পবিত্র কোরআনের আয়াত ক্যালিগ্রাফি করেন অনিল কুমার

আপডেট: November 6, 2021 |

প্রায় তিন দশক যাবত মসজিদের দেয়ালে পবিত্র কোরআনের আয়াত ক্যালিগ্রাফি করেন অনিল কুমার চৌহান। একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও আরবি ও উর্দু ভাষায় ক্যালিগ্রাফিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ভারতের হয়াদারাবাদ প্রদেশের এ শিল্পী।

প্রথম দিকে জীবিকার তাগিদে পেশা হিসেবে উর্দুতে দোকানের সাইনবোর্ড তৈরি করতেন চৌহান। কারণ দশম শ্রেণির পড়ার পর তাকে পরিবারের হাল ধরতে হয়। আঁকা আকিতে আগ থেকেই পারদর্শী হওয়ায় কোরআনের ক্যালিগ্রাফি শুরু করেন। এরপর ক্যালিগ্রাফিতে আরও উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য ভালোকরে ভাষা রপ্ত করেন। এক সময় মসজিদের দেয়ালেও তিনি শিল্পকর্ম শুরু করেন।

গত ৩০ বছরে চৌহান দুই শয়ের বেশি মসজিদের দেয়ালে কোরআনের আয়াত ক্যালিগ্রাফি করেছেন। তার আঁকা নিপুন শৈল্পিক কর্মে অভিভূত হন দর্শনার্থীরা। এছাড়াও তিনি অনেক মন্দির, দরগাহ ও মঠেও ছবি অঙ্কন করেন। এক শ মসজিদে ক্যালিগ্রাফির পর তাকে বিশেষ উপহার দেওয়া হয়। এরপর তিনি স্বেচ্ছায় আরো একশ মসজিদে ক্যালিগ্রাফি করেন।

৩০ বছর আগের স্মৃতিচারণ করে চৌহান বলেন, ‌‘প্রথম দিকে আমি উর্দু বুঝতাম না এবং তা বলতেও পারতাম না। স্থানীয় অধিকাংশই মুসলিম হওয়ায় আমাকে সব সাইনবোর্ড উর্দুতে লিখতে হত। তাই গ্রাহককে উর্দু বাক্য লিখে দিতে বলতাম, যেন হুবহু তা সাইনবোর্ডে আঁকতে পারি। এরপর আমি উর্দু শেখা শুরু করি। পর্যায়ক্রমে এখন তা বলতে পারি, লিখতে পারি এবং বলতেও পারি।’

না বুঝলেও উর্দু ভাষার সঙ্গে আমার গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়। এরপর নিজের দক্ষতা উন্নয়নে ভাষাটি শিখতে শুরু করি। চৌহানের অনিন্দ সুন্দর ক্যালিগ্রাফিতে অভিভূত হয় সবাই। তখন অনেকে তাঁকে মসজিদের দেয়ালে কোরআনের আয়াত আঁকার অনুরোধ জানায়।

তিনি জানান, একজন আমার আঁকা ক্যালিগ্রাফিতে মুগ্ধ হয়ে মসজিদের দেওয়ালে কোরআনের আয়াত ক্যালিগ্রাফির অনুরোধ করে। গত ২৫ বছরে হায়াদারাবাদের অনেক মসজিদেই এখন আমার ক্যালিগ্রাফি আছে।

চৌহান আরো জানান, মসজিদের দেয়ালে একজন হিন্দু লোক ক্যালিগ্রাফি করায় কেউ কেউ অভিযোগ তুলে। পরবর্তীতে হায়দারাবাদের জামিয়া নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে এ কাজের অনুমোদন প্রদান করে।

১৯৯০ সালে প্রথম বারের মতো চৌহানকে হায়দারাবাদের বিখ্যাত নুর মসজিদে পবিত্র কোরআন আয়াতের ক্যালিগ্রাফি আঁকতে বলা হয়। চৌহান বলেন, ‘এ প্রস্তাবে মনে হয়েছিল আমি যেন চাঁদে আছি। তা শুধু আমার প্রতিভার স্বীকৃতি ছিল না, বরং শহরের বিত্তবানদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ তৈরি হয়। আমার ভবিষ্যতের দরজা খুলে যায়।’

অবশ্য হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় চৌহানকে শিল্পকর্ম নিয়ে শুরুতে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। পরবর্তীতে তিনি হায়দারাবাদের জামিয়া নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ফতোয়া পান। তিনি বলেন, এরপর জামিয়া নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে আমার শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়। সেখানে আমি পবিত্র কোরআনের সুরা ইয়াসিনের আয়াত ক্যালিগ্রাফ করি। পরবর্তীতে যারা আমাকে নিয়ে আপত্তি করেছিল, তারাই আমার ক্যালিগ্রাফির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়।’

চৌহান বলেন, ‘আমি মনে করি, শিল্পের কোনো ধর্ম নেই। নামের ভিন্নতা হলেও সৃষ্টিকর্তা একজন। আমরা সবাই তারই উপাসনা করি। আমার বন্ধুদের অধিকাংশই মুসলিম। আমরা একসঙ্গে খাবার খাই। একসাথে আড্ডা দেই। মাহফিলে অংশগ্রহণ করি এবং একে অপরের জীবনকে সমৃদ্ধ করি।’

তিনি আরো বলেন, এ দেশে হিন্দু ও মুসলিমের শান্তিপূর্ণ বসবাস জরুরি। একজন হিন্দু হয়েও মসজিদের দেয়ালে কোরআনের আয়াত ক্যালিগ্রাফি করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। গত তিন দশক ধরে এ পেশায় যুক্ত থেকে আমি কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি। সূত্র : আলজাজিরা

বৈশাখী নিউজ/ ইডি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর