দীর্ঘ এক মাস ধরে বন্ধ কুবি: সেশনজটের শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা

আপডেট: May 31, 2024 |
inbound8319454371919300937
print news

কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) উপাচার্য-শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বের দীর্ঘসূত্রিতায় বিগত একমাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম।

পুরো ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে অচলাবস্থা।  একে একে স্থগিত হয়েছে বিভাগগুলোর চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো।

এই সংকট মুহুর্তে ক্যাম্পাস কবে খুলবে নেই কোন নিশ্চয়তা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেশনজটের শঙ্কা। তাদের দাবি, আমাদের ভবিষ্যত যে হুমকির মুখে সেটার দায়ভার নিবে কে?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩০ এপ্রিল এক জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সূত্রে জানা যায়, উপাচার্য-শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বের ফলস্বরূপ বিগত দিনগুলিতে অন্তত আটটি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে।

তাছাড়া বিভাগুলো থেকে সংশোধিত হয়ে আসা চূড়ান্ত পরীক্ষার নোটিশ গুলোও প্রকাশ স্থগিত রয়েছে। পাশাপাশি আটকে আছে অনেক বিভাগের রেজাল্টও।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে উপাচার্য-শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে প্রায় দুইমাসের অধিক সময় জুড়ে অনিয়মিত ছিলো শিক্ষা কার্যক্রম।

আমাদের ভবিষ্যতকে জিম্মি করে উনারা উনাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজনীতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। ফলশ্রুতিতে একমাস যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ।

শিক্ষার্থীরা খুব শীঘ্রই সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে। এটার দায়ভার কে নিবে?

এই বিষয়ে ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাইমুল ইসলাম শুভ বলেন, ‘অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি।

এভাবে একমাস সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, এর আগে আরো কয়েক দফা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, এভাবে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আমাদের ঠেলে দিচ্ছে উনারা। এভাবে পড়াশোনা চলতে পারে না।

বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হোক। উনাদের সমস্যাগুলো উনাদেরই বুঝতে হবে। আমরা কেন এটার জন্য ভুগবো?’

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিমা আক্তার বলেন, ‘প্রায় একমাস হলো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। আমরা সম্ভবত খুব দ্রুতই সেশনজটে পড়তে যাচ্ছি।

বন্ধে পরীক্ষা, মিডটার্ম, এসাইনমেন্ট সব স্থগিত। এসবের দায় তো আর কেউ নিবে না৷ আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত খুলে দেওয়া হোক। আর কত ঘরে বসে থাকবো?’

শুরু থেকেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে আসছিলো বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি। একপর্যায়ে গত ১৩ মার্চ সাধারণ কার্যনির্বাহী সভায় তারা সাত দফা দাবি উত্থাপন করে।

পরবর্তীতে সিন্ডিকেট সভা ডেকে প্রশাসন কর্তৃক সেই সাতটির চারটি পূরণ করা হয়েছিলো বলে জানায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন।

কিন্তু শিক্ষক সমিতি জানায়, তাদের দাবিগুলো যথার্থভাবে মানা হয়নি। পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত বলে দাবি তাদের।

এদিকে ২৮ এপ্রিল নিজ কার্যালয়ে প্রবেশের সময় উপাচার্য-শিক্ষক সমিতি এবং ছাত্রলীগের মধ্যকার হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ও সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থীর দ্বারা শিক্ষকরা হামলার শিকার হন।

শিক্ষক সমিতির দাবি, শিক্ষকদের উপর এই হামলার প্রকাশ্য মদদদাতা হচ্ছেন উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ স্বয়ং। সেই সুবাদে তারা সাত দফা দাবি ত্যাগ করে উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগ চেয়ে এক দাবি ঘোষণা করে।

সেই দাবিতে এখন পর্যন্ত তারা ১৪ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু তাহের জানান, ‘উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ না করা অবধি তাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’

গত ২৮ তারিখ শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদ স্বরূপ অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল প্রকার একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি।

এর আগেও তারা দাবি আদায়ে দফায় দফায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আসছিলো। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় চালু অবস্থায়ই সকল কার্যক্রম অচল হওয়ার সম্মুখীন হয়।

এদিকে শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদে গত ৩০ এপ্রিল দুপুরের দিকে শিক্ষক সমিতি মানববন্ধন করে।

মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান উপাচার্য ড. এএফএম আবদুল মঈনকে ‘ক্যাসিনো মঈন’ ‘আমদানিকৃত পঁচা মাল’ ‘নারী নির্যাতক’ ‘ডাস্টবিন’ ‘প্রশাসনিক প্রতারক’ ইত্যাদি বলে সম্বোধন করেন। ক্যাম্পাস শিক্ষক সমিতির কার্যক্রমে উত্তাল হয়ে উঠে।

এমতাবস্থায় গত ৩০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি এবং চলমান সংকট নিরসন বিবেচনায় জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে অনির্দিকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং আবাসিক হলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করে।

এরপর থেকেই স্থবির হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম। কবে নাগাদ খুলছে বিশ্ববিদ্যালয়, নেই কোন নিশ্চয়তা।

এই বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘উপাচার্য সিন্ডিকেট ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিক। তারপর আমরা সাধারণ সভা ডেকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, সেটাই গ্রহণ করবো। আমরাও ক্লাসে ফিরতে চাই। সেজন্য আগে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে হবে।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, ‘আমরা দুই এক দিনের মধ্যে সিন্ডিকেট ডাকার চেষ্টা করবো। সিন্ডিকেটে পরবর্তী সিধ্যান্তের ব্যাপারে আলোচনা করবো।’

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর