ভ্যাটের টাকা ঘরে বসে অনলাইনে দেয়া যাবে
প্রতি মাসে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো রিটার্ন দাখিলের পাশাপাশি মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) টাকা পরিশোধ করে থাকে। এখন থেকে অনলাইনে ভ্যাটের টাকা ব্যাংক হিসাব থেকে সরাসরি সরকারের কোষাগারে জমা দেয়া যাবে। সে লক্ষ্যে আগামী ১৬ জুলাই বৃহস্পতিবার ভ্যাট ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
ওইদিন এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
ইতোমধ্যে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের আওতায় ই-পেমেন্ট মডিউল তৈরি করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবস্থাটি গ্রাহক পর্যায়ে পরীক্ষামূলক যাচাই-বাছাই (ইউজার এক্সসেপটেন্স টেস্ট,ইউএটি) করা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক হওয়ায় আনুষ্ঠিকভাবে এটি চালু করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কাজী মোস্তাফিজুর রহমান সোমবার বলেন, এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ভ্যাটের আওতায় নিবন্ধিত ব্যক্তি নিজস্ব ব্যাংক হিসাব হতে সরাসরি ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কসহ যে কোন প্রদেয় কর সহজে, ঝুঁকিমূক্ত অবস্থায় এবং কম সময়ে সরকারি কোষাগারে পরিশোধ করতে পারবেন। ই-পেমেন্ট ব্যবস্থায় করদাতার কোন ধরনের হয়রানি থাকবে না বলে তিনি জানান।
বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বর্তমানে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এনবিআর। মূলত নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়,যা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। তবে ভ্যাট কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন সম্পন্ন না হওয়ায় এ আইনের পুরোপুরি সুফল মিলছে না বলে মনে করেন ব্যবসায়ীসহ ভ্যাট বিশেষজ্ঞরা। ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু হলে নতুন আইনের ভাল সুফল পাওয়া যাবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে শীর্ষ ১০০ প্রতিষ্ঠান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ই-পেমেন্টের সুযোগ পাবে। মোট ভ্যাটের ৩০ শতাংশ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে আসে। পরে যোগ্য সব প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হবে।
এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইনে মাসিক ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে অনলাইনে পেমেন্ট বা ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ ছিল না। দরপত্রসহ পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে এ কাজে দেরি হয়েছে। এখন সফটওয়্যারের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ায় রিটার্নের সঙ্গে ভ্যাটের টাকাও জমা দেওয়া যাবে।
এনবিআর সূত্র বলছে, ই-পেমেন্ট বা অনলাইনে ভ্যাট দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে এইচএসবিসি,প্রাইম ও মিডল্যান্ড ব্যাংকের তিনটি শাখায় কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এতে ভ্যাট পরিশোধে কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। এখন পর্যায়ক্রমে সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে এ প্রক্রিয়ার আওতায় আনা সম্ভব হবে। এ পদ্ধতির আওতায় ভ্যাট পরিশোধের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাটের চালানের কপি বাংলাদেশ ব্যাংক, সিজিএ ও ভ্যাট অফিসে চলে যাবে। এক কপি যাবে ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে। এতে ভ্যাটের হিসাবে আরও স্বচ্ছতা আসবে এবং ফাঁকির সুযোগ বন্ধ হবে।
অন্যদিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাট রিফান্ডের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্যও কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় কিছু সফটওয়্যার সেভাবে সাজানো হচ্ছে। এটাও ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভ্যাট অটোমেশনের বড় সংস্কার হিসেবে ভাবা হচ্ছে রিফান্ডকেও। অর্থাৎ ভ্যাটদাতারা নিয়ম অনুযায়ী যে রেয়াত সুবিধা পান, তা ফেরত পাওয়া। এটা এখনও ম্যানুয়াল বা প্রচলিত প্রথায় ফেরত পান ব্যবসায়ীরা। এতে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে চেক অটোমেটিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। এর জন্য অফিসে আসতে হবে না। আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ এটি সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। চলতি বছরের ডিসেম্বরে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এটা হলে অংশীজনরা যেমন উপকৃত হবেন,পাশাপাশি সরকারও লাভবান হবে বলে জানান তিনি।
ভ্যাট অনলাইনের আওতায় এ পর্যন্ত নিবন্ধন নিয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার প্রতিষ্ঠান। মাসে গড়ে একশ’ থেকে দেড়শ’ প্রতিষ্ঠান নতুন নিবন্ধন নিচ্ছে। তবে নিবন্ধন নিলেও সবাই মাসিক রিটার্ন জমা দেয় না। গড়ে প্রতি মাসে ৪২ হাজারের মত প্রতিষ্ঠান রিটার্ন দাখিল করে। অনলাইনের বাইরেও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এখনও রিটার্ন জমা নেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে ভ্যাট রিটার্ন জমা দিতে হয়। এক মাসের রিটার্ন পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জমা দিতে হয়। তা না হলে জরিমানা ও সুদ নেওয়ার নিয়ম রয়েছে আইনে। তবে করোনার কারণে আগামী কয়েক মাস সুদ মওকুফ করেছে সরকার।
বৈশাখী নিউজ/ জেপা