শিপ্রা-সিফাতকে আজ জিজ্ঞাসাবাদ করবে র‌্যাব

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) তার দুই সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ ও সিফাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে র‍্যাব। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ এমনটা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হয়ে, কোনোরকম চাপ ছাড়া পেশাদারিত্বের সঙ্গে মামলার তদন্ত কাজ করবে র‍্যাব। আমাদের এখন মূল কাজ হচ্ছে এ মামলার মোটিভ উদঘাটন করা। সে জন্য তদন্ত চলছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। এ সব থেকে বিরত থাকতে র‍্যাব আহ্বান জানাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশের আগে সেটির নিরপেক্ষতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা যাছাই সাপেক্ষে যেন প্রচার করা হয়। এরইমধ্যে ভিডিও বার্তাসহ যে সব তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে সেগুলো তদন্তসাপেক্ষে তদন্ত কর্মকর্তা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

তিনি বলেন, পুলিশের গুলিতে নিহতের ঘটনার তদন্ত র‍্যাবের কাছে আসার পর সামগ্রিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পুলিশের দায়ের করা মামলার তিনজন সাক্ষী হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের সহায়তা করেছেন বলে আলামত পাওয়া গেছে। এ কারণে সে তিনজন মো. নুরুল আমিন, আয়াজ উদ্দিন এবং নিজাম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

তিনি বলেন, র‍্যাব মূলত হত্যাকেন্দ্রিক যে ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়টির তদন্ত করছে। অর্থাৎ আনুষঙ্গিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে যেসব তথ্য আসছে এ সব বিষয়ে র‍্যাব ওয়াকিবহাল আছে।

তিনি আরও বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা বিচক্ষণতা বিবেচনায় তিনি প্রথমে সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে আসামিদের রিমান্ডে আনতে চাইছেন। তাই ঘটনার সময় থাকা দুই শিক্ষার্থী শিপ্রা এবং সিফাতের সঙ্গে র‌্যাবের যোগাযোগ হয়েছে। তাদেরকে যে কোনো সময় প্রয়োজন অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে তারা সবসময় উন্মুক্ত থাকবেন। তাদের জন্য সময় নির্ধারিত নয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর বরখাস্তকৃত ৭ পুলিশ সদস্যদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অর্থাৎ আজ থেকে তাদের রিমান্ডের সময় গণনা শুরু।

এদিকে সিনহা হত্যার সময়কার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী সিফাতের। তিনি জানান, গত ৩১ জুলাই, কক্সবাজার শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত এপিবিএন সদস্যদের তল্লাসি চৌকিতে গাড়ি থামান মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মো. রাশেদ খান। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা ছেড়ে দিলেও ড্রাম ফেলে পথ রোধ করে টেকনাফ থানা পুলিশ।

সিফাত বলেন, ‘আমাদের হাতে ট্রাইপড ছিল, সম্ভবত এটা তারা ভুল বুঝতে পারে। গাড়িতে নামার সময় আমাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না।’

মেজর (অবঃ) সিনহার সফরসঙ্গী সিফাত বলেন, ‘গাড়ি থেকে নামতেই গুলির শব্দ, তারপর মাটিতে লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য। যেন কল্পনাকেও হার মানায় সেদিনের ঘটনা।’

সিফাত বলেন, ‘উনি (সিনহা) নামার সময়ে দুই হাত উঁচু করে নামেন। এরপর আমি পিছনে চলে যাই। কিন্তু গাড়ির কারণে আমি আর কিছু দেখতে পারি নাই। যখন নামেন তখন বলেন, কাল্ম ডাউন, কাল্ম ডাউন আওয়াজ শুনতে পাই। যে অফিসার বন্দুক তাক করেছিলেন (তিনি বলছিলেন)। এর ভিতরে গুলির শব্দ শুনি। পরে দেখি সিনহা সাহেব শুয়ে পড়েন; আমি ভাবছি; হয়-তো উনার শরীরে গুলি লাগেনি। ফাঁকা আওয়াজ হয়েছে। তারপর দেখি উনার শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে।’

সিফাতের দাবি, সিনহার ব্যক্তিগত অস্ত্রটিও ছিল গাড়িতে, সিনহা নেমেছিলেন হাত উঁচু করেই।

সেদিনের পুরো ঘটনার সাক্ষী সিফাত গত ১০ আগস্ট কক্সবাজার কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। যদিও পুরো ঘটনা সবার সামনে তুলে ধরতে ক্ষানিকটা সময়ও চেয়েছেন সিনহার সঙ্গী সিফাত ও শিপ্রা।

বৈশাখী নিউজজেপা