সিলেটের নগর পিতা হলেন আনোয়ারুজ্জামান


সিলেট প্রতিনিধি: সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই আকাশ মিনিটে মিনিটে রঙ পরিবর্তন করেছে। যখন তখন বৃষ্টি নামতে পারে এমন একটা আশঙ্কায় প্রস্তুতি নিয়েই বেরিয়েছেন অনেক ভোটার।
কেউ কেউ অপেক্ষায় ছিলেন। আগে দেখি বৃষ্টির ভাবগতি। দুপুরের দিকে একবার কিছু সময়ের জন্য রোদের দেখাও মিলেছিল।
তবে এরপর থেকে রোদ না থাকলেও বৃষ্টি হয়নি। অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন সিলেটের ভোটারা।
অবশেষে বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টি ঝরেনি। অথচ, স্বাভাবিক কারণে বুধবারও বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া অফিস।
বেশ ভালো পরিবেশে সিলেটে চলে ভোট উৎসব। তাছাড়া এবারই প্রথম ইভিএম-এ ভোট হয় সিলেটে। শঙ্কা এই মেশিন নিয়ে থাকলেও ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত তেমন কোন খারাপ খবর পাওয়া যায়নি।
বরং ভোটারদের সাথে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, এটা বেশ সহজ এবং ভালো। যদিও ইভিএম-এ ধীর গতির কথা স্বীকার করে নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটাররা ইভিএমে অভ্যস্ত না হওয়ায় ভোটগ্রহণে দেরি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আখালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসা নতুন ভোটার কায়সান করিম বলেন- প্রথম ভোট দিতে সকাল ১০টায় নগরীর ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই কেন্দ্রে হাজির হই।
তবে কেন্দ্রের ৭ নম্বর বুথের সামনে আড়াই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও ভোট দিতে সক্ষম হই। বিরক্তি প্রকাশ করে আরেক মহিলা নবীন ভোটার বলেন, প্রথম ভোট বলে তিন বান্ধবী এক সঙ্গে এসেছি।
কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত লাগছে। তাই ভোট না দিয়ে চলে যাচ্ছি। এই কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথের সামনে নারীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
তবে সবমিলিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। আবহাওয়ার বৈরিতাও ছিল না। উৎসব মুখর পরিবেশে কেন্দ্রমুখী ডয়লেন ভোটাররা, একথা বলাই যায়।
এরমধ্যেই চলছে তুমুল আলোচনা ছিল। অবশ্যই মেযর প্রার্থী নিয়ে। এই চেয়ারে আওয়ামী লীগের আনোযারুজ্জামান চৌধুরী না জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুলের সম্ভাবনা বেশী আলোচনার বিষয় সেটিই।
তবে শেষ পর্যন্ত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকেই এগিয়ে রাখেন সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে সচেতন মহল। তাদের ধারনা, ১০ বছর পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ফিরছে সিলেটের নগরভবনে।
বিএনপি এবারের নির্বাচন বর্জন করেছে। বর্জন করেছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। এ অবস্থায় সিলেটে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের সাথে মেযর পদে যারা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন, তারা প্রতিযোগীতাই গড়ে তুলতে পারেননি।
ভোটের মাঠে সক্রিয় গণমাধ্যম কর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সচেতন ভোটাররা বলাবলি করছেন কামরানের চেয়ারে ফিরলো নৌকা। নগর পিতার আসনে আসীন হলেন আওয়ামী লীগের আনোয়ার।
মোহাম্মদ আনোয়ারুজ্জমান চৌধুরী। অথাৎ প্রায় ১০ বছর পর সিলেট সিটি করপোরেশনের আতুড়ঘর নগরভবনে ফিরছে আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ব।
এর আগে ২০১৩ সালের নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন প্রয়াত সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
তিনি এতই জনপ্রিয় একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন যে, ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিন সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ২০০৮ সালের নির্বাচনে কারাগারে থেকে অংশগ্রহণ করলেও কেউ তার বিজয় ঠেকাতে পারেনি।
তিনি জয় পেয়েছিলেন বিশাল ব্যবধানে। ওই নির্বাচনে তার সঙ্গে বিএনপি থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিলেন প্রয়াত নেতা এমএ হক। এর আগে কামরান ১৯৯৫ সালে সিলেট পৌরসভার চেযারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এরপর ২০০২ সালে সিলেট পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উত্তীর্ণ হলে ভারপ্রাপ্ত মেযর হন তিনি। ২০০৩ সালের নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং বিএনপির প্রয়াত নেতা এমএ হককে পরাজিত করে প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন কামরান।
দুইবারের নির্বাচিত মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে গেলে নগরভবনে প্রায় বিশ বছরের কর্তৃত্ব হারায় আওয়ামী লীগ।
২০১৮ সালের নির্বাচনেও সামান্য ভোটের ব্যবধানে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
অবশ্য ওই নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য আরিফের জনপ্রিয়তার চেয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরিন কোন্দলকেই বেশি দাযী করেন সচেতন মহল।
২০২০ সালে মহামারি করোনায় তাঁর মৃত্যুর পর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদটি পুনরুদ্ধারের বিষযটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলে।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক বাঘা বাঘা নেতা কেন্দ্রে লবিং করতে থাকেন নৌকার মাঝি হতে।
তবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আস্তা রাখেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর উপর।
মনোনয়ন ঘোষণার পর সিলেট আওয়ামী লীগে সমস্যা হতে পারে, ঐক্য নাও থাকতে পারে- ইত্যাদি আশঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।
মনোনয়ন যুদ্ধে পরাজিত নেতারাও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর জন্য শেষ পর্যন্ত প্রচার যুদ্ধ চালিয়ে ছিলেন এবং মরিয়া হয়ে কাজ করেন।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নির্বাচন থেকে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সরে দাঁড়ানোর পর নৌকা বা আনোযারুজ্জামান চৌধুরীর পথ অনেকটাই পরিস্কার হয়ে যায়।
তখন থেকে প্রায় সবাই তার বিজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত মতামত দিতে থাকেন। কারণ, তার প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থীদের মধ্যে যারা ছিলেন, তাদের পক্ষে নুন্যতম প্রতিযোগিতা গড়ে তোলাও অসম্ভব ছিল বলে মনে করেন ভোটের মাঠে থাকা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ গণমাধ্যম কর্মী ও সচেতন ভোটাররা।
সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
বুধবার (২১ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া সিলেটে চলে ভোটগ্রহণ। ভোটগ্রহণের সময় বিকাল ৪টা পর্যন্ত থাকলেও কয়েকটি কেন্দ্রের ভেতরে ভোটারদের লাইন থাকায় ৪টার পরে আরও কিছুক্ষণ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়।
সাড়ে ৪টা থেকে আসতে শুরু করে ফলাফল। এতে টুটাল ১৯০ কেন্দ্রের ফলাফলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৭০০, লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল পেয়েছেন ৫১ হাজার ৩২১ ভোট।