ঢাকার ২৬টি খালের দায়িত্ব ডিএনসিসি ও ডিএসসিসিকে হস্তান্তরে সমঝোতা স্মারক

আপডেট: December 31, 2020 |

ঢাকা মহানগরীর জলবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকার ২৬টি খালের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার নিকট হতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নিকট হস্তান্তরের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান এবং দুই সিটি কর্পোরেশনের দুই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী (ডিএসসিসি) এবং মো. সেলিম রেজা (ডিএনসিসি)। এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে চীন অনেক এগিয়ে গিয়েছে। আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছেন। আমরা তার সহযোগী। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেগুলো উত্তরণের জন্যও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশের ভাগ্য বদলালে আমাদের ভাগ্য বদলাবে। তাই সবার আগে আমাদের রাজধানী ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। তারই ধারাবাহিকতার একটি কার্যক্রম হচ্ছে আজকের এই খাল হস্তান্তর অনুষ্ঠান। তিনি আরো বলেন, শুধু নগর প্রধানের খাল পরিষ্কার করলে হবে না। নগরবাসী এবং অন্য প্রতিষ্ঠানকেও একসাথে কাজ করতে হবে। ১৯৮৮ সালে ওয়াসার কাছে খাল হস্তান্তর করা হয়। তবে তখন ওয়াসা খালের কার্যক্রমের ব্যাপারে সন্দিহান ছিল। পরবর্তীতে দেখা যায়, এটা আসলে থাকা উচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে। ফলে আজ ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নিকট খাল হস্তান্তরের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস তার বক্তব্যে বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। গত বর্ষা মৌসুমে যখন জলাবদ্ধতা ঢাকাকে গ্রাস করছিল তখন থেকেই আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামী ২ জানুয়ারি থেকে খালের ব্যাপারে আমাদের বিশাল কর্মযোগ্য আরম্ভ হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা জিরানী খাল, মান্ডা খাল, শ্যামপুর খাল এবং পান্থপথ ও সেগুনবাগিচা কালভার্টে থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ হাতে নিয়েছি। আগামী মার্চের মধ্যে আমরা এই পাঁচটি জায়গা পরিষ্কার করবো। বাকিগুলো জুন নাগাদ করবো। আজকের সমঝোতা স্বারক সাক্ষরের দিনটিকে একটি ঐতিহাসিক দিন আখ্যা দিয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা বসে নেই। আমরা নিজ অর্থায়নে কাজ শুরু করছি। মন্ত্রণালয়ের আশায় বসে থাকলে সময় বেশি লাগবে। আমরা যদি খালগুলো দখলমুক্ত করতে পারি এবং ঢাকাকে একটি নান্দনিক রূপ দিতে পারি তাহলে ঢাকা হবে আরেক ভেনিস। সারা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের আশার জায়গা ঢাকা। আমরা সেই ঢাকাকে সাজাতে চাই। আমাদের কাঁধে সেই দায়িত্ব। আমরা এ ব্যাপারি সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

এসময় শেখ তাপস খাল হস্তান্তরের বিষয়ে  স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

এদিকে ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, এক সময় রাজধানীর বুকে বয়ে যেতো শতাধিক খাল। সেই খালের কারণেই অনায়াসে বৃষ্টির পানি নেমে যেত। জলাবদ্ধতা তৈরি হতো না। কিন্তু কালের গর্ভে সেসব খাল আজ অতীত ইতিহাস। আজকে সেই খাল নেই। একটি শহরের ১২ শতাংশ জলাশয় থাকা দরকার। কিন্তু আমাদের দেশে সবল খাল আজ দখলপ্রায়। তাই অনতিবিলম্বে খালের সীমানা নির্ধারণ করে তার দুই পাড়ের অবৈধ স্থপনা উচ্ছেদ করতে হবে। আমরা দুই মেয়র সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। আজ তারই ধারাবাহিকতায় সিটি কর্পোরেশনকে খালে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। আমি খালের মধ্যে তোষক, জাজিম, ফ্রিজ, টেলিভিশন পাওয়ার কথা উল্লেখ করে মেয়র আরো বলেন, প্রতি বছর গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল তিন ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। এটা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি অশনি সংকেত। তাই কীভাবে খালগুলোর ধারণক্ষমতা বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি নদীর সাথে খালগুলোকে কীভাবে সংযুক্ত করা যায় সেটা নিয়েো আমাদের পরিকল্পনা আছে। এসময় তিনি ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন পরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরেন।

 

বৈশাখী নিউজবিসি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর