতি বিষয়ের অধ্যাপক কিম পিয়ং-গ্যাং বিবিসিকে বলেন: মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম যারা আসল জীবনে বিচ্ছিন্নতা এবং প্রতিকূলকতার শিকার হয় পদে পদে, তারা এই চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেদের মিল খুঁজে পেয়েছেন এবং চরিত্রগুলো, দেখা যাচ্ছে, তাদের সহানুভূতি কুড়াচ্ছে।

জীবনযুদ্ধে পরাজিত, সমস্যায় জর্জরিত এবং গভীর হতাশাগ্রস্ত কিছু মানুষের গল্প নিয়ে তৈরি এই থ্রিলার সিরিজ ‘স্কুইড গেম’-এর গল্প লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন হোয়াং ডং-হিউক। সূত্র: বিবিসি বাংলা

বৈশাখী নিউজ/ বিসি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর