জোর করে কাবুল দখল করলে স্বীকৃতি পাবে না তালেবান: ব্লিনকেন

আপডেট: July 29, 2021 |
print news

ভারত সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বুধবার দিল্লিতে ঘোষণা করেছেন, আফগানিস্তানে তালেবান যদি জোর করে ক্ষমতা দখল করতে চায়, তা হলে তারা কখনোই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে না।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে সঙ্গে নিয়ে এক যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে তারা আরও জানিয়েছেন, তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনার মধ্যে সমাধান খোঁজাই একমাত্র পথ বলে দুই দেশ বিশ্বাস করে।

আমেরিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে নিয়ে গঠিত যে ‘কোয়াড’ জোটকে নিয়ে চীন বেশ কিছুদিন ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছে সেই প্ল্যাটফর্মেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে উভয় দেশই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

বস্তুত, এ বছরের গোড়ায় বাইডেন প্রশাসন ওয়াশিংটনে দায়িত্ব নেয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের এটাই ছিল প্রথম ভারত সফর।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে এসে পৌঁছনোর পর তিনি বুধাবার সকালে প্রথমে বৈঠক করেন ভারতের সুশীল সমাজের বাছাই-করা জনাকয়েক প্রতিনিধির সঙ্গে।

তার পর একে দেখা করেন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে।

সব বৈঠকেই আলোচনার একটা বড় অংশজুড়ে ছিল আঞ্চলিক নিরাপত্তা তথা আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি।

পরে বিকেলে দুদেশের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে আফগানিস্তান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘এটা ঠিকই যে গত সপ্তাহে আমরা বেশ কয়েকটি জেলা সদরে তালেবানের অগ্রযাত্রা দেখেছি।

প্রাদেশিক কয়েকটি রাজধানীও তারা কব্জা করতে চাইছে। যে সব এলাকা তারা দখল করেছে সেখানে নির্যাতন চালানোরও খবর আসছে- যেগুলো সত্যিই বিচলিত করার মতো।’

ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘পাশাপাশি আমি এটাও বলব তালেবান কিন্তু বহুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাইছে, চাইছে তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক এবং তাদের নেতারা যাতে দুনিয়ায় অবাধে ঘুরে ে
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আফগানিস্তানে জোর করে ক্ষমতা দখল করতে গেলে বা নিজেদের লোকদের ওপর অত্যাচার করে সে লক্ষ্য পূরণ হবে না।’

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়ে গেলেও সে দেশে শক্তিশালী একটি দূতাবাস ও নানা উন্নয়নমূলক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে আমেরিকার জোরালো প্রভাব ও উপস্থিতি থাকবে বলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন।

তবে তার ভারতীয় কাউন্টারপার্টের কথা থেকেও স্পষ্ট হয়ে গেছে, সে দেশ থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে ভারত হতাশ – কিন্তু এখন তারা সেই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আলোচনার ওপরেই জোর দিতে চাইছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে যেখানে একটা শক্তিশালী মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ছিল তা তুলে নেয়া হলে অবশ্যই তার প্রভাব পড়বে, সেটা অবধরিত। কিন্তু এখন এটার ভাল-মন্দ বিচার করার সময় নয়, একটা নীতি গৃহীত হয়েছে এবং আমাদের সেটা মেনে নিয়েই চলতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কূটনীতিও পরিচালিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘আর এখানে আমরা-সহ আফগানিস্তানের প্রায় সব প্রতিবেশীই বিশ্বাস করে হিংসার অবসান ঘটিয়ে রাজনৈতিক পথেই সে দেশে শান্তি ফেরাতে হবে। হ্যাঁ, কোনো দেশ তার ব্যতিক্রমও আছে – কিন্তু সেই বাস্তবতাও তো নতুন কিছু নয়, বরং কুড়ি বছরের পুরনো।’

ভারত যেমন এখানে সরাসরি পাকিস্তানের নাম নেয়নি, তেমনি কোয়াড নিয়ে প্রশ্নের জবাবেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টরি ব্লিঙ্কেন একবারও চীন শব্দটা উচ্চারণ করেননি।

কিন্তু এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন, এই জোট নিয়ে চীনের যতই আপত্তি থাক তাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বন্ধ হবে না।

সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেনের কথায়, ‘কোয়াড আসলে খুবই সহজ একটা জিনিস। কিন্তু এটা আসলে যত সহজ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। চারটি সমমনা দেশ- ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া একজোট হয়েছে যাতে একটি মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক গড়ে তোলা যায়, যাতে এই অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়। তবে এটা কিন্তু কোনও সামরিক জোট নয়, বরং আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলায় ও আন্তর্জাতিক মূল্যবোধের প্রসারে একটি সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম।’

বুধাবর সকালেই দিল্লিতে তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামার একজন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করে ব্লিঙ্কেন চীনকেও একটি কড়া বার্তা দিয়েছেন।

সকালে ভারতের সুশীল সমাজের সঙ্গে তার বৈঠকে আমন্ত্রিত ছিলেন দিল্লিতে দালাই লামার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র টিবেট হাউসের প্রধান গেশে দোরজি- যার ছবি বৈঠকের পর টুইট করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই।
খবর বিবিসি

বৈশাখী নিউজ/ জেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর