সিরাজগঞ্জে তৃতীয় লিঙ্গ হওয়ায় সালিশে গ্রাম ছাড়ার রায়,দুই সালিশকারী গ্রেপ্তার
তৃতীয় লিঙ্গ’ (হিজড়া) হওয়ায় গ্রাম্য সালিশে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মনিরুল ইসলাম নামে (২৭) এক ব্যক্তিকে পরিবারসহ গ্রাম ছাড়ার রায় দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় মনিরুলের বড় ভাই মজনু বাদী হয়ে উল্লাপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এরপর মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) গভীর রাতে দুই সালিশকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক কুমার দাশ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার ২ জন হলেন মঞ্জুর আলম (৫৫) ও মেছের আলী (৫২)।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, উল্লাপাড়ার চরঘাটিনা গ্রামের হাফেজ মিস্ত্রির ছেলে মনিরুল ইসলাম জন্মের পর থেকে ছেলের শারীরিক চিহ্ন নিয়েই বড় হচ্ছিলেন। বয়স ১৫ বছর হওয়ার পর থেকে তার হরমোন পরিবর্তিত হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে শারীরিক গঠনেও পরিবর্তন আসতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তরিত হন। মনিরুলের এই পরিবর্তন প্রথম দিকে কেউ কিছু না বললেও পরে প্রতিবেশীরা তার সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করা শুরু করেন।
এরপর তার তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তরিত হওয়ার বিষয় নিয়ে গত ১৩ এপ্রিল হঠাৎ গ্রাম্য সালিশ বসে। সালিশ বৈঠকে হিজড়া হওয়ার কারণে মনিরুলের পরিবারকে এক মাসের মধ্যে বাড়িঘর বিক্রি করে গ্রাম থেকে চলে যাওয়ার রায় দেন মঞ্জুর আলম ও মেছের আলী। রায়ের পরও গ্রাম ছাড়তে বারবার চাপ দেওয়া হচ্ছিল। এ কারণে বাধ্য হয়ে মনিরুলের ভাই মজনু বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ইচ্ছা করে তৃতীয় লিঙ্গের হইনি। অন্য স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই সমাজে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে মানুষ মনে করা হয় না। ছোটবেলা থেকেই আমাকে অন্য মানুষ থেকে আলাদা করা হয়েছে। সমাজের কেউ আমাকে মেনে নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনের সঙ্গে চলাচল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আর এই কারণেই আমাকে পরিবারসহ গ্রাম ছাড়ার রায় দিয়েছেন মাতবররা।
জানতে চাইলে উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক কুমার দাশ বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ায় মনিরুলকে সপরিবারে গ্রাম ছাড়ার রায় দেওয়া হয়। এই বিষয়ে মনিরুলের বড় ভাই মজনু বাদী হয়ে ১২ জনকে বিবাদী করে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর গভীর রাতে দুই সালিশকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
বৈশাখনিউজ/ ইডি