সস্তা জনপ্রিয় ইমানদার প্রমাণ করতেই কি এসব করছি?

আপডেট: June 10, 2022 |

ফখরুল ইসলাম শাহীন: আরব দেশে রাসুল (সা.) যে পথ দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতেন, সে পথে প্রায় প্রতিদিন কাঁটা বিছিয়ে রাখতো এক বিধর্মী বুড়ি। বুড়ি প্রতিদিন এভাবে কাটা বিছিয়ে রাখে, আর নবীর (সা.) পায়ে সে কাঁটা ফুটলে নবী (সা.) ব্যথা পেতেন, আর বুড়ি সেটি দেখে মজা পেত এবং দূর থেকে দেখে হাসতো।

কিন্তু, নবী (সা.) একদিন খেয়াল করলেন—তাঁর চলার পথে আর কাঁটা নেই, তিনি একটু অবাক হলেন। তারপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন যে, সে বুড়ি অসুস্থ। তখন তিনি তাকে দেখতে গেলেন এবং তার সেবা-শুশ্রূষা করলেন। মহানবী (সা.)-এর মহানুভবতা দেখে বুড়ি অবাক হলো এবং নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইল এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন।

ঘটনা-২
তায়েফে যখন মহানবী (সা.) ইসলাম প্রচার করতে গেলেন তখন কাফেরেরা তাঁকে তায়েফ ত্যাগ করার নির্দেশ দেয় এবং ফেরার সময় উচ্ছৃঙ্খল বালকদের লেলিয়ে দেয় যেন তারা নবীজি (সা.)-এর দিকে পাথর নিক্ষেপ করে এবং গালাগাল করে। তায়েফের বালকেরা নবীকে এমনভাবে রক্তাক্ত করে যে, রক্তে তাঁর জুতা ভরে যায়। একসময় কষ্টে রাসুলুল্লাহ (সা.) মাটিতে বসে পড়লেন। তখন দুষ্ট কাফেরেরা তাঁর হাত ধরে উঠিয়ে দিত এবং সামনে চলতে বলতো। আর, সামনে পা বাড়ালেই পাথর নিক্ষেপ করত।
এ সময় নবী (সা.) দোয়া পড়তে থাকলেন। আল্লাহ তায়েফের পাহাড়ে ফেরেশতাদের পাঠান। তাঁরা মহানবী (সা.)-এর কাছে দুই পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত তায়েফের অধিবাসীদের পাহাড়ে পিষে ফেলার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু, প্রিয় নবী মহানবী (সা.) তা দিতে অস্বীকার করেন এবং বলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি তাদের ক্ষমা করো। তারা না বুঝে আমাকে কষ্ট দিয়েছে। তুমি তাদের হেদায়েত দাও।’ আর ফেরেশতাদের নবী (সা.) বলতে লাগলেন, ‘আমি আশা করি, তাদের বংশধরদের মধ্যে এমন লোক জন্ম নেবে, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না।’

এবার আসি মূল কথায়। সম্প্রতি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কয়েক জন ব্যক্তি নবী (সা.)-কে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অশোভনীয় বক্তব্য বা মন্তব্য করেছেন। এর প্রতিবোদ করছে মুসলমান সমাজ। কিন্তু, কখনো কখনো সে প্রতিবাদের ভাষাটা যখন হয় অমুসলিমদের বাড়িঘর ভাঙা, ধর্মীয় উপসনালয়ে আঘাত করা, নিজ জম্মভূমি থেকে বিতাড়িত করার মতো ঘটনা—তখনই বাধে আপত্তি। কে কী মন্তব্য করল, তার জন্য অন্যদের কেন কষ্ট দেওয়া হবে? কেন অন্যের ধর্মীয় উপসনালয়ে আঘাত করা হবে?
যে নবীর (সা.) অপমানে এমন গর্হিত-অন্যায় কাজ করা হয়, সে নবীর (সা.) জীবন দর্শনে এমন কোনো ঘটনা আছে কি? নবী (সা.)-র পথে কাঁটা কিংবা পাথর নিক্ষেপেও তিনি তাদের জন্য আলাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তাদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করেছেন। কত মহা মানব ছিলেন তিনি। ক্ষামা আর ভালোবাসাই ছিল তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট। তাহলে তাঁর অনুশারী দাবি করে আমরা কেন এসব করছি? যারা এসব করছে তাদের উদ্ধেশ্য কি? নাকি নিজেদের সস্তা জনপ্রিয় ইমানদার প্রমাণ করতেই এসব করছি? আসুন আমরা এসব ঘৃণিত কাজ পরিহার করি। সংঘাত এড়িয়ে চলি। যারা এসব করছে তাদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করি।
আল্লাহ সবাইকে সুস্থ আর ভালো রাখুন।

ফখরুল ইসলাম শাহীন
গণমাধ্যম কর্মী/সাংবাদিক

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর