শুরু হচ্ছে সৌদি ও পাকিস্তানের যৌথ সামরিক মহড়া

পাকিস্তানের সাথে যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নেয়ার জন্য সৌদি নৌ বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ করাচি বন্দরে এসে ভিড়েছে। পাকিস্তান ও সৌদি আরবের এ সামরিক মহড়ার নাম দেয়া হয়েছে ‘সামরিক সহযোগিতা জোরদার’। মহড়ার দিন তারিখ এখনো প্রকাশ করা হয়নি এবং ধারনা করা হচ্ছে দু’পক্ষের বিরাজমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা এবং সামরিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো এ মহড়ার উদ্দেশ্য।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তান বেশ কয়েকটি দেশের সাথে যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে রাশিয়া ও কাতারের কথা উল্লেখ করা যায়। ধারনা করা হচ্ছে পাকিস্তানের ঘন ঘন সামরিক মহড়া চালানোর অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে এ অঞ্চলে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের মোকাবেলায় নিজেদের প্রতিরক্ষা শক্তিকে জোরদার করা। সম্প্রতি পাকিস্তানের ইমরান সরকার জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য এ ধরনের সামরিক মহড়াকে বেছে নিয়েছে যাতে সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় সরকারের শক্তি ও আন্তরিকতার প্রমাণ দেয়া যায়।

সম্প্রতি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দেয়ার অভিযোগ এনে আফগানিস্তানের তালেবানসহ অন্য আরো বহু বিষয়ে ইসলামাবাদের নীতিতে পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়েছে। ইরানের আফগানিস্তান বিষয়ক রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাইয়্যেদ আব্বাস হোসেইনি এ ব্যাপারে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সমাজ পাকিস্তানের প্রতি তালেবানের নির্ভরশীলতার বিষয়ে অবহিত আছে। তালেবানকে সমর্থন দিতে গিয়ে পাকিস্তানকে ব্যাপক সামরিক মূল্য দিতে হয়েছে এবং এর ফলে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আকাশ, স্থল ও নৌপথে অন্য দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের যৌথ সামরিক মহড়ার অন্যতম একটি প্রভাব হচ্ছে অন্য সব কিছুর তুলনায় সামরিক ক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানো। গত বছরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পাক সেনাবাহিনীর বাজেটের পরিমাণ সাত শতাংশ বেড়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, সামরিক শক্তির ওপর নির্ভর না করেই ভারত ও পাকিস্তান তাদের বিরোধ মিটিয়ে ফেলার সুযোগ রয়েছে এবং একে অপরের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের কোনো প্রয়োজন নেই। পাকিস্তানের রাজনৈতিক কর্মী ও বিশ্লেষক হাসান ইকবাল মনে করেন, ঋণভাবে জর্জরিত হওয়ার কারণে পাকিস্তানের ৪৫ শতাংশ মানুষ দরিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। সরকার শিক্ষা খাতসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে বর্থ হচ্ছে।

যাইহোক, পাকিস্তান ও সৌদি আরব যদিও যৌথ সামরিক মহড়ার মাধ্যমে এ অঞ্চলে নিজেদের শক্তিমত্বার প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পাকিস্তান সরকার এটা ভালো করেই জানে যে এতে করে কেবল এ অঞ্চলে বিশেষ করে ভারতকে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় আরো উৎসাহিত করবে। এ ছাড়া, পাকিস্তান এ অঞ্চলে অন্য দেশের উপস্থিতির সুযোগ করে দেয়ার ফলে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে উত্তেজনা বাড়বে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইয়েমেনে এখনো সৌদি আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। দখলদার ইসরাইলের সঙ্গেও সৌদির ঘনিষ্ঠতা বজায় রয়েছে। এ ছাড়া এ অঞ্চলে উগ্রবাদ ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রেও সৌদি আরবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ অবস্থায় সৌদি আববের সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক মহড়াকে এ অঞ্চলের জনগণ কিভাবে দেখবে এটাই এখন দেখার বিষয়। বিশেষ করে আফগানিস্তানের বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা অনেক জরুরি। সূত্র: পার্সটুডে

বৈশাখী নিউজ/ এপি