কবিগুরুর ৮১তম মৃত্যুদিবস আজ

আপডেট: August 6, 2021 |

 

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮১তম মৃত্যু দিবস আজ।

৮০ বছর আগে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এইদিনে তিনি কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি গানে, কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে, ছবিতে প্রবলভাবে রয়েছেন আমাদের মাঝে।

তিনি মৃত্যুকে বন্দনা করেছেন এভাবে- ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান। মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট! রক্ত কমলকর, রক্ত-অধরপুট, তাপ বিমোচন করুণ কোর তব মৃত্যু-অমৃত করে দান।’

রবীন্দ্রনাথ কি বুঝতে পেরেছিলেন, শ্রাবণের ভরা বর্ষার মধ্যেই তার জীবনের সমাপ্তি ঘনিয়ে আসবে? রবীন্দ্রনাথ প্রয়াত হওয়ার আগেই প্রয়াণ উপলব্ধি করেছেন নানাভাবে। আমরা তার কাব্যে মৃত্যুর প্রতিধ্বনি শুনেছি বারবার। তিনি মৃত্যুকে বড় গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন মাত্র একচল্লিশ বছর বয়সে প্রিয়তমা স্ত্রীর বিয়োগে। কবি যখন দূরে থাকতেন স্ত্রী মৃণালিণী দেবীকে ‘ভাই ছুটি’ সম্বোধন করে চিঠি লিখতেন। কবির সেই ‘ছুটি’ যখন সংসার জীবন থেকে সত্যিই একদিন ছুটি নিয়ে চলে গেলেন, তার বয়স তখন মাত্র ঊনত্রিশ। কিশোর বয়সে হারান বন্ধুপ্রতিম বৌদি কাদম্বরী দেবীকে।

রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশ ও ভারত- দু’দেশের মানুষের প্রাণের কবি। তার লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…` গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীতও তার লেখা।

কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদাসুন্দরী দেবীর চতুর্দশ সন্তান রবীন্দ্রনাথের জন্ম ১২৬৮ বঙ্গাব্দের পঁচিশে বৈশাখ।

রবীন্দ্রনাথ কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী, গল্পকার- সবগুলো শৈল্পিক গুণের সমন্বিত এক বিস্ময়কর প্রতিভা। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন।

প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয় ১৮৭৮ সালে। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘গীতাঞ্জলী’। এই কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে কবি কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে জমিদারী তদারকিতে ছিলেন। যা বাংলাদেশের এক আলোকোজ্জ্বল অধ্যায়। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন।

বাঙালির প্রতিটি আবেগ অনুভবে জড়িয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩০-এর দশক থেকেই রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। জীবনের শেষ চার বছর তিনি বেশ অসুস্থ ছিলেন। ১৯৩৭ সালে তিনি একবার গুরুতর অসুস্থ হন। এর পর কিছুটা সুস্থ হলেও ১৯৪০ সালে তার অসুস্থতা বেড়ে যায়। তিনি শেষ জীবনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘনঘটা এবং মানবতার সংকট দেখে দুঃখিত হন। তবু তিনি মানবতার জয়ে আস্থা হারাননি। ১৯৪১ সালে শেষবারের মতো শান্তিনিকেতন থেকে জোড়াসাঁকোর প্রাসাদে চলে আসতে হয় অসুস্থ কবিকে। মৃত্যুর সাত দিন আগেও কবিতা লিখেছেন তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারির প্রেক্ষাপটে প্রয়াণদিবসে এবারও কবিগুরুকে ভিন্ন আঙ্গিকে স্মরণ করা হবে। কবিগুরুর মহাপ্রয়াণ দিবসে থাকছে না বরাবরের মতো আয়োজন। কবিগুরুকে বছরের পর বছর তার প্রয়াণদিবসে বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন ভিন্ন আয়োজনে স্মরণ করলেও দুই বছর ধরে মহামারি পাল্টে দিয়েছে সবকিছু। সশরীরে বড় কোনো আয়োজন নেই। তবে আজ (শুক্রবার) ভার্চুয়ালি নানা আয়োজনে কবিগুরুকে স্মরণ করা হবে।

বিকেল ৪টায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে অনলাইন মাধ্যমে আলাচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে ‘পূর্ববঙ্গ থেকে বাংলাদেশ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল ও অধ্যাপক অনীক মাহমুদের।

রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করবেন শিল্পী অদিতি মহসিন এবং রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে আবৃত্তি পরিবশেন করবেন বাচিকশিল্পী রুবীনা আজাদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানটি বাংলা একাডেমির ফেইসবুক পেইজে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

এদিকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ‘শ্রাবণের আমন্ত্রণে’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রচার করবে ছায়ানট। শুক্রবার রাত ৯টায় ছায়ানটের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে এই অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা।

বৈশাখী নিউজ/ এপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর