বগুড়ায় নারী হাজতখানায় আসামি তুফানকে রাখার ঘটনায় গ্রেফতার ০৫, দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ প্রত্যাহার


শাহজাহান আলী,বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বগুড়ায় আদালতের নারী হাজত খানায় আলোচিত ধর্ষণ মামলাসহ ১৭ মামলার আসামি তুফান সরকারকে রাখার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই সাথে নারী হাজত খানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা,এটিএসআই জয়নাল আবেদীনকে পুলিশ,লায়ন্সে ক্লোজ করা হয়েছে।
০৩ মার্চ (সোমবার) দুপুরে বগুড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নারী হাজত খানায় পুলিশের সহযোগিতায় শহরের শ্রমিক লীগের নেতা তুফান সরকারকে রাখা হয়।
আদালতের এব্যাপারে তুফান সরকারের স্ত্রী আইরিন আক্তার(২০) শাশুড়ি তাসলিমা খাতুন(৪৫),শ্যালক নয়ন আকন্দ ওরফে আশিক (২৫), স্ত্রীর বড়বোন আশা(২৩) ও আইনজীবীর সহকারী হারুনর রশীদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সেইসাথে পুলিশ সুপারের নির্দেশে নারী হাজত খানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এটিএসআই জয়নাল আবেদীনকে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ)হোসাইন মুহাম্মদ রায়গানকে কমিটির প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে।
এই কমিটিকে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে পুলিশ সুপারের কাছে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করার কথাও বলা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ আদালতের একটি মামলায় সোমবার হাজিরা দিতে কোর্ট নেওয়া হয়। অন্য মামলায় কারাগারে থাকা তুফান সরকারকেও কোর্টে আনা হয়।
হাজিরা শেষে তুফান সরকারকে আদালতের নারী হাজত খানায় রেখে দেওয়া হয়।ওই সময় নারী হাজত খানায় তুফান সরকারের স্ত্রী আইরিন আক্তার তার শাশুড়ি তাসলিমা খাতুন, শ্যালক নয়ন আকন্দ ওরফে আশিক তুফান সরকারের স্ত্রীর বড়বোন আশা ও আদালতের আইনজীবীর সহকারী হারুনর রশীদ ছিলেন।
তারা ভিতরে থাকা অবস্থায় বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত চত্বর সরব হয়ে ওঠে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান জানান,আদালতের নারী হাজত খানায় নারীদের সঙ্গে একটি মামলার আসামি তুফানকে রাখা হয়েছিল। এখানে আইনত অপরাধ হয়েছে।
এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার জন্য নারী হাজতের দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এটিএসআই জয়নাল আবেদীনকে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজ করা হয়েছে।
একই সাথে ওই নারী হাজত খানায় তুফান সরকারপর স্ত্রী আইরিন আক্তার, তার শাশুড়ি তাসলিমা খাতুন, শ্যালক নয়ন আকন্দ ওরফে আশিক, তুফানের স্ত্রীর বড়বোন আশা ও আদালতের আইনজীবীর সহকারী হারুনর রশীদকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
বগুড়ার কোর্ট ইন্সপেক্টর মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকালে তুফান সরকারকে বিদ্যুৎ আদালতে হাজিরার জন্য কারাগার থেকে আনা হয়।
দুপুরের মধ্যেই কারাগার থেকে আনা সকল হাজতিকে প্রিজন ভ্যানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হাজত খানায় পরিবারের লোকজনের সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ করে দেয় জয়নাল আবেদীন। আদালতে সবার অগচোরে ঘটনাটি ঘটে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা সাংবাদিকদের বলেন,পুরুষ আসামিকে নারী হাজত খানায় পরিবারের সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে এটিএসআই জয়নাল আবেদীনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ কুইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এবিষয়ে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।পুলিশপর আরো যাদের গাফলতির প্রমান পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য ২০১৭ সালে এক কলেজ ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে তুফান সরকার। পরে শালিস ডেকে ধর্ষিতা ও তার মা’কে চরিত্রহীনা উল্লেখ করে তাদের মারধর করে তুফান ও তার সহোযোগিরা।
সেই ঘটনা দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে তুফান সরকারকে গ্রেফতার করা হয়। আগস্টের পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গত অক্টোবর মাসে ডিবি পুলিশ তুফান,সরকারকে গ্রেফতার করে।