জাতিসংঘের সংস্থায় ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞা


জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তা সংস্থাকে ইসরায়েলে নিষিদ্ধ করেছে দেশটির সরকার। সোমবার স্থানীয় সময় ইসরায়েলি পার্লামেন্টে ফিলিস্তিনিদের জন্য কাজ করা জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তা সংস্থা ইউনাইটেড ন্যাশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি বা ইউএনআরডব্লিএ নিষিদ্ধ করে একটি বিল পাস করেছে।
এর ফলে ইউএনআরডব্লিউএ কর্মীদের সঙ্গে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের যোগাযোগও নিষিদ্ধ হবে; তাতে গাজা ও ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ সংস্থাটির কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
বিবিসি লিখেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছাতে গাজার সব সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ইউএনআরডব্লিউএ’র সহযোগিতা অপরিহার্য। সেখানকার ভূমিতে কাজ করা জাতিসংঘের প্রধান সংস্থা এটিই।
নতুন আইনের কারণে ইসরায়েলের ভেতরে ইউএনআরডব্লিউএ কর্মীদের আর আইনি দায়মুক্তি থাকবে না এবং পূর্ব জেরুজালেমে সংস্থাটির সদরদপ্তর বন্ধ হয়ে যাবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এই আইনগুলো বাস্তবায়ন হলে তা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসন এবং সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হবে।
ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, এ আইনগুলো ফিলিস্তিনিদের ভোগান্তিকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি একে ‘সম্পূর্ণ ভুল’ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, নতুন আইন ফিলিস্তিনিদের জন্য ইউএনআরডব্লিউএর প্রয়োজনীয় কাজকে অসম্ভব করে তুলবে, গাজায় পুরো আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাকে বিপন্ন করবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজায় মানবিক ত্রাণ বিতরণে জরুরি ভূমিকা পালন করেছে ইউএনআরডব্লিউএ। ২০ লাখের বেশি মানুষের এই ছিটমহলের প্রায় সবাই সংস্থাটির ত্রাণ ও সেবার ওপর নির্ভরশীল।
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ইউএনআরডব্লিউএ কর্মীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেট সোমবার সন্ধ্যায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নিষেধাজ্ঞার দুটি বিলে অনুমোদন পায়। বিলটি উপস্থাপনের সময় নেসেটের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা কমিটির চেয়ারম্যান ইউলি এডেলস্টেইন ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঢাল’ হিসেবে ইউএনআরডব্লিউকে ব্যবহারের অভিযোগ করেন।
তিনি পার্লামেন্টে বলেন, সন্ত্রাসী সংগঠন (হামাস) ও ইউএনআরডব্লিউর মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং ইসরায়েল এটি সহ্য করতে পারে না।
ইউএনআরডব্লিউএ কয়েক দশক ধরে গাজার লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেবা ও সহায়তা দিয়ে আসছে।
গত বছর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সংস্থাটির উপস্থিতি বেসামরিক নাগরিকদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। গাজার প্রায় সবাই বাসিন্দাই বেঁচে থাকার জন্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ফলকার টুর্ক শুক্রবার বলেছেন, “ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী পুরো জনগোষ্ঠীকে বোমা হামলা, অবরোধ ও অনাহারের ঝুঁকিতে ফেলছে।”
অনেক ফিলিস্তিনি মনে করেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার উত্তরে ‘আত্মসমর্পণ কর অথবা মর’ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে; যার ফলে আনুমানিক চার লাখ মানুষ দক্ষিণে বাস্তচ্যুত হচ্ছে। এরপর উত্তরে থাকা হামাস যোদ্ধাদের অবরোধ করা হবে।