শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির ঈদ জামাত, বিশ্বশান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দোয়া

আপডেট: March 31, 2025 |
inbound2210822442153923895
print news

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাতে এবার ছিল অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়ানো বিশাল জনসমুদ্র। ঈদের আগের দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা শোলাকিয়ার দিকে যাত্রা শুরু করেন।

ঈদের দিন ভোর থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ আশপাশের এলাকাগুলোর মুসল্লিরা ঈদগাহ অভিমুখে ছুটে আসেন। এবার পাঁচ লাখেরও বেশি মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।

জামাতের পর মুসল্লিরা বিশ্বশান্তি ও দেশের সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া করেন। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের আহ্বান জানানো হয়। শোলাকিয়ার ঈদ জামাত এবারে ছিল ১৯৮তম, যা প্রতি বছর মুসল্লিদের মিলনস্থলে পরিণত হয়। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া জামাতের ইমামতি করেন জেলা শহরের বড়বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ।

ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে শোলাকিয়া ও তার আশপাশের এলাকায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়, যাতে মুসল্লিরা নিরাপদে জামাতে অংশ নিতে পারেন। এবার প্রথমবারের মতো সেনাসদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে যুক্ত হন। পুরো মাঠ এবং শহর সিসি ক্যামেরা এবং ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়, এবং নিরাপত্তা চৌকি ও ওয়াচ টাওয়ারেও ছিল পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা।

ভোর থেকে মুসল্লিদের ঢল শুরু হয়ে সকাল ৯টার মধ্যে ঈদগাহ মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে মুসল্লিদের ঈদগাহ মাঠে প্রবেশ করতে কিছুটা দেরি হয়, তবে নিরাপত্তার প্রতি গুরুত্ব দিয়েই তল্লাশি এবং পরিদর্শন সম্পন্ন করা হয়। শহরের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে মুসল্লিদের সুবিধার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এবার শোলাকিয়া ঈদ জামাতে অংশ নিতে আসা একাধিক মুসল্লি জানান, তারা বহু বছর ধরে এই ঐতিহ্যবাহী জামাতে অংশ নিচ্ছেন এবং শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করলে তাদের মন শান্তি পায়।

৬৫ বছর বয়সী আব্দুল খালেক, যিনি গত ৩০ বছর ধরে শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ আদায় করছেন, বলেন, “এখানে নামাজ আদায় করতে শান্তি পাই, তাই বারবার শোলাকিয়ায় আসি।”

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের আয়তন ৭ একর এবং প্রায় ২০০ বছর ধরে এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৮২৮ সালে সাহেববাড়ির সুফি সৈয়দ আহমদ প্রথমবারের মতো ঈদ জামাতের আয়োজন করেন এবং তার পর থেকে এটি ধারাবাহিকভাবে হয়ে আসছে।

ঈদগাহ মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের রাস্তাঘাটেও মুসল্লিদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া, যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেন চলাচল করে, যার মধ্যে একটি ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়, অপরটি ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। জামাত শেষে, মুসল্লিরা একই ট্রেনগুলোতে তাদের গন্তব্যে ফিরে যান।

শোলাকিয়া ঈদ জামাত কিশোরগঞ্জের এক ঐতিহ্য, যা লাখো মানুষের একত্রিত হয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার এক অনন্য উৎসব।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর