কারা আইন সময়োপযোগী করতে সরকার গুরুত্বের সাথে কাজ করছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

আপডেট: February 17, 2021 |

বিদ্যমান কারা আইন আধুনিক ও সময়োপযোগী করতে সরকার গুরুত্বের সাথে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বুধবার পুরাণ ঢাকার কারা কনভেনশন সেন্টারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কারামুক্ত বন্দিদের মাঝে জীবিকায়ন সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন এর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগ) ড. তরুণ কান্তি শিকদার, বাংলাদেশস্থ জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ,বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন,অতিরিক্তি কারা মহাপরিদর্শক কর্ণেল আবরার হোসেন,রুল অব ল প্রোগ্রামের প্রধান প্রমিতা সেনগুপ্ত, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি রফিকুল আলম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন এর স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টর-এর পরিচালক ইকবাল মাসুদ।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কারা আইনকে সংশোধন করে আধুনিক ও সময়োপযোগি আইন হিসেবে প্রণয়নের উদ্যোগ হিসেবে কারা অধিদপ্তর এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশ প্রিজন্স এন্ড কারেকশনাল সার্ভিসেস এ্যাক্ট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে সহায়তার জন্য জার্মান সরকার ও বৃটিশ সরকারকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

এজন্য তিনি চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আহ্বান জানান। মন্ত্রী বলেন,কারাগার হবে সংশোধনাগার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কারাবন্দিদের অপরাধ প্রবণতা থেকে মুক্ত করে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ কারা অধিদপ্তর বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তারই ধারাবাহিকতা অঅজকের এ আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় কারাগারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বন্দিসহ কারা কর্মকর্তাদের মানবিক এবং প্রশাসনিক বিষয়সমুহ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের কারা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, বন্দিদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনসহ যথাযথ আইনের পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। এরই অংশ হিসেবে আজ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কারামুক্ত বন্দিদের মাঝে জীবিকায়ন সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, আজকের গৃহীত উদ্যোগটি বাংলাদেশ কারা বিভাগের সংশোধনাগারের পরিণত হবার পথে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। কারাভ্যন্তরে বন্দিদের যথাযথ প্রশিক্ষণের বিষয়ে আমরা গুরুত্বরে সাথে সহযোগিতা প্রদান করছি। প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারীত্ব কারাভ্যন্তরে ও সমাজে কারাবন্দিদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকে সফল করতে পারে।

জার্মানী এই সহযোগিতায় যুক্তরাজ্য সরকারের পাশে থাকতে পেরে আনন্দিত। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আইন সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে আমরা বাংলাদেশ সরকারের পাশে আছি।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান বাংলাদেশের কারাবন্দি এবং তাঁদের পরিবরের সদস্য যারা যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও বাংলাদেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব থেকে উপকৃত হচ্ছেন তাঁদের জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনাকে উদযাপন করছে। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম সহযোগী যুক্তরাজ্য সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার বিষয়ক কাজে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

আমি আনন্দিত যে সমাজে নিজেদের টেকসইভাবে পুনর্বাসিত করতে অনেক মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিরা এই যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে জীবন-জীবিকার সহায়তা পাবে। আমাদের এই যৌথ প্রকল্পটি যেভাবে বাংলাদেশের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে কোভিড-১৯ অতিমারীর চ্যালেঞ্জ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে তা দেখেও আমি সন্তুষ্ট। ড.তরুণ কান্তি শিকদার বলেন, কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তরে যথাযথ জনবল নিয়োগ, দক্ষতাবৃদ্ধি, বাজেট বরাদ্দ, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ যাবতীয় প্রশাসনিক বিষয় সমূহকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করছে।

রুল অব ল প্রোগ্রামের প্রধান প্রমিতা সেনগুপ্ত বলেন,ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার মানোন্নয়ন, যথাযথ আইনের সংস্কার, কারা সংস্কারসহ ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সাথে জিআইজেড যৌথভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন,শতকরা ৩৫ ভাগ কারাবন্দি মাদকনির্ভরশীল। যা একটি অসুস্থতা, এজন্য চিকিৎসা প্রয়োজন।

সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমুহের সাথে অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে চিকিৎসা, কাউন্সেলিং ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসকল বন্দিকে পুনর্বাসন করতে পারলে কারাগারের বন্দিসংখ্যাও হ্রাস হবে।

উল্লেখ্য,করোনাকালীন গৃহীত সহায়তা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে কারা অধিদপ্তর ও জিআইজেড এর প্রকল্প বাস্তবায়নকারি সংস্থা ঢাকা আহছানিয়া মিশনের যৌথ উদ্যোগে সেলাই মেশিন,ইলেক্ট্রনিক টুলবক্স, ভাসমান টি স্টলের জন্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন জীবিকায়ন সামগ্রী নিয়মিতভাবে বিতরণ করা হয়। রুল অব ল’ প্রোগ্রাম বাংলাদেশ সরকার এবং ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানীর একটি যৌথ উদ্যোগ।

সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে এ প্রোগ্রামটি বাস্তবায়নে কারা অধিদপ্তরকে কারিগরি সহায়তা করছে জিআইজেড। আর অর্থ সহায়তা করছে জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিএমজেড) এবং ব্রিটিশ সরকারের ফরেন, কমনওয়েলথ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও)। বিচার ব্যবস্থা এবং কারাগার সংস্কারের বিশেষ করে বিচারাধীন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, কারাগারে বন্দিসংখ্যা হ্রাস করে ন্যায়বিচারে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের ২৬টি জেলায় সহযোগি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

বৈশাখী নিউজইডি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর