অনন্য কীর্তির ১৫০ বছর: রাজশাহী কলেজ

আপডেট: April 1, 2023 |
Boishakhinews24.net 1
print news

ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী প্রতিনিধি: কীর্তির ১৫০ বছরঃ ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ০১ এপ্রিল রাজশাহী কলেজের প্রদীপ্ত যাত্রা শুরু। মহাকালের চিরন্তন স্রোতে অনেকটাই বন্ধুর পথ পেরিয়ে রাজশাহী কলেজ আজ ০১ এপ্রিল ২০২৩ খ্রিঃ জন্মের ১৫০ বছর অতিক্রান্ত করছে।

অথচ বয়সের ভারে ক্লান্তি নেই একরত্তি। দেড়শত বছরের জয়যাত্রায় সুবিপুলা -স্বর্ণশিলা – রতœপ্রভা রাজশাহী কলেজ তার গায়ে জড়িয়েছে অনেক কীর্তি ও শ্রেষ্ঠত্বের উত্তরীয়। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে রাজশাহী কলেজ রাজকীয় মেজাজে আজও দ-ায়মান। অধিক সজীব। প্রাণবন্ত। সার্ধশতবর্ষ পূর্তিতে দুর্দমনীয় প্রোজ্জ্বলিত- রতœখনি রাজশাহী কলেজের জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা।

বিনয়াবনত শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি কলেজটি প্রতিষ্ঠায় যাঁরা মূলভিত্তি রচনায় ঐতিহাসিক ভূমিকা ও চিরস্মরণীয় অবদান রেখেছেন তাঁদের। তাঁরা আমাদের আমাদের প্রভা, পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের মহানায়ক। তাঁরা মহাপ্রাণ- মহাপুরুষ- জনহিতৈষী।

আজ তাঁরা লোকান্তরিত অথচ তাঁদের সুবিশাল ত্যাগ – কীর্তি আজও অক্ষয়- অমর ও অবিনাশী। তাঁরা আমাদের নিকট চির নমস্য। ১৮২৮ খ্রিঃ রাজশাহী শহরে বেসরকারী প্রচেষ্ঠায় স্হাপিত বাউলিয়া ইংলিশ স্কুলটি সরকার ১৮৩৬ খ্রিঃ ২০ জুন ‘রাজশাহী জেলা স্কুল’ -নামকরণ করেন।

তদানিন্তন রাজশাহী জেলার দুবলহাটির দানবীর ও শিক্ষানুরাগী রাজা বাহাদুর হরনাথ রায় চৌধুরীর অসামান্য অর্থানুকূল্যে পূর্ব বাংলার উত্তর – দক্ষিণ জনপদে উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয়।

পাশ্চাত্য শিক্ষার ধারার প্রবর্তনে ও বিকাশে তাঁর অতুল্য দানের ফলশ্রুতিতে রাজশাহী জেলা স্কুলে মাত্র ০৬ জন ছাত্র নিয়ে ফার্স্ট আর্টস ( এফ. এ) ক্লাস চালুর অনুমতি পাবার মাধ্যমে রাজশাহী কলেজের ঐতিহাসিক বুনন যাত্রা শুরু। বলা চলে এ অঞ্চলে শিক্ষার নবজাগরণ।

সমাজের প্রাগ্রসর -অনাগ্রসর উভয় শ্রেণির সন্তানদের আশাস্পদ হল রাজশাহী কলেজ। বলা বাহুল্য, স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সার্বিক সূচকে কলেজটি প্রসিদ্ধি অর্জন করায় ১৮৭৮ সালে রাজশাহী কলেজ প্রথম শ্রেণির মর্যাদা লাভ করে। কলেজটিতে ১৮৭৮, ১৮৮১ ও ১৮৮৫ সালে যথাক্রমে বিএ, এমএ ও আইন এবং অনার্স কোর্স চালু হয়। শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্প – সংস্কৃতি বিবিধ ধারায় রাজশাহী কলেজকে অনন্য ও অপ্রতিরোধ্য যাত্রার যশোরাশি করে কীর্তিমান বহু অধ্যক্ষ ও অসাধারণ পা-িত্যসম্পন্ন অসংখ্যক শিক্ষক।

আর এ কারণেই পূর্ব বাংলায় একমাত্র রাজশাহী কলেজ কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের সমমর্যাদা লাভ করে। বিনম্র চিত্তে সকল যশস্বী অধ্যক্ষ ও খ্যাতিমান শিক্ষাগুরুর প্রতি নিবেদন করছি অঢেল শ্রদ্ধা।

উল্লোখ্য, ১৮৭৪ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত জুনিয়র মাদ্রাসা ( বর্তমানে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়), ১৯০৪ খ্রিঃ স্থাপিত হেমন্তকুমারী সংস্কৃত কলেজ ও ১৯৩৬ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত বসন্ত কুমার এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট রাজশাহী কলেজের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ছিল এবং রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষের দ্বারা পরিচালিত হতো।

অসামান্য অবদান ও ভূমিকাঃ রাজা বাহাদুর হরনাথ রায় চৌধুরী, রাজা বাহাদুর প্রমথনাথ রায়, হযরত শাহ মখদুম রূপোশ ( রহঃ) ওয়াকফ এস্টেট, রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন, হাজী লাল মোহাম্মদ সরদার, রাজা বসন্ত কুমার রায়, মহারাণী শরৎ সুন্দরী দেবী, মহারাণী হেমন্ত কুমারী দেবী, রাণী মনোমোহিনী দেবী, হাজী মুহম্মদ মহসীন শিক্ষা ফা-, কুমার শরবিন্দু রায়, খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ, স্যার জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলার, রাজা রাজকুমার সরকার ( স্যার যদুনাথ সরকারের বাবা), শরৎ কুমার রায় বাহাদুর, রমাপ্রসাদ চন্দ্র, খান বাহাদুর এমাদ উদ্দীন আহমেদ, রাজা প্রমদনাথ রায়, রাজা কৃষ্ণেন্দ্র রায়, মীর্জা মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, খান বাহাদুর আব্দুর রশিদ খান চৌধুরী, খান বাহাদুর এরশাদ আলী খান চৌধুরী, মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ খান মিয়া,ব্যারিস্টার আশরাফ আলী খান চৌধুরী, ইতিহাসবিদ অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, জননেতা মাদার বখ্শ জাতীয় চার নেতার অন্যতম নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামান, চন্দ্র শেখর রায়, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াজির আলী, অধ্যাপক মওলানা হায়দার আলী, ডাঃ সৈয়দ মোহাম্মদ শফি, শেখ উমেদ আলী, শশী শেখরেশ্বর রায়, আবুল ফজল শামসুল ইসলাম, শেফাতুল্লা, আব্দুল খালেক খান চৌধুরী, জমিদার মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম খান চৌধুরী, আইনজীবী আজিজুল হক, মৌলভী কফিলউদ্দীন আহম্মদ, লেখক ও সাংবাদিক আব্দুস সামাদ প্রমুখ। এছাড়া রাজশাহীর তৎকালীন টমটম চালকগণ যাঁরা গরিব শিক্ষার্থীদের জায়গিরদার ছিলেন।

ঐতিহ্যপূর্ণ রাজশাহী কলেজের কিংবদন্তিতুল্য এমন অনেক শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানটিকে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন এবং যাঁরা ব্রিটিশ ভারত, পূর্ব পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশে জননন্দিত স্বনামে । তাঁদের অন্যতম হলেন, খান বাহাদুর চয়েন উদ্দীন আহমদ, শ্রী রাধিকা মোহন মৈত্র, খান বাহাদুর এন, এন, লাহিড়ী, প্রখ্যাত গবেষক ও ঔপন্যাসিক প্রমথনাথ বিশী, স্যার যদুনাথ সরকার, প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, পঞ্চকবির অন্যতম রজনীকান্ত সেন, ঋত্বিক ঘটক, খান বাহাদুর এমাদ উদ্দীন আহমদ, কাজী মোতাহার হোসেন, মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন, অধ্যাপক ড. কাজী আব্দুল মান্নান, খান বাহাদুর সৈয়দ আবুল মজিদ, শহিদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান, অধ্যাপক ড. ময্হারুল ইসলাম, বিচারপতি রাধা বিনোদ পাল, অধ্যাপক নবনী প্রসাদ চন্দ্র, সাদত আলী আকন্দ, জননেতা মাদার বখ্শ, সুদর্শন চক্রবর্তী, মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ, সাহিত্যিক অধ্যাপক আব্দুল হক,স্থপতি মাজহারুল ইসলাম, অধ্যাপক এম, আর সরকার, অধ্যাপক এম, এ, রকিব, অধ্যাপক শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, অধ্যাপক আব্দুল করিম ম-ল, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক ড. এবনে গোলাম সামাদ, পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়া, মীর্জা গোলাম হাফিজ, বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান শেলী, বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন, অধ্যাপক ড. এম শমশের আলী, অধ্যাপক এম. এন. হুদা, কাজী জাফর আহমেদ, অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান, ভাষা সৈনিক ও নাট্যকার অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ, নাট্যকার নাজমা জেসমিন চৌধুরী, ডাঃ গোলাম মাওলা, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, অধ্যাপক মুহম্মদ একরামুল হক, এয়ার ভাইস মার্শাল আবু তাওয়াব, সাবেক আইজিপি তৈয়ব উদ্দীন আহমেদ, এ,কে, খন্দকার, মুহম্মদ সুলতান, জনাব এমরান আলী সরকার, রাজনীতিবিদ মোঃ আনোয়ার জাহিদ, অধ্যাপক মুখলেসুর রহমান, ভাষা সৈনিক অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, প্রফেসর অরুণ কুমার বসাক, আব্দুল মতিন পাটোয়ারী, প্রফেসর খন্দকার সিরাজুল হক, প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক, প্রফেসর সনৎকুমার সাহা, প্রফেসর মোঃ যোবদুল হক, সাংবাদিক আব্দুস সামাদ, শামসুল হক কোরায়েশী, অধ্যাপক ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকার, শ্রী কালিনাথ চৌধুরী,এয়ার ভাইস মার্শাল এম. কে. বাসার, সুরেন্দ্র নাথ চট্টোপাধ্যায়, রমেশ চন্দ্র সেন, নগেন্দ্রনাথ, জননেতা আতাউর রহমান, বিমল চন্দ্র গুহ সহ অনেক কৃতী শিক্ষার্থী।

অধ্যক্ষ হিসেবে যাঁরা বরেণ্য মেধায়- জ্ঞানে, প্রজ্ঞায় ও কর্মে তাঁরা হলেন, রাজশাহী জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাবু হরগোবিন্দ্র সেন, মি. এফ. টি ডাউডিং, মি. এ. সি এডওয়ার্ড, মি. ডাব্লিউ. বি. লিভিংস্টোন, রায় কুমুদিনী কান্ত ব্যানার্জী বাহাদুর, যিনি রাজশাহী কলেজের রেনাসাঁর স্রষ্টা, মি. টি, টি, উইলিয়ামস যিনি রায় কুমুদিনী কান্ত ব্যানার্জীর পর রাজশাহী কলেজকে ভালোবেসেছিলেন মনে – প্রাণে। মি. ভূপতি মোহন সেন, ড. ডাব্লিউ. এ. জেংকিন্স, ড. প্রভূদত্ত শাস্ত্রী ( পি, ডি, শাস্ত্রী), মি. জি, এম বোস, ড. এস, কে, ব্যানার্জী, ড. স্নেহময় দত্ত সহ ১৯ জন অধ্যক্ষ দেশ ভাগের পূর্বে দায়িত্ব পালন করেছেন।

দেশ ভাগের পর প্রথম অধ্যক্ষ দেশ বরেণ্য প-িত ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, যিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ভাইস চ্যান্সেলর হন। এরপর ১৯৫০ খ্রিঃ অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন ইংরেজি সাহিত্যের সুপ-িত ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ড. ইতরাত হোসেন জুবেরী। ড. জুবেরী স্যারের পর ১৯৫১ সালে তিনজন অধ্যক্ষ স্বল্পতম সময়ের জন্য যোগদান করেন।

১৯৫২সালে যোগদান করেন মি. সলমন চৌধুরী। এসময় ভাষা আন্দোলনে ঢাকার রাজপথে সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় রাজশাহী শহরে রাজশাহী কলেজকেন্দ্রিক তীব্র সংগ্রাম শুরু হয়। গঠিত হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।

বায়ান্ন’র ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথ তাজা রক্তে সিক্ত ও রঞ্জিত হলে ঔ দিন দিবাগত রাতে রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসে উ –ব্লকের পূর্ব পাশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ইট, বালি ও কাদা- মাটি দিয়ে শহিদদের স্মরণে একটি স্মৃতি স্তম্ভ / শহিদ মিনার তৈরি করেন। রাজশাহী’র ভাষা সংগ্রামী ও ভাষা শহিদ এবং সর্বস্তরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, এই শহিদ মিনারটিকে বাংলাদেশের প্রথম শহিদ মিনার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য।

১৯৫৪ খ্রিঃ প্রফেসর মোঃ শামস – উল- হক ( সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী) অধ্যক্ষ হয়ে আসেন। তাঁর সময়ে কলাভবন এবং লাইব্রেরি ভবনটি নির্মিত হয়। ১৯৫৬ সালে প্রফেসর ড. আব্দুল হক এবং ১৯৫৯ সালে অত্যন্ত চৌকস কর্মকর্তা প্রফেসর শামসুজ্জামান চৌধুরী যোগদান করেন।

পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং চাকুরি অবস্থায় সপরিবারে অ্যামেরিকায় চলে যান। ১৯৬১-৬৯ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় প্রফেসর এম. এ, হাই অধ্যক্ষ হিসেবে ছিলেন। কলেজের প্রভূত উন্নতিতে তাঁর শ্রম – মেধা ও বাগ্মীতা আজও সংবিদিত। প্রফেসর হাই স্যারের পর রাজশাহী কলেজের ছাত্র ও ইংরেজি সাহিত্যে যশস্বী শিক্ষক প্রফেসর ইলিয়াস আহমেদ অধ্যক্ষ হন। প্রখর মেধাবী ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদক প্রাপ্ত শিক্ষার্থী প্রফেসর ড. এম শামসুদ্দীন মিয়া মুক্তিযুদ্ধ কালীন অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজের জন্য শক্ত হাল ধরেন। বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের ওপর তাঁর সমান দখল ছিল।

ডিপিআই ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. নুরুর রহমান ( ১৯৭২ – ৭৬) ও প্রফেসর ড. এম নইমুদ্দিন ( ১৯৭৬ – ৭৯) অত্যন্ত সফলতা ও দক্ষতার সাথে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর একজন জাত শিক্ষক প্রফেসর লুৎফুর রাহমান অধ্যক্ষ হিসেবে একাডেমিক ও ভৌত অবকাঠামোর টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

রাজশাহী কলেজের সফল শিক্ষার্থী ড. মোঃ তামিজুল হক কর্মঠ অধ্যক্ষ হিসেবে শিক্ষক – শিক্ষার্থীর নিকট সমান জনপ্রিয় হন। প্রফেসর ড.মোঃ আবুল কাশেম স্যার তাঁর অপরিসীম ধৈর্য, আগ্রহ এবং একই সাথে তাঁর নিপূণ কার্যদক্ষতা দিয়ে কলেজকে হৃষ্টপুষ্ট করেন সর্বক্ষেত্রে।

কলেজের শতবর্ষ উৎসব উদ্ যাপনের নায়ক তিনি। অত্যন্ত সজ্জন, সৎ ও বিনয়ী ব্যাক্তিত্ব অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ সেরাজুল ইসলাম স্যারের সময় ইংরেজি ভবনটির দ্বিতল পর্যন্ত নির্মিত হয়। পরবর্তীতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সততা, দক্ষতা ও সাহসিকতা নিয়ে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত অধ্যক্ষের চেয়ারের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন প্রফেসর শামস্ উদ্দীন আহমেদ। প্রফেসর এ. এস . এম. মোয়াররফ ইংরেজি সাহিত্যের খ্যাতিমান শিক্ষক।

তিনি দীর্ঘ চাকুরী জীবনের সিংহভাগই কাটিয়েছেন রাজশাহী কলেজে এবং তাঁর অসংখ্যক কৃতী শিক্ষার্থী আজ দেশ – বিদেশে কর্মসফলতার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন।

১৯৯৫ – ৯৬ পর্যন্ত তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন কাজ করা ধারার সূচনা করেন প্রফেসর এম. ইউনূস আলী দেওয়ান ১৯৯৭- ৯৮ পর্যন্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন কালে। রাজশাহী কলেজের একমাত্র নারী অধ্যক্ষ প্রফেসর আখতার বানু।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান ও আপোষহীন নেতৃত্ব উন্নয়নের পাশাপাশি ‘ঐতিহ্যে রাজশাহী কলেজ স্মারকগ্রন্থ ‘ অমূল্য দলিল রচনার কারিগর তিনি। প্রফেসর মোঃ আব্দুল হাই অত্যন্ত স্বল্প সময়ে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন কালে পরীক্ষার পরিবেশ পুনরুদ্ধারে সাহসী ভূমিকা পালন করেন।

প্রফেসর ড. কে. এম. জালালউদ্দীন আকবর অত্যন্ত মার্জিত, অতি বিনয়ী ও নিরহংকার ছিলেন। তাঁর সময়কালে আমি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে রাজশাহী কলেজের রসায়ন বিভাগে যোগদান করি। অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল বাছির, একজন প্রকৃত শিক্ষক ও একজন সফল প্রশাসকের আদর্শ প্রতীক ছিলেন।

তাঁর সততা, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও সাহসিকতার তারিফ করতে হয়। বিশৃঙ্খল একাডেমিক পরিবেশের টেকসই উন্নয়নে তাঁর সাহসী ও দৃঢ় পদক্ষেপ অংশীজনকে উদ্দীপ্ত করে । বাংলা সাহিত্যের প-িত, সুলেখক ও কবি প্রফেসর ড. মোঃ আশ্ রাফুল ইস্ লামের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান ২০০৪ সালে।

নম্র- ভদ্র ও সদা নবীন থাকা তাঁর বৈশিষ্ট্যের অন্যতম দিক। প্রফেসর মোঃ শামস্ উল হক তাঁর সময়কালকে পরিকল্পিত ও পরিপূর্ণভাবে কলেজের উন্নয়নে কাজে লাগিয়েছেন বেশ দক্ষতা – সাহসিককতা ও দৃঢ়তার সাথে। তাঁর সময়ে চল্লিশের অধিক শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টি হয়।

পুলিশ ফাঁড়ি স্হাপন তাঁর হাত ধরে। প্রফেসর ড. আলী রেজা মুহম্মদ আব্দুল মজিদ স্যার একজন অত্যন্ত সৎ, অমায়িক ভদ্র ও ধর্মপরায়ণ স্বভাবের মানুষ। কলেজের ডিজিটাল যুগের সূচনা তাঁর সময়ে। । কো-কারিকুলার এবং এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমের নতুন ধারায় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ তিনি গ্রহণ করেন।

প্রকৃত অর্থে শক্ত মূলভিত্তির গাঁথুনি দিয়ে রাজশাহী কলেজকে সাজিয়েছেন উপরিউক্ত সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষগণ। আর বহু জ্ঞানতাপস নিবেদিত মহান শিক্ষাগুরুর সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় অসংখ্যক কৃতী শিক্ষার্থী সৃষ্টি রাজশাহী কলেজকে করেছে দেশ সেরা।

বর্তমান কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাঃ আব্দুল খালেক তাঁর মেধা – মনন ও শ্রম দিয়ে কলেজের একাডেমিক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সম্মানিত সহকর্মীদের নিয়ে।

নানান সীমাবদ্ধতা, প্রাপ্তি – অপ্রাপ্তির পরিসংখ্যান হিসেবের অঙ্ক থেকে বাদ দিলেও সার্ধশত বছরের স্মৃতির ভা-ার রাজশাহী কলেজ সুবিবেচক, দেশদরদী ও মানবিক মানবসম্পদ সৃষ্টিতে ব্যতিক্রমী ও অতুল ভূমিকা আমাদেরকে করেছে গর্বিত।

১৫০ বছরের আলোক দ্যুতির উৎস মায়াবতী রাজশাহী কলেজের কীর্তির ঝা-া আরও সুবৃহৎ ও সমৃদ্ধ হোক সে কামনা এই মাহেন্দ্রক্ষণে।

এ কথা ঠিক, পুরাতন ঐতিহ্যের ভার অনেক। একা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রক্ষাণাবেক্ষণ করা দুরূহ। রাজশাহী কলেজের সকল ভবনকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। জয়তু রাজশাহী কলেজ।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর