হুমকিতে আত্মগোপনে থেকে ফেসবুক পোষ্ট দিলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী

আপডেট: April 23, 2024 |

আসাদুর রহমান, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবু আহাদ আল মামুন।

এ বিষয়ে ওই প্রার্থী তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোষ্ট দিয়ে হুমকি দেয়ার পর থেকে ভয়ে আত্মগোপনে থাকার কথা জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা না মেনে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সাংসদ মাহবুবউল আলম হানিফের চাচতো ভাই আতাউর রহমান আতা।

তিনি বর্তমান কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগেই প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য একমাত্র প্রতিন্দন্দ্বী প্রার্থীকে হুমকি দিয়েছেন কুষ্টিয়া সদরের আলোচিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান আতার ক্যাডাররা।

তার ভয়ে প্রার্থী আবু আহাদ আল মামুন আত্মগোপন করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। আতাউর রহমান আতা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

জেলা নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান আতা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। তিনি নির্বাচনের মাঠেই থাকছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দলের নেতাকর্মীরা।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে জেলা জামাতের আমির সুজাউদ্দিন জোয়ারদার এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

সংসদ সদস্যের নিকট আত্মীয় হয়েও দলের হাই কমান্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করে আতাউর রহমান আতা প্রার্থী হিসেবে রয়ে গেছেন।

এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে কাজী হামিদুল ইসলাম নামে একজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। সুজা উদ্দিন কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী।

অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনের মাঠে প্রভাব বিস্তারের চেষ্ট করছেন আতা। তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই তিনি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হতে ইচ্ছা পোষণ করলেও তাদের প্রার্থী হতে দেয়া হয়নি। এ উপজেলায় দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব বাদশা। ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়িয়েছেন।

দিনরাত করেছেন গণসংযোগ। কিন্তু শেষ মুহুত্বে এসে আর চেয়ারম্যান প্রার্থী হননি আবু তৈয়ব বাদশা।

চাপের মুখে তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী না হয়ে আবারো ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। আবু তৈয়ব বাদশা বলেন, আমার কিছুই করার নেই। অনেক চাপের মধ্যে ছিলাম। দলের নেতাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়েছে।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান হওয়ার চেষ্টা করেছেন আতাউর রহমান। একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর জন্য নানাভাবে হুমকি ধামকি দেয়া হয়েছে।

চরম চাপের মুখে অবশেষে চেয়ারম্যান প্রার্থী বাংলাদেশ জনতা ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আবু আহাদ আল মামুন আত্মগোপনে চলে যান।

আত্মগোপনে থেকে তিনি ম্যাসেঞ্জারে জানান, আমি এবং আমার পরিবার খুবই বিপদের মধ্যে আছি। ঝাউদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান ও সন্ত্রাসী মজিদ মেম্বার আমাকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিচ্ছেন এবং আমার ঢাকার বাসাসহ বিভিন্ন জায়গায় আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

জেলা পরিষদের সদস্য জহুরুল ইসলাম আমার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে বলেছেন।

জহুরুলের ফোন থেকে মাজবুবউল আলম হানিফের চাচতো ভাই আতাউর রহমান আতা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে বলেছে।

মামুন জানান, কোন পরিস্থিতিতেই তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার বা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না। তিনি হুমকির বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্যও দাবী জানান।

জানতে চাইলে আতাউর রহমান আতা এ প্রসঙ্গে বলেন, “ভাই এসব কথা ভিত্তিহীন। আমি কাউকে হুমকি ধমকি দেয়নি। যার ইচ্ছা সে ইলেকশন করতে পারে।

জনগণ যাকে ভোট দেবে সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে। আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী।

অপর দিকে কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে অটল রয়েছেন বর্তমান সাংসদ ও রেজাউল হক চৌধুরীর আপন ছোট ভাই বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী। তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। এখানে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এমপির একক সিদ্ধান্ত ও নিজের ভাইকে প্রার্থী করায় একজোট হয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতারা।

সাবেক সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সরোয়ার জাহান বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন রিমনসহ উপজেলার নেতারা বৈঠক করে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুল আসকার হাসুর নাম ঘোষণা করেছেন।

চেয়ারম্যান প্রার্থী বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী বলেন, অনেক বড় বড় মন্ত্রী-এমপির আত্মীয় স্বজনরা প্রার্থী হয়েছেন। আমি তো খুব সাধারণ একজন প্রার্থী। সবাই নির্বাচন থেকে সড়ে গেলে আমিও প্রার্থী হবো না।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর