লকডাউনে গায়ে রোদ না লাগালে যে সমস্যা হতে পারে
লকডাউনে বাড়িতেই শুয়ে বসে কাটাচ্ছেন। একেবারেই বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। এদিকে, আনলক পর্ব শুরু হলেও, সতর্কতা মেনে অনেকেই আতঙ্কে বাইরে বের হতে সহস পাচ্ছেন না। বাড়িতে বসেই অফিসের কাজ করছেন। অনেকে ছাদে গিয়ে সামান্য হলেও হাঁটাছেন, কিন্তু বিকেল বেলা, অথবা সূর্যাস্তের পর। গায়ে একদমই রোদ-মাখার সুযোগ পাচ্ছেন না। তাহলে ভয়াবহ এ সব সমস্যা হতে পারে ভিটামিন ডি-র অভাবে।
লকডাউনে দীর্ঘসময় জুড়ে বাড়িতে বসেই ল্যাপটপে অফিসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। হাত-পা, কোমরে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে? কিন্তু খাবার যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টি কর খাবার খেয়েছেন। নিয়মিত শরীরচর্চাও করেছেন। কিন্তু তারপরও কেনো হাড়ে-পেশীতে টান ধরছে। ভিটামিন ডি-র অভাব নয়তো? রোদে একটুও না বের হওয়ার ফলে অনেক মানুষের এই প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। কয়েক মাসে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি সংক্রান্ত সমস্যাও বেড়েছে।
ভিটামিন ডি-র অভাব হলে শুধু হাড় ক্ষয়ে যাওয়া বা ব্যথা-বেদনা নয়, তৈরি হতে পারে আরও অনেক বড় সমস্যা। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পেশি নাড়াচাড়া করতেও প্রয়োজন হয় এটির। এমনকী এর সাহায্য ছাড়া মস্তিষ্ক থেকে সারা শরীরে বার্তা পর্যন্ত পাঠাতে পারে না স্নায়ু। করোনা আবহে বার বার জোর দেওয়া হচ্ছে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতার উপর। রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও ভিটামিন ডি ছাড়া ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসদের প্রতিহত করা দুঃসাধ্য।
এনসিবিআইয়ের সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র বলছে, ভারতের প্রায় ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ ভিটামিন ডি-র অভাবে ভোগেন। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে সারা বিশ্বে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ ভিটামিন ডি-র অভাবে ভুগছেন। গ্লোবাল হেলথ প্রবলেম বলা হচ্ছে ভিটামিন ডি-জনিত ঘাটতিকে।
প্রায় ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ ভিটামিন ডি আসে সূর্যালোক থেকে। ত্বকের মাধ্যমে শোষণ হয় সেটি। প্রতিদিন ২০ মিনিট অন্তত রোদে থাকলে ৪০ শতাংশ ভিটামিন ডি শোষিত হয় ত্বকে। কিন্তু লকডাউনে এই রুটিন মানতে পেরেছেন কজন?
এই প্রসঙ্গে মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “বাইরে বেরনো কমে গিয়েছে। এই কারণে প্রতিদিন কিছুক্ষণ হলেও রোদে থাকতে হবে। ছাদ না হলেও বারান্দা বা জানলা দিয়ে যে রোদ আসে, তা শরীরে লাগানো আবশ্যক। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে। দুধ, ছানা এ জাতীয় খাবারে ভিটামিন ডি রয়েছে। প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্টস খাওয়া যেতে পারে, তবে তার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”
এই প্রসঙ্গে ডায়েটিশিয়ান রেশমী রায় চৌধুরী বলেন, ”যদি চিকিৎসকের বারণ না থাকে। সে ক্ষেত্রে রোজ একটি করে ডিম খেলে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণ হতে পারে।”
ভিটামিন ডি ঠিক মতো তৈরি না হলে ক্যালসিয়াম কাজ করতে পারে না। ফলে থাবা বসায় ছোটদের রিকেট থেকে শুরু করে বড়দের অস্টিওম্যালশিয়া, অস্টিওপোরেসিস প্রভৃতি নানাবিধ রোগ।
অন্যদিকে, ভিটামিন ডি-র সঙ্গে একাকিত্বের সংযোগের কথা বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে সম্প্রতি। ভিটামিন ডি থ্রি-র অভাবে শরীরে সেরোটোনিন হরমোনের ক্ষরণ ঠিকমতো হয় না, আমেরিকার কয়েকটি গবেষণাপত্রে এমনটা প্রকাশিত হয়েছে। সবমিলে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি যে মানুষের শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, তা বলাই বাহুল্য।
কোন বয়সে শরীরে কতখানি ভিটামিন ‘ডি’ প্রয়োজন। ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড (জাতীয় বিশেষজ্ঞদের একটি দল) আন্তর্জাতিক এককে (IU) জানিয়েছে সেই সীমা।
• জন্ম থেকে ১২ মাস : ৪০০ IU
• ১ থেকে ১৩ বছর : ৬০০ IU
• ১৪ থেকে ১৮ বছর : ৬০০ IU
• ১৯ থেকে ৭০ : ৬০০ IU
• তার ঊর্ধ্বে: ৮০০ IU
• গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী তরুণী ও মহিলারা : ৬০০ IU
চিকিৎসকরা বলছেন, রোদ থেকে পাওয়া ভিটামিন ডি-র কিন্তু কোনও বিকল্প নেই। তাই অসূর্যম্পশ্যা না হয়ে রোজ বরং খানিকটা রোদ মেখে নিন। সূত্র-আনন্দ বাজার পত্রিকা
বৈশাখী নিউজ/ জেপা