কৃষি কাজে উন্নত প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিন : কৃষিমন্ত্রী

সময়: 9:21 pm - February 2, 2019 | | পঠিত হয়েছে: 5 বার

হাবিবুর রহমান, গাজীপুর প্রতিনিধি:দেশে নতুন ধানের জাতসহ উন্নত প্রযুক্তি দ্রুত কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বিজ্ঞানীদের আহবান জানান কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। পাশাপাশি বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল ধানের জাত ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়নের জন্য তিনি বিজ্ঞানীদের প্রতি বিশেষ আহবান জানিয়েছেন।

শনিবার গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে (ব্রি) বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা ২০১৭-১৮ এর উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহবান জানান।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় আলোচক হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. ফজলে ওয়াহেদ খোন্দকার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কবির ইকরামুল হক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মীর নূরুল আলম।

অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। ব্রির পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আনছার আলী এতে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় ‘গবেষণা অগ্রগতি ২০১৭-১৮’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ড. তমাল লতা আদিত্য। ব্রি, বারি, বিএআরসি, ডিএই, ইরিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পরবর্তী পাঁচদিন ধরে চলবে কর্মশালার বিভিন্ন কারিগরী অধিবেশন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধান গবেষণা ও সম্প্রসারণ কাজের অর্জন ও অগ্রগতির বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। কর্মশালার কারিগরী অধিবেশনগুলোতে গত এক বছরে ব্রির ১৯টি গবেষণা বিভাগ ও নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের গবেষণা ফলাফল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সামনে উপস্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

গত দু’ বছরে একটি হাইব্রিডসহ মোট ১২টি উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে যার মধ্যে আছে ব্রি ধান৮৪, ব্রি ধান৮৫, ব্রি ধান৮৬, ব্রি ধান৮৭, ব্রি ধান৮৮, ব্রি ধান৮৯ এবং ব্রি হাইব্রিড ধান৬। নতুন উদ্ভাবিত ১২টি জাতের মধ্যে চারটি রোপা আমন, তিনটি রোপা আউশ এবং পাঁচটি বোরো মওসুমে চাষ উপযোগী। এসব জাত হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ ৭-৮ টন ফলন দিতে সক্ষম।
এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্ভাবিত অন্যান্য জাতের মধ্যে আছে দেশের অনুকূল পরিবেশে চাষযোগ্য জাত ব্রি ধান৭৫ এবং ব্রি ধান৮০ যার চাল সরু এবং সুগন্ধযুক্ত। পাশাপাশি ব্রি ধান৭৬ ও ব্রি ধান৭৭ অলবণাক্ত জোয়ার-ভাটা এলাকায় চাষ উপযোগী। পক্ষান্তরে ব্রি ধান৭৮ লবণাক্ত জোয়ার-ভাটা এলাকায় চাষ উপযোগী জাত। অধিকন্তু ধান ফসলের উন্নত বালাই ব্যবস্থাপনা, স্থান ভিত্তিক শস্য বিন্যাস, কৃষিতাত্তিক ব্যবস্থাপনা এবং যন্ত্রপাতিসহ শতাধিক ব্রি উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সারাদেশে কৃষক পর্যায়ে ব্যবহার করা হয়। ব্রি উদ্ভাবিত দানাদার ইউরিয়া প্রয়োগযন্ত্রটি সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের পেটেন্ট অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এগুলোসহ ব্রি গত আট বছরে ৩৮টি উফশী ধানের জাতসহ বেশ কিছু প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করেছে। উদ্ভাবিত এ জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে লবণাক্ততা সহনশীল বোরো জাত ব্রি ধান৬১ ও ব্রি ধান৬৭, জিঙ্ক সমৃদ্ধ ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৬৪, ব্রি ধান৭২ ও ব্রি ধান৭৪, ঐতিহ্যবাহী বালাম চালের অনুরূপ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এবং সরু বালাম নামে পরিচিত জাত ব্রি ধান৬৩, সরাসরি বপনযোগ্য আগাম আউশ ধানের জাত ব্রি ধান৬৫, খরা সহনশীল ও উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ রোপা আমনের জাত ব্রি ধান৬৬, বোরো মওসুমের আদর্শ উফশী জাত ব্রি ধান৬৮ এবং কম খরচে আবাদযোগ্য ব্রি ধান৬৯। ব্রির সাম্প্রতিক উদ্ভাবনের মধ্যে আরো আছে, দেশে কৃষক মহলে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং বোরো মওসুমে সর্বোচ্চ ফলন দিতে সক্ষম ব্রি ধান২৯ এর সমপর্যায়ের গুণাগুণ সমপন্ন ব্রি ধান৫৮ এবং আমন মওসুমের জনপ্রিয় জাত বিআর১১ এর সমতুল্য ব্রি ধান৪৯। তবে ব্রি ধান৫৮ এবং ব্রি ধান৪৯ জাত দুটি যথক্রমে ব্রি ধান২৯ এবং বিআর১১ এর চেয়ে প্রায় এক সপ্তাহ আগাম। পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রেক্ষাপটে নানা প্রতিক‚লতা মোকাবিলার লক্ষ্যে ব্রি বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত ১১টি লবণ-সহিষ্ণু, দু’টি জলমগ্নতা সহিষ্ণু, তিনটি খরা সহিষ্ণু, একটি খরা পরিহারকারী, দু’টি শীত সহনশীল এবং চারটি জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। বিভিন্ন ধরনের বৈরী পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার উপযোগী আরো ধানের জাত উদ্ভাবনের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলছে। ধানের গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এ এবং আয়রন সমৃদ্ধ ধান উদ্ভাবনের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ব্রি উদ্ভাবিত সরু ও সুগন্ধযুক্ত বোরো মওসুমের জাত ব্রি ধান৫০ বা বাংলামতি রফতানি সম্ভাবনাময়। সব মিলিয়ে ব্রি এ পর্যন্ত ছয়টি হাইব্রিডসহ ৯৪টি উফশী ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে যার মধ্যে বেশ ক’টি প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল এবং উন্নত পুষ্টি গুণ সম্পন্ন। আর এগুলোর ফলন সনাতন জাতের চেয়ে তিন গুণ বেশি। আশা করা যাচ্ছে, কৃষক পর্যায়ে এসব জাত জনপ্রিয় হবে এবং সামগ্রিকভাবে ধান উৎপাদন বাড়বে।
বর্তমানে দেশের ৮০ ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের চাষাবাদ হয় এবং এর থেকে আসে দেশের মোট ধান উৎপাদনের শতকরা ৯১ ভাগ।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর