কালীগঞ্জ ও বলুহর বাঁওড় ফিরে পেতে মৎস্যজীবীদের আমরণ অনশন

সময়: 8:51 pm - January 31, 2023 | | পঠিত হয়েছে: 2 বার

টিপু সুলতান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: বাঁওড়ের অধিকার ফিরে পেতে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন ঝিনাইদহ অঞ্চলের ৬টি বাঁওড়ের ৫ শতাধিক মৎস্যজীবী। আগামী ৩১ জানুয়ারি আন্তঃ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের দিনে তারা নিজ নিজ এলাকার উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই অনশন পালন করবে।

রোববার মানববন্ধন কর্মসূচি করে এই ঘোষণা দেন তারা।বেলা ১১টায় বলুহড় বাঁওড়ের পাড়ে এবং দুপুরে জয়দিয়া বাঁওড় পাড়ে শত শত মৎস্যজীবী মানববন্ধনে অংশ নেন। কোটচাঁদপুর বলুহর বাঁওড় এলাকার মৎস্যজীবীদের সুফলভোগী দলপতি গোপাল হালদারের নেতৃত্বে এবং জয়দিয়া বাঁওড়ের সুফলভোগী দলপতি নিত্য হালদারের নেতৃত্বে মানববন্ধন পালন করেন এলাকার
মৎস্যজীবীরা।

মানববন্ধনে তারা বলেন, ৪৩ বছর ধরে যে বাঁওড় ছিল তাদের আয়ের একমাত্র উৎস, সেই বাঁওড় এখন চলে যাচ্ছে প্রভাবশালী মহলদের হাতে। এ অবস্থায় ৬টি বাঁওড় পাড়ের হালদার সম্প্রদায়ের মৎস্যজীবীরা বাঁওড় রক্ষায় প্রতিদিন তারা বাঁওড় পাড়ে
প্রতিবাদ করছেন।

কোটচাঁদপুরের বলুহর জয়দিয়া ছাড়াও মহেশপুর উপজেলার ফতেপুর, কাটগড়া, কালীগঞ্জের মর্জাদ এবং ঝিনাইদহ জেলা সংলগ্ন
বেড়গোবিন্দপুর এলাকায় মৎস্যজীবী হালদার পরিবারগুলোর একইভাবে বাঁওড় পাড়ে সমবেত হয়ে তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে।

এ সময় বলুহড় বাঁওড় পাড়ে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, গোপাল হালদার, সুধীর হালদার,সন্তোস হালদার, ও জয়দিয়া বাঁওড় পাড়ে বক্তব্য রাখেন নিত্য হালদার, জগন্নাথ হালদার, সন্তোস হালদার, কার্তিক হালদার, প্রসাদ হালদার, অনন্ত হালদার রবিন হালদার সফিকুল ইসলাম, নন্দ হালদার, রাম হালদার রুপালী হালদার ও শীলা হালদার।

বক্তরা বলেন, তারা বাঁওড়ে রানী মাছ ধরে মোটামুটি ভাবে জীবনধারন করে আসছিলেন। তাদের পরিবারের অনেক সন্তান মাস্টার্স পাশ করছেন। ব্যাংক বীমাসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। কিন্তু তাদের আয়ের জায়গা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়বে। সেখানে আর তাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারবে না। আবারো হালদার সম্প্রদায় সেই আদি অবস্থায় ফিরে গিয়ে অশিক্ষিত সম্প্রদায়ে পরিণত হবে। আয়-রোজগার বন্ধ হলে তারা ধুঁকে ধুঁকে মরবে। যে কারণে তাদের শেষ কথা, হয় বাঁচার মতো বাঁচবেন, না হলে প্রতিবাদ করে, অনশন করে মরবেন।

৩১ জানুয়ারি হয় তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে, না হয় তাদের লাশ বাড়িতে পৌঁছাবে জানিয়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন মৎস্যজীবীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কর্ম হারানোর ক্ষণ গুনছেন বাঁওড়পাড়ের হাজারো মৎস্যজীবী। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাঠগড়া, ফতেপুর, কোটচাঁদপুরের বলুহর, জয়দিয়া, কালীগঞ্জের মর্জাদ এবং ঝিনাইদহ জেলা সংলগ্ন যশোরের চৌগাছার
বেড়গোবিন্দপুরে বাঁওড়ের মোট জলাকার হচ্ছে ১ হাজার ১৩৭ হেক্টর।

৬টি বাঁওড় এলাকার মধ্যে ঝিনাইদহের ৫টি বাঁওড়ে ৭৬৭ ও চৌগাছার বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়ের ২১০ পরিবারসহ ৯৭৭টি
পরিবারের ৫ সহ¯্রাধিক সদস্য এসব বাঁওড় থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। মৎস্যজীবীরা সরকারের “জাল যার জলা তার” এই নীতির ওপর ভর করে ভূমি ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এক চুক্তিতে ১৯৭৯ সাল থেকে বাঁওড়ে মাছ ধরে আসছিলেন। যার মেয়াদ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শেষ হচ্ছে। এ অবস্থায় আর চুক্তি নবায়ন না করে ভূমি মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে গত ডিসেম্বর মাস থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে বাঁওড়গুলো ইজারাদানের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে বিল বাঁওড় প্রকল্প পরিচালক মো. আলফাজ উদ্দীন শেখ জানান, ভূমি মন্ত্রণালয় এগুলো ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মৎস্য বিভাগ চেষ্টা করছে বর্তমান প্রকল্পের মেয়াদ নবায়নের মাধ্যমে সময় বৃদ্ধি করার। যাতে চলমান নিয়মে মাছের চাষ করা যায়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে ইজারা দেওয়া হলে হাজারো মৎস্যজীবী হালদার পরিবার পথে বসবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বাঁওড় ছাড়া মৎস্যজীবীদের বিকল্প কোনো আয়ের পথ নেই। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ-৩ আসনের (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শফিকুল আজম খান চঞ্চল জানান, ৩১ জানুয়ারি বিষয়টি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে সভা হবে। সেখানে বিষয়টি উঠবে।

তিনি বলেন, বাঁওড়গুলো ইজারা দিলে সরকার হয়তো এককালীন টাকা পাবে, কিন্তু মৎস্যজীবী হালদার পরিবারগুলো তো কাজ হারাবে, তারা তো বেকার হয়ে যাবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে মানবতা ভূলুণ্ঠিত হবে বলে তিনি মনে করেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে বাঁওড় রক্ষায় যা যা করার তাই তিনি করবেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর