নাটোরে আ’লীগ- বিএনপির পাল্টা কর্মসূচিতে উত্তেজনা

ইমাম হাছাইন পিন্টু নাটোর প্রতিনিধি: নাটোর বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ও ইফতার মাহফিলের মঞ্চ ভাংচুরের অভিযোগ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে শহরের উপশহর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

নাটোর সদর থানার ওসি নাছিম আহমেদ জানান, ঘটনার খবর পাওয়ার পর পরই ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কে বা কারা এটি করেছে তা তারা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে নাটোর জেলা বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ও ইফতার মাহফিল স্থলে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে পৌর আওয়ামী লীগ।

শহরের উপশহর মাঠে জেলা বিএনপির পূর্ব ঘোষিত ইফতার মাহফিল স্থলে বিএনপির নৈরাজ্য প্রতিরোধে শান্তি সমাবেশ ডেকেছে পৌর আওয়ামী লীগ।

শনিবার দুপুর ২টা থেকে উপশহর মাঠে শান্তি সমাবেশ করার কথা পৌর আওয়ামী লীগের।একই সময় মাঠের অদূরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ১০ দফা দাবী আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

গত বৃহস্পতিবার রাতে নাটোর শহরে মাইকিংয়ের মাধ্যমে পাল্টা কর্মসূচি প্রচার করছে পৌর আওয়ামী লীগ।

পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল জানান,তারা উপশহর মাঠে শান্তি সমাবেশ করার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন।

বৃহস্পতিবার থেকে তারা এব্যাপারে শহরে প্রচার মাইকে মাইকং করছেন। এছাড়া সমাবেশ সফল করার জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মি সভা করা হচ্ছে।

অপরদিকে মঞ্চ ভাংচুরের এঘটনার প্রতিবাদ জানাতে শুক্রবার সকাল ১১ টায় শহরের আলাইপুরস্থ দলীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করে বিএনপি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয় বিএনপি’র ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় কর্মসুচি অনুযায়ী শহরের আলাইপুরস্থ উপশহর মাঠে তাদের অবস্থান কর্মসুচি ও ইফতার মাহফিলের জন্য প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মঞ্চ নির্মান করা হচ্ছিল।

বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে সরকারী দলের কর্মীরা ১৫/২০ টি মোটর সাইকেলে করে এসে তাদের নির্মীয়মান মঞ্চটি ভেঙ্গে অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়।

তারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবী জানান। একই সাথে তারা আগামী ১লা এপ্রিল তাদের নির্ধারিত স্থানে এবং সময়ে তাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসুচি অনুষ্ঠিত করবেন বলে ঘোষণা দেন। পরে নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক কাজী শাহ আলম, সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন,আফতাব উদ্দিন,জিল্লুর রহমান বাবুল চৌধুরী ,এ হাই তালুকদার ডালিম,আবুল হোসেন , আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে শনিবারের কর্মসূচির জন্য আগে থেকেই পুলিশ প্রশাসন থেকে অনুমতি নেয়া হয়েছে। ইফতার মাহফিল সম্পন্নের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এখন হঠাৎ করে একই স্থানে পাল্টা সমাবেশ ডেকেছে আওয়ামী লীগ। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আবার আমাদের কর্মসূচি পালনে কোন মিলনায়তন ভাড়া দেয়া হয় না। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।

তাই পূর্ব নির্ধারিত স্থানেই আমরা যথাসময়ে কর্মসূচি পালন করব।

এদিকে একই মাঠে বিএনপি -আওয়ামীলীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসুচী ঘোষনায় উত্তেজনাসহ আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকদিন পর শহরের একই স্থানে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী ও পালনের ঘোষণায় উত্তেজনা বিরাজ করছে দুই দলের নেতাকর্মীদের মাঝে। পুরো শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু অভিযোগ করে বলেন, ১ এপ্রিল বিএনপি’র কেন্দ্রিয় অবস্থান কর্মসূচি ও স্থানীয়ভাবে আয়োজিত ইফতার মাহফিল উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে শহরের উপশহর মাঠে প্যান্ডেলসহ মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার রাতে ১৫/২০টি মোটর সাইকেল করে এসে মঞ্চ ভাংচুর করে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।

শুক্রবার দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একই স্থানে ও একই সময়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মাইকিং করে শান্তি সমাবেশের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেক্ষেত্রে বিএনপি বা তারা কি করবেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছেন।

তবে তাদের এ কর্মসুচি পালন গণতান্ত্রিক অধিকার এবং পূর্ব ঘোষিত কর্মসুচি তারা পালন করবেন।

জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের কর্মসূচিও পূর্ব ঘোষিত। শুধু মাইকিং করা হয়েছে দুই দিন আগে।

আওয়ামী লীগের কেউ মঞ্চ ভাংচুর করেনি। আমাদের ধারণা বিএনপির তাদের অনুষ্ঠানে লোকজন জমায়েত করতে ব্যর্থ হবে এই আশঙ্কা থেকেই নিজেরাই মঞ্চ ভাঙচুর করেছে এবং এর দায় আওয়ামী লীগের উপর চাপাচ্ছে। শনিবার যথা সময়ে সমাবেশ শুরু হবে৷

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, দুই পক্ষের একই স্থানে সভা আহ্বানের বিষয়টি জেনেছি। পরিস্থিতি দেখে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, দু পক্ষের একই স্থানে কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যা কিছু করণীয় সবই করা হবে।