সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া নৈরাজ্য: যাত্রীদের সঙ্গে প্রতিদিনই বাকবিতণ্ডা-হাতাহাতি

আপডেট: August 8, 2022 |

সিলেট প্রতিনিধি : সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া নৈরাজ্য চরম অবস্থায়। নগরীতে প্রতিদিনই হচ্ছে ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা- হাতাহাতি। সাধারণ মানুষের দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির সাথে অতিরিক্ত ভাড়া ঘাড়ে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারো কারো কাছে তা অসহনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

করোনা মহামারির প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাত্রীবহনের আসন নির্দিষ্ট করে দেয়ার পরও সেটি মানছেন না সিলেট নগরীর সিএনজি অটোরিকশা চালকরা। একইসাথে তারা ভাড়াও নিচ্ছেন নিজেদের ইচ্ছেমতো। এমন নৈরাজ্যে যাত্রীদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় প্রতিদিন যাত্রী এবং চালকদের মধ্যে বাক-বিতন্ডার ঘটনা ঘটছে।

তবে অতিরিক্ত ভাড়া, অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পরিবহন নেতৃবৃন্দ বলছেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। অভিযোগের ভিত্তিতে অনেক চালককে বহিষ্কারও করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ট্রাফিক বিভাগ বলছে, পাঁচজন যাত্রী বহন করায় চালকদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে।

সারা দেশের মতো সিলেটেও জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। এ অবস্থায় হিমশিম খাচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ। তার মধ্যে প্রতিদিন ঘটছে চালক এবং যাত্রীদের মধ্যে ভাড়াবিতন্ডা। যাত্রীদের অভিযোগ, সিএনজি অটোরিকশা চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। তাদের দাবি, করোনার সময় যাত্রী কম নিয়ে ভাড়া বেশির বিষয়টি আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু এখন যাত্রী পাঁচজন নিয়েও ভাড়া কেন কমানো হচ্ছে না।

ওসমানী মেডিকেলের সম্মুখে সিএনজি অটোরিকশা খুঁজছিলেন চন্ডিপুল এলাকার বাসিন্দা হেলাল মিয়া। তার অভিযোগ, এমনিতে প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। তারমধ্যে ভাড়া নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত। কিন্তু কেউ কথা বলছে না। তিনি বলেন, করোনার আগে মেডিকেল থেকে থেকে সিএনজি অটোরিকশায় চন্ডিপুল জনপ্রতি ভাড়া ছিলো বিশ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ত্রিশ টাকা।

তিনি বলেন, করোনার সময় স্বাস্থ্যবিধির বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ভাড়া বৃদ্ধি করা হলেও তিনজনের বেশি বহনে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছিলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু এখন তারা তিনজনের স্থলে পাঁচজন যাত্রী বহন করেও করোনার সময়ের ভাড়া নিচ্ছে।

বর্তমানে অটোরিকশায় ভাড়া নৈরাজ্য চলছে সবখানে। তবে যত দিন যাচ্ছে ভয়াবহ হয়ে উঠছে সেই চিত্র। অটোরিকশার এমন নৈরাজ্য প্রতিরোধে ট্রাফিক বিভাগের তৎপরতাও তেমন একটা চোখে পড়ে না বলে যাত্রীদের অভিযোগ। তবে ট্রাফিক পুলিশ বলছে-এ নৈরাজ্য বন্ধে তাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।

খাদিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা মদনমোহন কলেজের শিক্ষার্থী শামীম আহমদ বলেন, কয়েকমাস আগেও খাদিমপাড়া থেকে বন্দরবাজার ভাড়া ছিলো বিশটাকা। এখন সিএনজি অটোরিকশা নিচ্ছে ত্রিশটাকা। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলছে। এখন আমরা তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছি। কিন্তু প্রশাসন তো অসহায় নয়। তবে কেন এর সুরাহা হচ্ছে না।

জানা গেছে, বর্তমানে কোর্টপয়েন্ট থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত একটি সিএনজি অটোরিকশা পাঁচজন যাত্রী বহন করছে। প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া বাবদ নেয়া হচ্ছে ত্রিশটাকা করে। অথচ কয়েকমাস আগে একই গন্তব্যের ভাড়া ছিলো বিশটাকা। এ ক্ষেত্রে অবশ্য কিছু কিছু চালক চারজনও বহন করছেন। পাঁচজন নিয়েও কেন বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে কোর্টপয়েন্টে সিএনজি অটোরিকশা সমিতি কোর্টপয়েন্ট মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের অতিরিক্ত লাইনম্যান শফিক উদ্দিন নামে একজনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, পূর্বে এই সড়কের ভাড়া ছিলো বিশটাকা। কিন্তু করোনার সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাত্রী পাঁচজনের স্থলে তিনজনে নিয়ে আসায় ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়।

তবে এখন করোনার ভয়াবহতা না থাকায় আপনারা তো আবার পূর্বের মতো পাঁচজন, কেউ চারজন যাত্রী নিচ্ছেন কিন্তু ভাড়া কেন কমছে না-এমন প্রশ্নের জবাবে শফিক উদ্দিন জানান, কেউ তিনজনের বেশি যাত্রী নিলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। আমরাও দেখি অনেককে চার থেকে পাঁচজন পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে যেতে। তবে কোনো যাত্রী অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম, কিন্তু কেউ অভিযোগ করে না।

নিয়ম ভঙ্গ করে ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ নগরীর ভেতরের সবকটি স্ট্যান্ডের। কেউ প্রতিবাদ করলে বাক-বিতন্ডা এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। তবে ভাড়া বেশি নেয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং নিম্নআয়ের মানুষ।

সুজনের সিলেট চ্যাপ্টারের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘করোনা এবং বর্তমান বাস্তবতায় ভাড়াবৃদ্ধি হতে পারে, সেটি দোষের নয়, কিন্তু তারা প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে। তিনজনের জায়গায় পাঁচজন নিয়ে ভাড়াও নিচ্ছে বেশি। এটা কোন যুক্তিতে হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।’

সিএনজি অটোরিকশা কোর্টপয়েন্ট মুক্তিযোদ্ধা উপপরিষদের অন্তর্ভূক্ত বন্দরবাজার সিটি কর্পোরেশন গেইট থেকে ওসমানী মেডিক্যাল, বন্দরবাজার কোর্টপয়েন্ট থেকে আম্বরখানা, পাঠানটুলা, মদিনামার্কেট, টুকেরবাজার পর্যন্ত এবং বন্দরবাজার মধুবন সুপার মার্কেট সম্মুখ থেকে শিবগঞ্জ, টিলাগড়, মেজরটিলা, খাদিমপাড়া, খাদিমনগরসহ বিভিন্ন সড়ক রয়েছে। সেই উপপরিষেদের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ।

চালকদের এই অবস্থাপনা এবং নৈরাজ্যের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। এদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা দিচ্ছে পুলিশ। তিনি বলেন, পুলিশ কিংবা আমাদের লোক যখন থাকে না তখন চালকরা বিআইনি কাজটা করছে। তবে আমার কাছে অভিযোগ করলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছি। বেশ কয়েকজন চালককে আমি বরখাস্ত পর্যন্ত করেছি।’

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মাহফুজ এর সাথে এ প্রসঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ‘বিষয়টি আমরাও লক্ষ করছি। তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন কিংবা প্রশাসনের মনিটরিং থাকলে এমনটি হতো না।’

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট প্রকাশ দেবনাথ গণমাধ্যমকে জানান, অভিযোগ আমাদের কাছেও রয়েছে। কিছুদিন হলো আমরা পাঁচজন যাত্রী নেয়ার বিরুদ্ধে মামলা শুরু করেছি। ৯২ এর ১ ধারার মামলাও হচ্ছে। প্রতি মামলায় একজন চালককে তিনহাজার টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। তবু তারা শৃঙ্খলায় ফিরে আসছে না। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

সিটি কর্পোরেশনের ভেতর রিকশা চালকদের ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।

তবে সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া নির্ধারণ কিংবা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের নয় উল্লেখ করে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, ভাড়া নিয়ে নগরবাসীকে তারা কোনোভাবেই হয়রানি করার সাহস করতে পারবে না। সেটি আমি দেখবো।’

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর