জবিতে টেকসই উন্নয়নে জীবপ্রযুক্তির ব্যাবহার শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

আপডেট: October 17, 2022 |

মো.আরিফ হোসাইন, জবি প্রতিনিধি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো “ন্যাশনাল সেমিনার অন বায়োটেকনোলজি ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস-২০২২” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (১৬ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে সকাল ৯ টা থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপী আয়োজিত এই সেমিনারের মূল লক্ষ্য ছিল টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার ও সম্ভাবনাকে তুলে ধরা এবং তরুণ শিক্ষার্থীদের এক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করা।

দিন ব্যাপী এই আয়োজনে দেশের ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয় ও দুটি গবেষণা সংস্থা থেকে প্রায় ৩০০ জন গবেষক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.ইমদাদুল হকের সভাপতিত্বে এবং সেমিনার আয়োজক কমিটির সেক্রেটারি মো.মেহেদী হাসান সোহাগের পরিচালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর ড.মোহাম্মদ আবু তাহের। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. মেহেদী হাসান খান, এবং সেমিনারের কিনোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত, ইউজিসির অধ্যাপক ড. হাসিনা খান।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এবং গবেষণার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। আমরা চেষ্টা করছি ক্রমান্বয়ে দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালযইয়ে উন্নত গবেষণাগার স্থাপন করতে। ‘

তিনি আরো বলেন , ‘উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে।’ বর্তমান বিশ্ব বর্তমান বিশ্বকে প্রতিযোগিতার বিশ্ব বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে টিকে থাকতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই তার কাজ দক্ষতার সাথে করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য ড. ইমদাদুল হক ইউজিসি দৃষ্টি আকর্ষণ করে গবেষণা খাতে বিশ্ব বিদ্যালয়ের আর্থিক সংকটের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের উন্নত এবং দক্ষ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে গবেষণার কোন বিকল্প নেই।’

তিনি আরো বলেন ,’নানান সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে নানান প্রতিযোগিতায় সম্মানজনক স্থান অর্জন করে। এছাড়া তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে , গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত সরকারি অনুদান পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিশ্বজুড়ে দেশকে উপস্থাপন করবে এবং দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে।

সেমিনারের প্রধান আকর্ষণ ‘কি-নোট সেশন’এ বক্তব্য রাখেন ইউজিসি প্রফেসর ড. হাসিনা খান। তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং এবং টেকসই উন্নয়নে পাট কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেন।

পরবর্তীতে টেকনিক্যাল সেশনে বক্তব্য রাখেন আই.সি.ডি.ডি.আর.বি র বিশিষ্ট গবেষক এবং ভাইরোলজি ল্যাব এন্ড জিনোমিক সেন্টারের প্রধান মুস্তাফিজুর রহমান এবং পিএইচডি এবং ইউজিসি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ।ড. রহমান বলেন, ‘জিন ও জিনোমিক্স আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জিনোমিক্স ডেটাগুলো জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণায় অর্থবহ ভূমিকা পালন করে’। ড. আজাদ তাঁর বক্তব্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জৈব সম্পদ প্রযুক্তির সুযোগ এবং সম্ভাবনার উপর আলোকপাত করেন।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় টেকনিক্যাল সেশনে উপস্থিত ছিলেন, যথাক্রমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর বায়োটেকনোলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. কাজী দিদারুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান।

ড. শাহেদুর রহমানের মতে,’জীব প্রযুক্তি দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরানোর পাশাপাশি এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও বদ্ধপরিকর’। এছাড়া ড.ইসলাম সাই্ট্রাস উদ্ভিদ নিয়ে অত্যন্ত চমৎকার বক্তব্য উপস্থাপন করেন, তিনি বলেন,সাইট্রাস উদ্ভিদের মিথস্ক্রিয়া থেকে উৎপন্ন ডায়েটারি বায়োঅ্যাাক্টিভ পেপটাইডস মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখবে। অধ্যাপক ড. মান্নান বলেন, বায়োটেকনলজির একটি সম্ভাবনাময় সেক্টর হল ব্লু ইকোনমি। এটি বাংলাদেশের নতুন শিল্পক্ষেত্রের দ্বার উন্মোচন করবে’।

এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন, এবং অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে কুইজ, পোস্টার ও রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সনদপত্র ও প্রাইজমানি বিতরণ করা হয়।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর