আজ শপথ নিবেন মোদি

 

স্থান, রাষ্ট্রপতি ভবনের লাল মোরাম বিছানো আঙিনা। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা। পাত্র, নরেন্দ্র মোদি। উপলক্ষ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদির দ্বিতীয় দফার শপথ গ্রহণ। মোদিকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। প্রত্যক্ষ করবেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে গঠিত ‘বিমসটেক’–এর সদস্যদেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে আমন্ত্রিত অন্য বিদেশি অতিথিরা এবং দেশের নামী নাগরিকেরা। আমন্ত্রিত হয়েছেন মোট ছয় হাজার ব্যক্তি। রাষ্ট্রপতি ভবনে এত বড় অনুষ্ঠান এর আগে কখনো হয়নি।

নিরাপত্তার স্বার্থে রাইসিনা পাহাড়ের এই তল্লাটের সব সরকারি অফিস বেলা দুটোর পর বন্ধ রাখা হচ্ছে। ওই সময় থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হবে রাজধানীর এ অঞ্চলের সব রাস্তা। সরকারের নিয়ন্ত্রণের আওতায় নেই শুধু আবহাওয়া। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, রাজধানী দিল্লির তাপমান ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ঘোরাফেরা করবে। ঝড়বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। আকাশ থাকবে মেঘমুক্ত কিন্তু ঘোলাটে।

বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান যাঁরা এ অনুষ্ঠানে আসছেন বলে নিশ্চিত করেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই তালিকা দিয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গতকাল বুধবার চলে এসেছেন। শপথ অনুষ্ঠানের পর তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনেই সাক্ষাৎ করবেন ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। শুক্রবার তাঁর সঙ্গে দেখা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির, হবে একান্ত আলাপচারিতা। আবদুল হামিদ ছাড়া বিমসটেক সদস্যদেশের আর যাঁরা হাজির থাকবেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উ উইন মিন্ট, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এবং থাইল্যান্ডের কৃষি ও সমবায়মন্ত্রী গ্রিসাদ বুনরাচাস। তাঁদেরই সঙ্গে আমন্ত্রিত কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্ট সুরনবে জিনবিকভ এবং মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবীণ কুমার জুগনাথ।

মোদি সরকারের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি মেনেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের এই আমন্ত্রণ। আমন্ত্রিতদের তালিকা থেকে পশ্চিমের প্রতিবেশী পাকিস্তান বাদ যাওয়ার মধ্য দিয়ে দুটি বিষয় স্পষ্ট। প্রথমত, পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তোলার মতো পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি বলে ভারতের ধারণা। বিশেষ করে যখন সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে পাকিস্তান একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের অসহযোগিতার কারণে ‘সার্ক’ অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় তার বিকল্প হিসেবে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিমসটেককে কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার একটা চেষ্টা চলছে।

নরেন্দ্র মোদি ছাড়া আর কারা আজ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে গত মঙ্গলবার দলীয় সভাপতি অমিত শাহর সঙ্গে টানা পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক করেন মোদি। এই দুই নেতা ছাড়া কারা মন্ত্রী হবেন, সে বিষয়ে বিজেপির কেউ নিশ্চিত নন। তবে বিদায়ী অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়ে দিয়েছেন, শারীরিক কারণে তাঁর পক্ষে মন্ত্রিসভায় গুরুদায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়। তাঁরই মতো কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের। তিনিও এবার ভোটে দাঁড়াননি। তবে জেটলির মতো তিনি চিঠি লিখে জানাননি যে মন্ত্রী হতে চান না। কোনো কারণে সুষমা মন্ত্রী না হলে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে স্মৃতি ইরানীর নাম।

সবচেয়ে বড় জল্পনা অবশ্য অমিত শাহকে নিয়ে। তাঁকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলে তাঁরই কোনো ঘনিষ্ঠকে দলের দায়িত্বে আনা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জগৎ প্রতাপ নাড্ডা, ভূপেন্দ্র যাদব ও ধর্মেন্দ্র প্রধানের নাম শোনা যাচ্ছে। বিদায়ী মন্ত্রিসভায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশ নতুন মন্ত্রিসভায়ও থাকবেন।

কারা কারা মন্ত্রী হচ্ছেন, আজ সকালেই তা চূড়ান্ত হবে। প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে মোদি বলেছিলেন ‘মিনিমাম গভর্নমেন্ট, ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স’। এই স্লোগান সত্ত্বেও সরকারের বহর কমানো তাঁর পক্ষে সম্ভবপর হয়নি। এবারও যে তা হবে, তেমন মনে করার কানো কারণ নেই।

শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসবেন বললেও গতকাল জানিয়ে দেন, তিনি আসছেন না। পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসায় ‘তৃণমূলের হাতে নিহত’ ৫৬ জনের পরিবারকে শপথ অনুষ্ঠানে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘এই রাজনীতিকরণের’ প্রতিবাদে মমতা বলেছেন তিনি আসছেন না।

বিদেশি অতিথিদের জন্য রাষ্ট্রপতি ভবনে রাতের হালকা খাবারের আয়োজনে আমিষ ও নিরামিষ দুই ধরনের খাবারের সঙ্গে থাকছে ‘ডাল রাইসিনা’। টানা প্রায় আট ঘণ্টা ধরে এই ডাল রান্না করতে হয়।

রাষ্ট্রপতি ভবনের দরবার হলেই সাধারণত শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। কিন্তু দরবার হলে ৫০০–এর বেশি অতিথিকে আপ্যায়ন করা যায় না। লাল মোরাম বিছানো প্রাঙ্গণকে তাই বেছে নেওয়া হয়। সেই আঙিনায় এটি হবে চতুর্থ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। প্রথমটি হয়েছিল জওহরলাল নেহরুর আমলে। দ্বিতীয়টি চন্দ্র শেখর যখন প্রধানমন্ত্রী হন। তৃতীয় ও চতুর্থবারের নায়ক নরেন্দ্র মোদি।