তানোরে দুই মেয়রের পাশবিক নির্যাতনে প্রতিবন্ধী জখম

আপডেট: February 1, 2023 |

তানোর রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর তানোরের মুন্ডুমালা পৌরসভার আলোচিত সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানী ও বর্তমান মেয়র সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে শারীরিক প্রতিবন্ধীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, আস্থা প্রতিবন্ধী সংস্থার সভাপতি ও জাতীয় তৃনমুল প্রতিবন্ধী সংস্থার সাংস্কৃতিক বিষয় সম্পাদক শামসুল আলমের ওপর তারা পাশবিক নির্যাতন করেছেন। তাদের পাশবিক নির্যাতনে গুরুতর জখম প্রতিবন্ধী সামসুল আলম এখন তানোর উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

১ ফেব্রুয়ারী বুধবার দুপুরে পৌর সদরের মুন্ডুমালা বাজারে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে।এদিকে এখবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে, উঠেছে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়।

প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, এদিন দুপুরে মুন্ডুমালা বাজারে সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানী প্রথমে থাপ্পড় ও চেয়ারে লাথি মেরে সামসুলকে মাটিতে ফেলে,এ সময় বর্তমান মেয়র সাইদুর রহমান তাকে চুলের মুঠি ধরে উঠিয়ে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে তার সঙ্গে যোগদেন মেয়রের অনুগত বখাটেরা।

মুন্ডুমালা বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, সামসুল শারীরিক প্রতিবন্ধী ভালভাবে হাটতেও পারে না। দুই মেয়র কিভাবে তার ওপর এমন পাশবিক নির্যাতন করতে পারলেন।

অথচ তারা নাকি সেবক, জনতার খাদেম, এটাই কি তাদের প্রকৃত রুপ, যা মুন্ডুমালা বাজারের ব্যবসায়ীরা দেখলো। এমনকি তাকেই পিটিয়ে মেয়র সাইদুর পুলিশকে হুমক দিচ্ছে তাকে জেলে দেওয়ার জন্য। শামসুল যদি ফেসবুকে কারো পরিবার নিয়ে আপত্তিকর কিছু লিখে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারতেন।

কিন্ত্ত কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ওপর পাশবিক নির্যাতন মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এবিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসাধীন সামসুল আলম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তানোরের উন্নয়ন নামে ‘ফেক আইডি’ থেকে গোলাম রাব্বানীর স্ত্রীকে নিয়ে ভাতিজা উধাও এমন পোষ্ট দিয়েছে কে বা কারা।

তিনি বলেন, আমি মেয়র সাইদুর ও রাব্বানীকে বার বার বলছি, আমি লিখিনি বা পোষ্ট করিনি, যদি প্রমান হয় যে শাস্তি দিবেন মেনে নিব। কিন্তু কোন কথা না শোনে সাইদুরের হাতের আঙ্গুলে পাথরের আংটি ছিল, সেই হাত দিয়ে মুখের ডান সাইডে চোখের নিচে কিল মেরে ক্ষত করে দিয়েছে। অল্পের জন্য চোখে লাগেনি।

শুধু মেয়র সাইদুর না গোলাম রাব্বানীও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারে। বাজারে সিসি ক্যামেরা যেখানে যাবে না সেখানে টেনে হিছড়ে নিয়ে গিয়ে পাশবিক নির্যাতন করেছে। মুখের জখম দিয়ে রক্ত বের হতেই আছে।

আমার মোবাইল কেড়ে নিয়েছে তারা। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। থানার ওসি দেখতে এসেছিল মেডিকেলে। আমার কেউ নেয়, একটু রক্ত বের হওয়া বন্ধ হলে থানায় অভিযোগ করব।

শামসুলের স্ত্রী নুরনাহার বেগম, তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, যে মানুষটি ভালো করে হাটতে পারে না, কিভাবে অমানুষের মতো তাকে মারতে ও পাশবিক নির্যাতন করতে পারে।

মেয়র এখন টাকা ওয়ালা হয়েছে, এজন্য দাম্ভিকতা। আল্লাহ তাদের বিচার করবেন। এবিষয়ে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, আপাতত ক্ষত জায়গায় ব্যান্ডিজ করা হয়েছে, রক্ত বন্ধ না হলে উন্নত চিকিৎসা নিতে হবে এবং পরিক্ষা নিরিক্ষার পর শরীরের কোথায় কি অবস্থা বলা যাবে।

এবিষয়ে মুন্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমান জানান, শামসুল ফেসবুকে বাজে কথা লিখে পোষ্ট করেন। একারনে বুধবার মুন্ডুমালা বাজারে তার উপর হামলা করে আমাদের লোকজন। খবর পেয়ে ছুটে আসি। আমি না আসলে তাকে মেরে ফেলত।

আপনি তার মুখে আংটি পরা হাত দিয়ে কিল মেরে ক্ষত করে দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন আমি মারলে তার বেচে থাকার কথা না। তবে ঠেলাঠেলি করতে গিয়ে লাগতে পারে। ফেসবুকে বাজে কিছু লিখলে আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে একজন প্রতিবন্ধী কিভাবে মারেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, সে দীর্ঘ দিন ধরে আমার ও রাব্বানী ভাইয়ের বিরুদ্ধে লিখে এজন্য উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

এবিষয়ে সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানী জানান, মুন্ডুমালা বাজারের ডাক্তার হাসানের মায়ের জানাযা শেষে বাজারে যাওয়ার সময় হট্রগোল দেখে কাছে যায়। গিয়ে দেখি শামসুলকে মারছে। আমি উত্তেজিত লোকজনকে থামায়। আমি কেন মারব। আপনিও নাকি কিল ঘুষি মেরেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, মিথ্যা বলব না, আমি একটি চড় মেরেছি। কি কারনে হামলা জানতে চাইলে তিনি জানান, ফেসবুকে পরিবারকে নিয়ে টানা হেছড়া করেছে এজন্য অনেকে মানতে পারেনি।

শামসুল ফেসবুকে পোষ্ট করেনি তাকে কেন মারলেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, আমি গাড়িতে উঠছি পরে কথা বলছি। এবিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় তৃনমূল প্রতিবন্ধী সংস্থার প্রচার সম্পাদক রাসেল জানান, ঘটনা শোনার পর ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানানো হয়েছে।

জনপ্রতিনিধি হয়ে প্রতিবন্ধীকে মেরে রক্তাক্ত ও পাশবিক নির্যাতন করতে পারে এই প্রথম জানলাম, তাকে মারতে তাদের হাত কাপল না। এর প্রতিবাদে, বিচারের দাবিতে কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

এবিষয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি কামরুজ্জামান মিয়া জানান, সংবাদ পেয়ে আহত প্রতিবন্ধী নেতা শামসুলকে মেডিকেলে দেখে এসেছি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৈশাখী নিউজ/ বিসি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর