অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে হতাশ করেছে: আইন ও সালিশ কেন্দ্র


অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের শাসনামল জনগণকে হতাশ করেছে বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
তারা বলেছে, অভ্যুত্থানের পরে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বিচারে গ্রেপ্তার এখনো চলছে। হেফাজতে মৃত্যু ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে; যা আগের সরকারের দমনমূলক আচরণেরই পুনরাবৃত্তি।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এ মূল্যায়ন তুলে ধরে আসক।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছর দেশ একটি যুগান্তকারী গণজাগরণের সাক্ষী হয়। এ আন্দোলন কেবল একটি রাজনৈতিক পালাবদল নয়, বরং এটি ছিল একটি নতুন যুগের সূচনা, যেখানে মানুষের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে গড়ে ওঠে বিস্তৃত গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আন্দোলনের পরে অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে হতাশ করেছে। এখনো নির্বিচারে গ্রেপ্তার চলছে; হেফাজতে মৃত্যু ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে, যা আগের সরকারের দমনমূলক আচরণের পুনরাবৃত্তির মতোই মনে হচ্ছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির কারণে নাগরিকের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা রয়ে গেছে।
দেশে ‘মব সন্ত্রাস আশঙ্কাজনকভাবে’ বেড়েছে দাবি করে আসক বলছে, রাজনৈতিক প্ররোচনা কিংবা সামাজিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে সংঘটিত এসব সহিংস কর্মকাণ্ডে বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানসমূহ এসব ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, যা মানবাধিকারের জন্য এক গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে, বর্তমান পরিস্থিতির আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ক্রমাগত দুর্বল ও সুরক্ষাহীন অবস্থা। জনগণের প্রত্যাশা ছিল, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নিপীড়ন ও হুমকির ঘটনা আরও বেড়েছে। এমনকি ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কারো কারো বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালানো হয়েছে, যার মধ্যে লুটপাট এবং জীবননাশের হুমকিও রয়েছে। এসব ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো বিচার বা শাস্তি না হওয়ায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা আরও গভীর হয়েছে।
নারী হেনস্থার বিষয়ে আসক বলছে, গণআন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা নারীর জন্য পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠেছে। নারীরা বর্তমানে এক বিস্তৃত নিরাপত্তাহীনতার আবহে জীবনযাপন করছেন। বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্যে নারীদের মারধর, অপমান ও শারীরিক নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে। ধর্ষণ, যৌন হয়রানি এবং পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতা এখন প্রায় নিয়মিত সংবাদে উঠে আসছে। নারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়ানো, তাদের পোশাক বা আচরণ নিয়ে নৈতিকতা নির্ধারণের চেষ্টা তথা ‘মোরাল পুলিশিং’ দিন দিন তীব্র হচ্ছে। নারীদের এ নিপীড়ন কেবল ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি কাঠামোগত সহিংসতার রূপ নিয়েছে, যেখানে নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সংবাদমাধ্যম আজ নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শত শত সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল, কৌশলে চাকুরিচ্যুত, মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা, গ্রেপ্তার, সংবাদপত্র অফিসে হামলা এবং মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতার চর্চা কতটুকু বিদ্যমান- সেই প্রশ্নটিও বছরজুড়ে অব্যাহত ছিল।
আসকের দাবি, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অনেক শিক্ষার্থীকে অন্যায্যভাবে প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে,সনদ বাতিল করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হুমকির মুখে পড়ছে।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মাঝে একটি আশাব্যঞ্জক বিষয় হলো, বাংলাদেশ বলপূর্বক গুম থেকে রক্ষার আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করেছে এবং আগের শাসকগোষ্ঠীর অপরাধ তদন্তে একটি ‘গুম কমিশন’ গঠন করেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য দায়বদ্ধতার পথে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে। তবে একই সঙ্গে ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন’ পুনর্গঠন না করাটা মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণা করায় সাধুবাদ জানায় আসক।
তথ্য সূত্র: বিডি নিউজ২৪.কম