সিংগাইরে মাটি খেকোরা বেপরোয়া, ধ্বংস হচ্ছে ফসলি জমি

আপডেট: January 10, 2023 |
print news

সোহরাব হোসেন, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ): ফসলি এলাকা খ্যাত মানিকগঞ্জের সিংগাইরে মাটিখেকোদের নগ্ন থাবায় উর্বর ফসলি জমি। জমির মালিকেরা লোভের ফাঁদে পড়ে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করছেন ব্যবসায়িদের কাছে। আর এ মাটি যাচ্ছে ইটভাটা,বসতবাড়ি, পুকুর ও ডোবা নালায়। ফলে জমিগুলো একের পর এক বদ্ধ জলাশয়ে পরিনত হচ্ছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ জানিয়েও স্থায়ী প্রতিকার পাচ্ছেন না।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাঠ থেকে আমন ধান ওঠার পর পরই ফসলি জমির মাটি বিক্রি শুরু হয়। আর এ মাটি মিনি ড্রাম ট্রাক ও ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হয় ইটভাটায়। সেই সাথে ভরার্ট করা হয় বসতবাড়ি, পুকুর ও ডোবা-নালায়। চারিগ্রাম, চান্দহর ও বলধারা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এখন ফসলি জমির মাটি কাটার যেন ধুম পড়েছে। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ এবং আবাসিক এলাকা থেকেও প্রতিদিন স্কেভেটর দিয়ে এ মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে অনত্র্য। প্রতিদিন একাধিক স্থানে এরকম চিত্র এলাকাবাসীর চোখে পড়লেও প্রশাসন যেন অন্ধ। স্থানীয় প্রশাসন এসব মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে নিচ্ছেন না কোনো ব্যবস্থা। ফলে বেপরোয়া ভাবে চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ ।

এদিকে, মাটিখেকোরা কৃষি জমির মালিকদের আর্থিক সুবিধার টোপ দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছে। দিনরাত ড্রামট্রাক ও ট্রলি দিয়ে মাটি বহনের কারণে গ্রামীণ কাচাঁ-পাকা সড়কগুলো ধসে, দেবে ও ভেঙ্গে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকায় নির্মিত রাস্তা, ব্রীজ ও কালভার্ট। স্থায়ী ক্ষতির কথা না ভেবে জমির মালিকরাও লোভে পড়ে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এভাবে মাটি কাটার ফলে গত কয়েক বছরে শতশত বিঘা জমি অনাবাদি হয়ে বদ্ধ জলাশয়ে পরিনত হয়েছে। পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরুপ প্রভাব। এতে লাভবান হচ্ছে মাটি ব্যবসায়ি চক্র ।

সোমবার (৯ জানুয়ারি ) দুপুরে চারিগ্রাম চকে গিয়ে দেখা যায়, মেসার্স ফ্রেন্ডস এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে প্রকাশ্য দিবালোকে মজিবর রহমান ও আক্তার হোসেনের ৬০ শতাংশ জায়গা হতে কাটা হচ্ছে মাটি । ওই প্রতিষ্ঠানটির ই¯্রাফিল, খোরশেদ, পাপুল, রিয়াজুল, নান্টু ও ফিরোজের ৪-৫ টি মিনি ড্রাম ট্রাক ও ট্রলিযোগে মাটি নেয়া হচ্ছে চারিগ্রাম কবরস্থান সংলগ্ন জনৈক মনির পোদ্দারের জায়গা ভরাটের জন্য। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেয়ার ফলে পাশের জমিগুলো ভেঙ্গে পড়ছে। এ চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে মাটির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দিনের পাশাপাশি রাতের আঁধারেও মাটি কাটা হচ্ছে। এতে কমছে ফসলি জমি, হুমকির মুখে পরিবেশ এবং নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট। ফসলি জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রæত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন সিংগাইর উপজেলাবাসী। চারিগ্রামের মাটি ব্যবসায়ি অভিযুক্ত ই¯্রাফিল ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার কথা স্বীকার করেন। অনুমতি আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চারিগ্রাম অফিসে আসেন সাক্ষাতে কথা বলবো। চারিগ্রাম ইউনিয়ন (ভূমি) সহকারী কর্মকর্তা মো. খায়রুল বাশার বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত নই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ টিপু সুলতান সপন বলেন, কৃষি জমির উপরি ভাগের মাটি কাটলে জমি তার উর্বরতা শক্তি হারায়। গভীর করে কাটায় স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া ফসলি জমি হ্রাস পেয়ে খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটছে। কৃষি জমি রক্ষায় আমাদের সকলকে এগিয়ে আসা উচিত।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিপন দেবনাথ বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধে নায়েবকে পাঠিয়ে এখনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর