দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে সুস্থতা
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে এবং সুস্থতা বেড়েছে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৩২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ১২ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। আগের দিন মারা গিয়েছিলেন রেকর্ড সংখ্যক ৪৪ জন। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ১৭১ জন।
শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ দশমিক ০১ শতাংশ কম।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ৯০৩ জন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ৫৭৮ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৩২৫ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৮ হাজার ৭৩০ জন।
আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ৩ হাজার ১৪১ জনের দেহে নতুন করে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ২৮৫ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল শনাক্ত হয়েছিল ২ হাজার ৮৫৬ জন।
নমুনা পরীক্ষায় আজ শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ১৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি।
দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭ হাজার ছাড়িয়েছে। বর্তমানে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ৮৭ হাজার ৫২০ জন রোগী রয়েছেন।
তিনি জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় ১৪ হাজার ৬৯০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ৩৫টি। গতকালের চেয়ে আজ ৬৫৫টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৬০টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০৫টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল
১৬ হাজার ৬৩৮টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ২ হাজার ১৩৩টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৫ লাখ ১ হাজার ৪৬৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২৭ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের ১ জন রয়েছেন। অঞ্চল বিবেচনায় এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জন, সিলেট বিভাগের ২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের ১ জন, রংপুর বিভাগের ১ জন এবং বরিশাল বিভাগের ১ জন রয়েছেন। ২৭ জনের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২০ জন, বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ জন এবং মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় ১ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৭১২ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৯ হাজার ৭৫৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২৯৪ জন। এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন ৫ হাজার ৫২৩ জন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারিন্টিন মিলে কোয়ারিন্টিনে রয়েছেন ২ হাজার ৭৯২ জন। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৩৬ জনকে কোয়ারিন্টিনে রাখা হয়েছে। কোয়ারিন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ৭৬৩ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ ৫৮ হাজার ৬২২ জন। বর্তমানে কোয়ারিন্টিনে আছেন ৬১ হাজার ৮১৪ জন। দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ৯ হাজার ১৪২টি। ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৯ হাজার ৫০টি। এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২৩ লাখ ৭ হাজার ৯২৫টি। বর্তমানে ২ লাখ ১ হাজার ২১৭টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩১৪টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩২টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩৪৩ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ১১ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ২৭ জনসহ মোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ১৮ হাজার ২৩৯ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৩ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৫২৩ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৪৮ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৮১ জন এবং এ পর্যন্ত ১২ হাজার ১২৬ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৩ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৬৭২ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫ লাখ ৫৩ হাজার ১৮২ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ৫৫ জন এবং এ পর্যন্ত ৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৯ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়। তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে। বাসস
বৈশাখী নিউজ/ ফারজানা