দেশে কাক-কোকিল চেনা বড় দুষ্কর: নানক

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আজকের বাংলাদেশে কাক ও কোকিল চেনা বড় দুষ্কর। আমরা চিহ্নিত করতে পারছি না কে আপন কে পর। সাদা আর কালো মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। সামনে যত ষড়যন্ত্রই থাকুক ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে নেত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে হবে।

শুক্রবার (১৬ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

১/১১-এর সময়ে যুবলীগের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে থাকা জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, এ দিনটি আমাদের চেতনার জায়াটিতে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মনে করিয়ে দেয় সেদিনের দৃশ্যপট। ২০০১ থেকে ২০০৫ সালে একটি সরকার ক্ষমতায় ছিল। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার দায়িত্ব নিয়ে ওই সরকার গঠিত হয়েছিল। দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলে পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশমাতৃকাকে নিয়ে আসার জন্য একটি সরকার গঠিত হয়েছিল।

এ দেশে সেদিন বিএনপি-জামায়াতের একটি সরকার গঠন হয়েছিল। যে সরকারের প্রধান লক্ষ্য ছিল, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যেভাবে এই দেশ থেকে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল ঠিক একই দায়িত্ব নিয়ে আবার আবির্ভূত হয়েছিল এই বিএনপি-জামাত খালেদা নিজামী তারেকরা।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সেদিন আমাদের লড়াইয়ের লক্ষ্য ছিল, শেখ হাসিনার লড়াইয়ের লক্ষ্য ছিল এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা কায়েমের জন্য। কিন্তু ষড়যন্ত্র কখনো থেমে থাকে না। ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এখানে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ভাই উপস্থিত নেই। যদি তার কথা না বলি তাহলে কৃপণতা করা হবে। সেদিন মায়া ভাইয়ের নেতৃত্বে মহানগর আওয়ামী লীগ বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। আমরা সেদিন লড়াই করেছিলাম।

কিন্তু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা, দলের ভিতরের ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের মতোই আরেকটি দৃশ্যপট দেখা গেল বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। শেখ হাসিনাকে জনগণের নেত্রী হতে দেওয়া যাবে না। সেই কারণেই একটি অঘটন ঘটন পটিয়সীরা সেদিন এক/এগারোর অঘটন ঘটিয়ে আমাদের অনিবার্য বিজয়কে সেদিন বাধাগ্রস্ত করেছিল।

নেত্রীর কারাবন্দি দিবসের স্মৃতিচারণ করে নানক আরও বলেন, আজকে ১৬ জুলাই। তার মাত্র ১১ দিন আগে নেত্রী আমাদেরকে সিগনাল দিলেন। আমাকে আর মির্জা আজমকে। ডিপ আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাও। প্রয়োজনে ১০০ হাত মাটির নিচ দিলে হলেও বের হয়ে যাও, তোমাদেরকে কিন্তু ক্রসফায়ার করবে।

১৬ জুলাই শেখ হাসিনার গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে ফোন করার স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও বলেন, নানক আজম আমি চলে যাচ্ছি। আমি একটি চিঠি রেখে যাচ্ছি দেশবাসীর জন্য। এই চিঠিটি সারা বাংলাদেশে প্রচার করবে, আমাদের কর্মীদেরকে পৌঁছে দেবে। তিনি আরেকটি কথা বলেছিলেন, এটাই হয়ত তোমাদের সঙ্গে আমার শেষ কথা। আমাকে কী করবে আমি জানি না। তবে বিশ্বাসঘাতকতার আর কী দেখেছ? আজকে আমার গ্রেফতারের পরে দেখবা আমার আওয়ামী লীগের নেতারা কি পরিমাণ বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে সেটিই তোমরা দেখবা। তবে সতর্ক থাকো। আমি তোমাদের ওপর অর্থাৎ কর্মীদের ওপর ভরসা রেখে চলে গেলাম।

গণতন্ত্র অর্জন করা যেমন সহজ, গণতন্ত্রকে রক্ষা করা তারচেয়ে অনেক অনেক কঠিন মন্তব্য করে নানক আরও বলেন, গণতন্ত্র অর্জন করা যত কঠিন, তার চেয়ে অনেক কঠিন গণতন্ত্রকে রক্ষা করা। নেত্রী ওই কারাগারে গিয়ে যখন আদালতে হাজির করে সেই আদালতে গিয়েও নেত্রী তার আদালতের উদ্দেশ্যে যে বক্তব্য রেখেছিল, সেই বক্তব্য ছিল সেনা শাসকদের ওপর একটি চপেটাঘাত।

তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার লেখা চিঠিটি পড়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগকে আমি স্যালুট জানাই। আপনারা শত বাধা বিপত্তির মুখে, শত প্রতিকূলতার মুখেও কিংস পার্টি গঠন হচ্ছিল তার মধ্যেও ২৫ লাখ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন নেত্রীর মুক্তির জন্য।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভার্চুয়ালি তিনি তার সরকারি বাসভবন থেকে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমসহ মহানগর নেতারা। সভা পরিচালনা করেন মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

বৈশাখী নিউজ/ জেপা