লাশের ভিডিও নিয়ে তোলপাড়

আপডেট: August 31, 2024 |
inbound490281306832945941
print news

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ বেশ কয়েকটি লাশ পুলিশ সদস্যরা ভ্যানে তুলছেন। এক মিনিট ১৪ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

মর্মান্তিক এই ভিডিওর স্থান ও নিহতদের সঙ্গে পরবর্তীতে কী ঘটেছিল? এ নিয়ে নেটিজেনরা জানিয়েছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।

অনেকেই বলছেন, ভিডিওটি আশুলিয়া থানার সামনে ৫ আগস্টের ঘটনা। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেয়ালে সাঁটানো একটি পোস্টার দেখেও ভিডিওটি আশুলিয়া থানার বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ভিডিওতে উপস্থিত সাভার ডিবি পুলিশের পরিদর্শক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার উপস্থিতি রয়েছে বলেও জানা গেছে।

শনিবার (৩১ আগস্ট) সকালে আশুলিয়া থানার সামনে গিয়ে ঘটনাস্থলের ভিডিওর সঙ্গে সামঞ্জস্যতা পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও ভিডিওর স্থানটি আশুলিয়া থানার সামনে বলে নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সারা দিন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি আশুলিয়া থানার সামনের ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ধারণ করা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, দুজন পুলিশ সদস্যের একজন হাত ও একজন পা ধরে ভ্যানে নিক্ষেপ করছেন। এর আগেই ভ্যানে লাশের স্তূপ করে ঢেকে দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ লাশটি তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। এ সময় দুই পুলিশ সদস্যের চেহারা দেখা গেছে।

ভিডিওর এক মিনিট ছয় সেকেন্ডের মাথায় একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় যুবলীগের ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি ও ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের। সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার পাশে।

আশুলিয়া থানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের পেছনের সড়ক দিয়ে থানা রোড অতিক্রম করে এসবি অফিসের দিকে যাওয়ার সময় ডান পাশের দেয়ালটি হুবহু ভিডিওর সঙ্গে মিলে যায়। ভিডিওতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের ছবি সংবলিত আবুল হোসেন নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টার দেখা গেছে। যা ঘটনাস্থলে গিয়েও একই পোস্টার ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানাকে নিশ্চিত করে।

আবুল হোসেন স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী। তবে থানার সামনে একটি আবাসিক ভবনের একাধিক ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথা বললেও ভিডিওটির ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা যায়নি। যদিও স্থানীয়দের অনেকেই ভিডিওর স্থানটি আশুলিয়া থানা এলাকার বলে জানিয়েছেন।

এ ছাড়া ভিডিওতে দেখতে পাওয়া এক পুলিশ সদস্য ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একজন কর্মকর্তা বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আশুলিয়া থানার সামনে স্থানীয় দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সকাল থেকেই নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় জড়ো হতে থাকে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা। শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা থানার চারপাশ ঘিরে ফেলে। এ সময় পুলিশ মসজিদের মাইক ও হ্যান্ডমাইক দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণের পরেও আন্দোলনকারী থানার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ সময় পুলিশ গুলি চালাতে থাকে। তখন তারা দোকান বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে সরে যান।

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বিকেল ৪টার দিকে আশুলিয়া থানায় হামলার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে থাকার পর আমি চলে গেছি। এরপর শুনেছি থানার সামনে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। থানায় লুটপাট ও বেশকিছু পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তখন একটি গাড়িতে বেশ কিছু লাশও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে পরে জানতে পেরেছি।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. আরাফাতের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈন বলেন, ‘আজ সকালে ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটি অ্যানালাইসিস করা হচ্ছে। আপনারা যেহেতু মিডিয়ায় কাজ করেন, কোনো তথ্য কিংবা সূত্র পেলে আমাদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।’

সূএ : বাংলাদেশ জার্নাল

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর