কঙ্কালের সূত্র ধরে ৬ বছর আগের হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন

আপডেট: January 18, 2023 |

সোম মল্লিক, যশোর প্রতিনিধি: মাটি খুঁড়ে মিলছিল ড্রামভর্তি কঙ্কাল। সেই কঙ্কালের সূত্র ধরে সাড়ে সাত মাস পর শনাক্ত হলো হত্যার শিকার যুবকের পরিচয়। তার নাম রাজীব হোসেন কাজী (৩২)। জানা গেলো, আরও ছয় বছর আগে খুন হন তিনি। মরদেহ ড্রামে ভরে ফেলে দেওয়া হয় পরিত্যক্ত টয়লেটের সেফটিক ট্যাংকে। ‘ক্রাইম পেট্রোলের’ মতো এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে যশোর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় মোহাম্মদ সালাম (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তার বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মঙ্গলহাটা গ্রামে।

তদন্ত কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) জিয়াউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, গত বছরের ৩০ মে যশোর পৌর শহরের পুরাতন কসবা নিরিবিলি পাড়ার বজলুর রহমান বাউন্ডারি ঘেরা জায়গায় ভবন নির্মাণের জন্য খননকাজ চলে। এ সময় পরিত্যক্ত সেফটিক ট্যাংক খুঁড়ে প্লাস্টিকের ড্রামে মানুষের হাড়গোড় ও মাথার খুলি পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে। ২০১৬ সালে পুরাতন কসবা থেকে নিখোঁজ রাজীব হোসেন কাজী নামে এক যুবকের সন্ধান পাওয়া যায়। খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার চন্দোলি মহল গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে রাজীব যশোরে তার চাচা হাসমতের বাসায় থেকে চাকরি করতেন।

শারমিন আরও জানান, ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ রাতে রাজিব তার বাবাকে ফোন করে তাদের খুলনার বাড়িতে আসছে বলে জানান। কিন্তু রাজীব খুলনায় তাদের বাড়িতে যাননি। বাবা ফারুক হোসেন রাজীবের মোবাইল ফোনে কল করে বন্ধ পান। এরপর তিনি ভাই হাসমতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হাসমত জানান, ২৯ মার্চ থেকে রাজীবকে তারাও পাচ্ছেন না। কয়েকদিন পর রাজিবের মা মাবিয়া বেগম রাজীবের খোঁজে যশোরে আসেন। কোনো সন্ধান না পেয়ে নিরুপায় হয়ে বাড়ি ফিরে যাই। রাজীবের পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ফকির কবিরাজের কাছে যান। কবিরাজ জানান, রাজীব বেঁচে আছেন। তিনি ফিরে আসবেন। অপেক্ষা করতে হবে। রাজীব ফিরে আসবে ভেবে স্বজনরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেন।

পিবিআইয়ের কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ৩০ মে রাতে ড্রামে মানুষের হাড়গোড় ও মাথার খুলি উদ্ধারের খবর পায় রাজীবের পরিবার। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে কঙ্কালগুলো রাজীবের বলে শনাক্ত হয়। এ ঘটনায় ফারুক হোসেন মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় মোহাম্মদ সালামকে গ্রেফতার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে সালাম স্বীকার করেন, কয়েকজন রাজীবের মরদেহ ড্রামে ভরে সালামের ব্যবহৃত রিকশায় পুরাতন কসবা নিরিবিলি পাড়া শেখ সজিবুর রহমানের অফিসের টয়লেটের সেফটিক ট্যাংকে ফেলেন।

পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, সালাম মঙ্গলবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালালের আদালতে জবানবন্দি দেন। মরদেহ বহনের কাজে ব্যবহৃত রিকশা জব্দ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকিদেরও গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর