আক্কেলপুরের আনোয়ার ইঁদুর মেরে পেয়েছেন কৃষি অধিদপ্তরের পুরস্কার

আপডেট: May 17, 2023 |
print news

দেব্রত মণ্ডল, আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার আনোয়ার হোসেন (৫৭) দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারে ইঁদুর মারার ওষুধ বিক্রি করে থাকেন।

একই সঙ্গে তিনি ইঁদুর ধরা ও ইঁদুর মারার কাজও করেন। স্থানীয়রা তাকে ‘ইঁদুরম্যান’ হিসেবে ডাকেন।

প্রতিবছর কৃষি অফিসে ১০ থেকে ১২ হাজার ইঁদুরের লেজ জমা দিয়ে নগদ টাকা ও উপহার সামগ্রি পান আনোয়ার।

আনোয়ার হোসেনের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের নুরনগর গ্রামে।

তার বাবার নাম আব্দুল জব্বার। তার সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

লালমনিরহাট শহরের ডালপট্টি এলাকা থেকে তিনি বলেন, ‘আমি মাসে দুবার বাড়িতে যাই। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে ঘুড়ে বেড়াই। ইঁদুর মারার ওষুধ বিক্রি করি।

এভাবে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়।’ ‘কৃষকরা আমাকে ডেকে নিয়ে যান ইঁদুর ধরার জন্য।

আমি কৃষকের ফসলের ক্ষেত ও বাড়ি থেকে ইঁদুর ধরে মৃত ইঁদুরের লেজ সংগ্রহ করি। এতে কৃষকরা খুশি হয়ে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পযর্ন্ত বকশিশ দিয়ে থাকেন,’ বলেন আনোয়ার।

১৬ বছরে বয়স থেকে ইঁদুর ধরেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইঁদুর ধরার জন্য কোনো মন্ত্র পড়ি না। শুধু কৌশল অবলম্বন করি। দীর্ঘদিন ইঁদুর ধরতে ধরতে অভ্যস্থ হয়ে গেছি।

ইঁদুর আমার কাছ থেকে দূরে পালাতে পারে না।’ ‘আমাকে লোকজন এখন ‘ইঁদুরম্যান’ বলে ডাকেন।

এতে আমি অখুশি কিংবা বিরক্ত হইনি বরং খুশি হই। এ নামে ডেকে লোকজনও খুশ হন।’

আনোয়ার বলেন, ‘আমি প্রতিবছর আক্কেলপুর কৃষি অফিসে ১০-১২ হাজার ইঁদুরের লেজ জমা দেই। এতে কৃষি অফিস আমাকে নগদ টাকাসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রি দিয়ে থাকে।

জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযানে অংশগ্রহণ করে কৃষি অধিদপ্তর থেকে কয়েকবার জাতীয় পুরস্কার ও সনদ পেয়েছি।’

‘ইঁদুর ফসলের ও বাড়ির আসবাবপত্রের অনেক ক্ষতি করে। গ্রামের কৃষি পরিবারগুলো ইঁদুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ থাকে।

আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা অসংখ্য কৃষি পরিবারকে এই যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করেছে। আমি এতে খুশি,’ আনোয়ার বলেন।

আনোয়ার হোসেন জানান, ছোটবেলায় গ্রামে কৃষি জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিনি ইঁদুর নিধন কাজে জড়িয়ে পড়েন।

ধীরে ধীরে ইঁদুর নিধন তার পেশায় পরিণত হয়েছে। এ কাজ করে তিনি পরিবারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। বসতভিটা করেছেন। কিনেছেন কিছু আবাদি জমিও।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খোচাবাড়ি গ্রামের কৃষক মন্টু মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার পরিবার ইঁদুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।

পরে আনোয়ারকে বাড়িতে ডাকলে তিনি সবগুলো ইঁদুর ধরে মেরে ফেলেন। এ ছাড়া আমার ফসলের ক্ষেতের ইঁদুর ধরেও মেরে ফেলেন আনোয়ার।’

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামিম আশরাফ বলেন, ‘ইঁদুর ফসলের জন্য খুব ক্ষতিকর প্রাণী।

প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে ফসল ইঁদুরের পেটে চলে যায়। প্রতিবছরই ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালিত হয়।

উত্তরাঞ্চলে ইঁদুর নিধনে সেরা অবস্থানে রয়েছে আনোয়ার হোসেন। তিনি ইঁদুর নিধন করে কৃষি পরিবারের অনেক উপকারে আসছেন।’

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর