কোন জিনিসে কতদিন বেঁচে থাকে করোনাভাইরাস?

আপডেট: March 30, 2020 |

বিশ্বব্যাপী এখন কাঁপছে করোনাভাইরাস আতঙ্কে। এরই মধ্যে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে ১৯৯ দেশ ও অঞ্চলে। এর থাবায় গোটা বিশ্বে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৭ লাখ ২১ হাজার মানুষ। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষের।

করোনাভাইসরাস নিয়ে সারা বিশ্ব শঙ্কিত। যারা সচেতন এবং সংক্রমণ রুখতে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলছেন, তারা ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিচ্ছেন। বাইরে বের হতে হলে মাস্ক পরে নিচ্ছেন।

কিন্তু কোন জিনিসে এই ভাইরাস কতদিন বাঁচে? কোনও জিনিসের সংস্পর্শে কোনও আক্রান্ত রোগী এলে, কতদিন পর্যন্ত সেই জিনিস থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত?

দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি দিন বাঁচতে পারে পলিপ্রোপিলিনের ওপর। পাঁচ দিন পর্যন্ত এর উপর বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস।

পলিপ্রোপিলিন এক ধরনের প্লাস্টিক। এই ধরনের প্লাস্টিক দিয়েই বাচ্চাদের খেলনা থেকে শুরু করে প্লাস্টিকের টিফিন বক্স তৈরি করা হয়।

দ্বিতীয় যে জিনিসের উপর করোনাভাইরাস বেশি ক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে, তা হল কাগজ। তবে প্রথমেই বলে রাখা দরকার, গবেষকরা জানিয়েছেন, খবরের কাগজ থেকে কোনওভাবেই এই ভাইরাস ছড়াতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক কানাইচন্দ্র পাল বলছেন, ‘‘কাগজের মাধ্যমে এই সংক্রমণ ছড়ানোর কোনও আশঙ্কাই নেই। কাগজ যা দিয়ে তৈরি, বিশেষ করে সংবাদপত্রের প্রক্রিয়াকরণের সময়ে যে সমস্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, তার উপরে ড্রপলেটের বেঁচে থাকা অসম্ভব।’’

তবে গবেষকেরা জানিয়েছেন, খবরের কাগজ ছাড়া অন্যান্য কাগজের উপর ৪-৫ দিন বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস।

তৃতীয় যে জিনিসের উপর করোনাভাইরাস বেশি ক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে, তা হল কাচ। গবেষণায় দেখা গেছে, কাচ জাতীয় কোনও জিনিসের উপর অন্তত চার দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস।

ফলে কাচে হাত দিলে, নিয়ম-বিধি মেনে ভাল করে হাত পরিষ্কার করে নেওয়া প্রয়োজন। বাড়ির জানলার কাচগুলো প্রয়োজনে ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করা দরকার।

একই ভাবে কাচের মতো সমান সংক্রমণযোগ্য হল কাঠ। কাঠের বস্তুর উপর এই ভাইরাস চার দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

তাই গবেষকেরা জানান, কাঠের কোনও বস্তুতে হাত দিলে, তার পরই যেন কোনওভাবেই হাত মুখে বা নাকে না যায় এবং ভাল করে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা জরুরি।

এর পর যে জিনিসের উপর করোনাভাইরাস বেশি ক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে, তা হল স্টেইনলেস স্টিল। গবেষণায় দেখা গেছে, স্টেইনলেস স্টিলের উপর এই ভাইরাস ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকে।

কোনও আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে যদি করোনাভাইরাসের জীবাণু ড্রপলেটের মাধ্যমে কোনও স্টিলের উপরে পড়ে, তাহলে ৪৮ ঘণ্টা পরও তা থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

সার্জিক্যাল গ্লাভস। প্রধানত চিকিৎসকেরা এই গ্লাভস ব্যবহার করে থাকেন। এই গ্লাভস ব্যবহারে ভীষণভাবে সুরক্ষা-বিধি মেনে চলা প্রয়োজন। কারণ সার্জিক্যাল গ্লাভসের উপর এই ভাইরাস অন্তত চার ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। সুরক্ষা-বিধি মেনে না চললে, সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনাও খুব বেশি।

যে কতগুলো ধাতব বস্তু নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছে। তার মধ্যে আরেকটি হল অ্যালুমিনিয়াম। গবেষকরা জানান, অ্যালুমিনিয়ামের উপর এই ভাইরাস দু’ঘণ্টা থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

তবে ‘নগ্ন’ ভাইরাস কোনও কিছুর উপরই বাঁচতে পারে না। এদের টিকে থাকার জন্য ড্রপলেটের প্রয়োজন হয়। অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় পদার্থের উপর যদি এই ড্রপলেট পড়ে, তবেই তা সংক্রমণযোগ্য।

এগুলো ছাড়া সম্প্রতি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে তামার উপর এবং বাতাসে এই ভাইরাস কতদিন বাঁচতে পারে, তা প্রকাশ করা হয়েছে।

সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, তামার উপর চার ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এই করোনাভাইরাস। আর বাতাসে মাত্র তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

সূত্র: আনন্দবাজার

বৈশাখী নিউজ/ ইডি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর