ভাঙচুরের মামলায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার (১৯ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
রিমান্ড শুনানি চলাকালে বিচারক মামুনুলকে বলেন, ‘আপনার কী কিছু বলার আছে।’ জবাবে মামুনুল বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি প্রতি রমজান মাসে ছয় বার কোরআন শরীফ খতম দেই। রমজান মাস পবিত্র মাস। এই মাসে আমি যেন রোজা, নামাজ ও কোরআন পড়তে পারি তার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আবেদন করছি।’
এর আগে বেলা ১১টা ৯ মিনিটের দিকে মোহাম্মদপুর থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) সাজেদুল হক হেফাজত নেতা মামুনুলকে আদালতে হাজির করেন। একই সঙ্গে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এসময় আসামি মামুনুলের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের এ আদেশ।
মোহাম্মদপুর থানার এ মামলায় মারধর, হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাতে গুরুতর জখম, চুরি, হুমকি ও ধর্মীয় কাজে ইচ্ছাকৃতভাবে গোলযোগের অভিযোগ এনে স্থানীয় এক ব্যক্তি ২০২০ সালে মামুনুলের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করেন।
রবিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর ১২ টা ৫০ মিনিটের দিকে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ।
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র রাজধানীর বিভিন্ন থানাতেই ১৭টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগে তদন্তাধীন আটটি মামলা, লালবাগ বিভাগে তদন্তাধীন দুটি মামলা ও তেজগাঁও বিভাগে তদন্তাধীন একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হেফাজত নেতা মামুনুল হক।
এ ছাড়া মতিঝিল থানায় তদন্তাধীন একটি ও পল্টন থানায় তদন্তাধীন চারটি মামলায় তার নাম রয়েছে। উল্লিখিত ১৬টি মামলার মধ্যে ১৫টিই হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের পর। ওই ১৫ মামলার বাদী পুলিশ। ১৬ মামলার অন্যটি সম্প্রতি পল্টন থানায় দায়ের করেন যুবলীগের এক নেতা। জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররম এলাকায় পুলিশ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে হোফজতের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের পর মামুনুলের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। ১৭ নম্বর মামলাটি হলো মোহাম্মদপুর থানার মামলা।
এর আগে, রবিবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরর নজরদারিতে ছিলেন।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ২০২০ সালে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হামলা-ভাঙচুরের মামলায় মামুনুলকে প্রথম গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বের নাশকতার ঘটনায় ঢাকায় সাতটিসহ ৩৩টি মামলার আসামি তিনি। আগেও দুবার গ্রেপ্তার হয়েছেন মামুনুল। সম্প্রতি পল্টন, মতিঝিল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সোনারগাঁসহ কয়েকটি থানার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। ২০১৩ সালের একটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাঁকে গ্রেপ্তার দেখাবে।
বৈশাখী নিউজ/ জেপা