শিমুকে হত্যার পর নিখোঁজের জিডি করেন স্বামী

আপডেট: January 19, 2022 |

অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে হত্যার পর তার স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল স্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার কারণ দেখিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। রোববার (১৬ জানুয়ারি) রাত ১২টায় রাজধানীর কলাবাগান থানায় এই জিডি করা হয়। স্ত্রীকে হত্যার পর নিজেকে সন্দেহের বাইরে রাখতেই নোবেল জিডি করেছেন বলে ধারণা পুলিশের।

নোবেলের করা জিডির তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিপ্লব হাসান বলেন, জিডিতে নোবেল উল্লেখ করেছেন যে তার স্ত্রী সকালে কাউকে না বলে বেরিয়েছেন। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

এর আগে নোবেল তার বাল্যবন্ধু গাড়িচালক এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদের সহযোগিতায় শিমুর মরদেহ দুটি চটের বস্তায় ভরেন নোবেল। মরদেহ কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নের আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর ফেলে আসা হয়।

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। এরপর আটক করা হয় শিমুর স্বামী নোবেলসহ দুজনকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের কথা উল্লেখ করে পুলিশের পক্ষ থেকে এমনটা দাবি করা হয়েছে।

ঢাকা জেলা পুলিশ বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন নোবেল। হত্যার কারণ হিসেবে তিনি পারিবারিক কলহের কথা জানিয়েছেন। তবে বিস্তারিত তদন্ত শেষে হত্যার প্রকৃত কারণ বলা যাবে।

শিমু হত্যার ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেছেন নিহতের ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন। এতে আসামি করা হয় নোবেল, তার বন্ধু ফরহাদ ও আরেকজনকে।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পারিবারিক বিষয় ও দাম্পত্য কলহের কারণে শিমুকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করেছেন নোবেল এবং মরদেহ গুম করতে সহায়তা করেন ফরহাদ।

 

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, শিমুর গলায় দাগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রশি বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

শিমু হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নোবেল ও নোবেলের বন্ধু আব্দুল্লাহ ফরহাদকে তিনদিনের হেফাজতে নিয়েছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) চুন্নু মিয়া মঙ্গলবার আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে সন্ধ্যায় ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগম তিনদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান জানান, মরদেহ উদ্ধারের পর তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে নিহত নারীর পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে। পাশাপাশি অভিনেত্রী শিমুর বাসায় গিয়ে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে। এসময় একটি প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে উদ্ঘাটন হয় হত্যার মূল রহস্য।

তিনি বলেন, মরদেহ গুম করতে দুটি বস্তা যে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতার হুবহু এক বান্ডিল শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে পাওয়া যায়। গাড়িটি ধোয়া ছিল এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো ছিল। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোবেলকে আটক করে পুলিশ।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর নোবেল ও তার গাড়িচালক ফরহাদ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন বলে জানান এআইজি মো. কামরুজ্জামান।

জিজ্ঞাসাবাদে শিমুর স্বামী জানান, পারিবারিক কলহের জেরে তিনি শিমুকে হত্যা করেছেন। ১৬ জানুয়ারি সকাল ৭টা-৮টার দিকে তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। এরপর ফরহাদকে মুঠোফোনে কল করে ডেকে নেন। পরে ফরহাদ ও নোবেল পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর মরদেহ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর মরদেহ নিয়ে বেরিয়ে যান।

বৈশাখী নিউজ/ জেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর