কন্টেইনার ডিপোতে আগুনে নিহত বেড়ে ২৩

আপডেট: June 5, 2022 |

সীতাকুণ্ডে ভাটিয়ারীতে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ৫ কর্মীসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে। এছাড়াও আহত হয়েছে প্রায় চার শতাধিক মানুষ।

সবশেষ খবর অনুযায়ী আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট কাজ করছে। দগ্ধ ও আহতদের মধ্যে ১৯ জনকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ২১ জন এবং পুলিশের ১০ সদস্য রয়েছেন।

এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ তিনজনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়েছে। সকাল আটটার দিকে (রোববার) তাদের অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন মাগফারুল ইসলাম (৬৫) ও খালেদুর রহমান (৬০)।

বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন জানান, তাদের দুজনেরই শরীরের ১২ শতাংশ করে দগ্ধ হয়েছে। তাদরকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্য ও তার আরেক সহকর্মীকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যের নাম মো. তুহিন। তিনি সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের কনস্টেবল। তার সঙ্গে একই থানার গুরুতর আহত কনস্টেবল কামরুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

শনিবার রাতে আগুন লাগার ১১ ঘণ্টা পার হলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন। কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনার পরই আবার বিস্ফোরণ হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। আগুন নেভানোর বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিস্ফোরণ যেভাবে হচ্ছিল তাতে ভেতরে থাকা সম্ভব ছিল না। আগুন কতক্ষণে নেভাতে পারব, এ বিষয়ে কিছুই বলা সম্ভব নয়।

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন শিকদার বলেন, শনিবার রাত ১১টার দিকে কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ২১ কর্মী আহত হয়েছেন। সর্বশেষ ২৫টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে।

রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা রক্তের জন্য হ্যান্ডমাইকে একের পর এক ঘোষণা দিচ্ছেন। যাদের রক্তের প্রয়োজন এবং যারা রক্ত দিতে চান তাদের যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। সবাইকে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের দিকে যেতে বলা হচ্ছে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াস হোসেন চৌধুরী জানান, দগ্ধ ও আহতদের হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটে নেয়া হয়েছে। রক্তের প্রয়োজন। সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সব চিকিৎসকদের হাসপাতালের আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।

জরুরি বিভাগ, বার্ন ইউনিট, সার্জারি ইউনিটসহ অন্যান্য সব ইউনিটকে এখন অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, বিএম ডিপোতে আগুন থেকে কন্টেইনারে বিস্ফোরণে আহতরা সবাই চট্টগ্রাম মেডিকেলে এসেছেন, এখনো আসছেন। সব চিকিৎসক ও নার্সদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জড়ো করেছেন। রক্ত দেয়ার জন্য লোকজন জড়ো করা হচ্ছে।

এদিকে হাসপাতালে অযথা ভিড় না করতে স্থানীয় জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ইউসুফ বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সামনে উৎসুক জনতা ভিড় করছে। এ কারণে আহতদের হাসপাতালে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে। মহাসড়ক এবং শহরের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের টহল দল কাজ করছে, যেন আহতদের দ্রুত হাসপাতালে আনা যায়।

ফৌজদারহাট লিংক রোড বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, রাত পৌনে ৩টার দিকে সীতাকুণ্ড থেকে একসঙ্গে অনেকগুলো অ্যাম্বুলেন্স শহরের দিকে প্রবেশ করে। অ্যাম্বুলেন্সগুলো যাতে নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়।

চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আশেকুর রহমান বলেন, আরও রোগী হাসপাতালে আসছেন। তাদের মধ্যে শ্রমিক, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কর্মী এবং সাধারণ মানুষও আছেন। আহতের সংখ্যা আরও বাড়ছে।

পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাত পৌনে ১১টার দিকে এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একটি কনটেইনারে রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২৪ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এ কনটেইনার ডিপো। মূলত এখান থেকে বিভিন্ন রপ্তানি পণ্য বিদেশে পাঠানো হয়। ডিপোটিতে ৫০ হাজারের বেশি কনটেইনার মজুত ছিল। এসব কনটেইনারে কেমিক্যাল ও গার্মেন্টস পণ্য রয়েছে। এখানে কর্তরত বেশিরভাগ লোকই চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বাসিন্দা।

বৈশাখী নিউজ/ ফাজা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর