আজ মরমী সাধক হাসন রাজার ৯৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী

বিখ্যাত মরমী সাধক এই হাসন রাজার ৯৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

১৯২২ খ্রিস্টাব্দে এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অনেকটা নিরবেই কাটছে হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে সরকারিভাবে কোনো আয়োজনের খবর পাওয়াও যায়নি। তবে পারিবারিকভাবে হাসন রাজা রীতি অনুযায়ী মিলাদ ও শিরনী রিবতরণ করা হবে।

১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর (৭ পৌষ ১২৬১) সুনামগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী সুরমা নদীর তীরে লক্ষণশ্রী পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে ধনাঢ্য জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন এই মরমী কবি। পিতা ছিলেন, প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ও মাথার নাম হুরমত বিবি। তাদের তৃতীয় পুত্র ছিলেন হাসন রাজা। তিনি সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রী আর সিলেটের একাংশ নিয়ে পাঁচ লাখ বিঘার বিশাল অঞ্চলের জমিদার ছিলেন মরমী গীতিকবি হাসন রাজা। পিতা ও মাতা উভয়ের কাছ থেকে পাওয়া বিশাল জমিদারীর মালিকানা চলে আসে কিশোর বয়সে তাঁর হাতে। বেহিসাবী সম্পদ আর ক্ষমতার দাপটে বেপরোয়া জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু এক সময় তার ভেতরের ভ্রান্তি ঘুচে যায়। তিনি তাঁর সম্পদ জনকল্যাণের জন্য উইল করে দিয়ে কয়েকজন সঙ্গিনীকে নিয়ে হাওরে হাওরে ভাসতে থাকেন। আর এর মধ্যে খুঁজতে থাকেন সেই মহা পরাক্রমশীলকে। সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজতে খুঁজতে এক সময় আবিষ্কার করেন, তাঁর নিজের মধ্যেই তাঁর বাস। সৃষ্টিকর্তার প্রেমে পাগল হাসন রাজা সেই সময় থেকেই নিজের সৃষ্টি গান গেয়েই বিখ্যাত হয়েছেন দেশে-বিদেশে। হাসন রাজার গানের মাঝে অন্তর্নিহিত রয়েছে নশ্বর জীবন, স্রষ্টা এবং নিজের কৃত কর্মের প্রতি অপরাধবোধের কথা।

১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর রচিত ২০৬ টি গান নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। এই সংকলনটির নাম ছিল ‘হাসন উদাস’। এর বাইরে আর কিছু গান ‘হাসন রাজার তিনপুরুষ’ এবং ‘আল ইসলাহ্’ সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সুনামগঞ্জ শহরের লক্ষণশ্রীতে মায়ের কবরের পাশে কবর দেওয়া হয় তাঁকে। তার এই কবরখানা তিনি মৃত্যুর পূর্বেই নিজে প্রস্তুত করেছিলেন। মরমী এই সাধকের জীবন ও দর্শন কিংবা তার গানের চর্চা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করার দাবি জানিয়েছেন দর্শনার্থীরা।

হাসন রাজার বাড়িতে ঘুরতে আসা রাসেল আহমেদ বলেন, হাসন রাজার বাড়ী দেখার জন্য এসেছি। মিউজিয়ামটি ছাড়া দেখার কিছু নেই। বসারও জায়গা নেই। হাসন রাজার বাড়ীটিকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

আরেক দর্শনার্থী হাসান আলী বলেন, একজন গুণী সাধক হাসন রাজা। একজন জমিদারের গান শুনলে মন ভরে যায়। এই মরমী সাধকের সৃষ্টিকর্ম বাচানোর সরকারের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার দাবি জানাই।

হাসন রাজা’র প্রপৌত্র ও হাসন রাজা গবেষক সামারীন দেওয়ান বলেন, হাসন রাজার ৯৯তম মৃত্যুবার্ষিকী ৬ ডিসেম্বর। রীতি অনুযায়ী মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। তবে হাসন রাজা জীবিত থাকতে শবেবরাত, শুভ মেহেরাজ, নবী করিম (সাঃ) জন্মদিনে সুন্নী এবং শিয়া সম্প্রদায়ের লোকদেরকে একত্র করে মিলাদ শরীফ পড়িয়ে দোয়া পড়াতেন। শেষে শিরনী বিতরণ করতেন। আমরা এবার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পাবিবারিকভাবে সেই হাসন রাজার রীতি অনুযায়ী মিলাদ ও শিরনী বিতরণের আয়োজন করেছি।

তিনি আরও বলেন, হাসন রাজার স্মৃতি ও মিউজিয়াম দেখতে অসংখ্য দর্শনার্থীরা আসেন। হাসন রাজাকে নিয়ে সরকারিভাবে কোনো উদ্যেগ নেই। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে হাসন রাজাকে বিশ^বাসীর কাছে তুলে ধরা যেত। হাসন রাজার প্রতি কতৃপক্ষের নজড় না থাকায় হাসন রাজা অবহেলিত আছে।

জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাবেল বলেন, হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলায় কোনো কর্মসূচি নেয়া হয়নি। তবে আমরা চেষ্ঠা করবো জেলা শিল্পকলা একাডেমির অনলাইনে স্থানীয় শিল্পীদেরকে নিয়ে গানের মধ্যে হাসনরাজাকে স্মরণ করার।

বৈশাখী নিউজ/ ইডি