শহীদ মিনারে গৃহকর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত


আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২৪ উপলক্ষ্যে কর্মজীবী নারী ও গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম, বাংলাদেশ আয়োজিত “গৃহকর্মী সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান”কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল রবিবার এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় ।
সারা বিশ্বব্যাপী স্থান, কাল ও ক্ষেত্র ভেদে নারী ও শিশুর প্রতি সকল ধরনের যৌন নির্যাতন, হয়রানি ও সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ হিসেবে পালন করে আসছে। এ বছর এই কার্যক্রমের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, “নারী-কন্যার সুরক্ষা করি, সহিংসতা মুক্ত বিশ্ব গড়ি ।”
বাংলাদেশে গৃহকর্ম পেশাটি এখনও আমাদের দেশে সম্মানজনক কোন পেশা হিসেবে স্বীকৃত নয় এবং গৃহকর্মীরা শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এ ও অন্তর্ভূক্তি নয়। ফলে গৃহকর্মীরা শ্রমিকের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং গৃহকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে থাকে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সৈয়দ সুলতানুদ্দিন আহমেদ, শ্রম সংস্কার প্রধান বলেন, গৃহকর্মীরা প্রমান করেছে যে এখন তারা , ঘর থেকে বের হয়ে সংগঠিত হতে পারে ও শক্তি অর্জন করতে পারে।গৃহকর্মী হাত শুধু সেবা করে না, মুষ্টি বদ্ধ হয়ে দাবি ও জানাতে পারে।এমনভাবে দাবি জানাতে হবে সরকার যাতে আইনের স্বীকৃতির দেওয়ার জন্য নিজ উদ্দ্যোগে গৃহকর্মীদেও আলোচনায় বসতে বাধ্য হন ।
গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম, বাংলাদেশ – এর সভাপতি, জাকিয়া সুলতানা বলেন, ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক নারী নিযার্তন প্রতিরোধ পক্ষ পালন করা হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে পালিত হলেও নারীরা এখনো নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের নিযাতির্ত নারীর মধ্যে বেশি ভাগই গৃহকর্মী। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির সুষ্ঠু পদ্ধতি প্রবর্তন ও ১(ণ) ধারা বাতিল করে শ্রম আইনে গৃহকর্মীদের অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান।
কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তরের লেবার ইন্সপেক্টর ইফ্ফাত আরা বলেন, যদিও আমরা শ্রম আইন বাস্তবায়ন করি, গৃহকর্মীরা শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত নয় বিধায় গৃহকর্মীদের নিয়ে কাজ করা যাচ্ছে না। আশা করা যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই শ্রম আইনের সংস্কার হবে, গৃহকর্মীরা শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে । নির্যাতন প্রতিরোধের শিক্ষা পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ জাতীয় পর্যায়ে ২১ জনের সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় গৃহকর্মী ফোরাম বাংলাদেশ গঠিত হয় । যারা সারা বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছেন ,লড়ছেন অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে । আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে,চার টি স্টলে গৃহকর্মীদের কর্মসংস্থানের মেলা আয়োজন করা হয় । যেখানে অনাবাসিক গৃহকর্মীর নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গৃহকর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্যস্ত শহরের গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান না থাকায় নিয়োগকারীদের বিভিন্ন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেই লক্ষ্যে সুনীতি প্রকল্পের জব প্লেসমেন্ট অফিসাররা গৃহকর্মী ও নিয়োগকারীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গৃহকর্মীদের নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন। সুনীতি প্রকল্প থেকে গৃহকর্মীদের প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। তার যাতে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক গৃহস্থালি যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে পারে।শহরের ব্যস্ত জীবনের একজন দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও দায়িত্বশীল গৃহকর্মী হয়ে উঠতে পারে পরিবারের একজন সহকর্মী ।
সম্মেলনে আরো আলোচনা করা হয়, গৃহকর্মী শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃত না হওয়ায়, তারা যৌন হয়রানি, নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনার বিরুদ্ধে উপযুক্ত বিচার পান না এবং অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে এসে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারেন না। গৃহকর্মী শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃত হওয়া, এখন সময়ের দাবি । এর মাধ্যমে গৃহকর্মীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত, গৃহকর্মীর কাজের মর্যাদা,সম্মান ও পারিশ্রমিক নিশ্চিত হবে এবং নিশ্চিত হবে তাদের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র ।
উক্ত সম্মিলনে, গৃহকর্মীদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় ও বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, শিরিন পারভিন হক, নারী বিষয়ক সংস্কার প্রধান এবং এডভোকেট সালমা আলী,নির্বাহী পরিচালক , বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতিসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারকগণ, নাগরিক সমাজ, এবং আন্তর্জাতিক ও জাতীয় র্পযায়ে বিভিন্ন এনজিও যেমন অক্সফাম ,ডিএসকে,কর্মজীবী নারীর প্রতিনিধিসিহ ঢাকা জেলার মোহাম্মদপুর ,বাড্ডা ,খিলগাঁও ও মিরপুর এলাকার প্রায় ১০০০ গৃহকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন ।