এটিএম কার্ড জালিয়াতির স্বীকারোক্তিতে যা বলেছেন তুর্কি হাকান

আপডেট: January 26, 2022 |

বেসরকারি ব্যাংক ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড ইবিএলের বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে কার্ড স্কিমিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় গ্রেপ্তার তুরস্কের নাগরিক হাকান যানবুরকান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ ছিদ্দিকীর খাসকামরায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। পরে তাকে এবং তার স্থানীয় সহযোগী মফিউল ইসলামকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

এ তথ্য নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসি‘র পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. মামুন অর রশিদ জানান, পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে হাকান জানবুরকান আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়া তা রেকর্ড করা হয়।

ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন বুথ থেকে তিন দিনে ‘৮৪ বার’ টাকা তোলার চেষ্টা করলে গত ১৮ জানুয়ারি তাদের গুলশান-১ নম্বর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসি। এসময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিভিন্ন মডেলের ফোন, একটি ল্যাপটপ, ১৫টি ক্লোন কার্ডসহ মোট ১৭টি কার্ড জব্দ করা হয়।

আদালত সূত্র জানায়, স্বীকারোক্তিতে তুরস্কের নাগরিক হাকান জানবুরকান জানিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে এটিএম বুথকেন্দ্রিক জালিয়াতির সঙ্গে তিনি জড়িত। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০টি দেশের ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করে বিভিন্ন সময় তিনি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রিয়া , স্পেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, বলিভিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, ভিয়েতনাম ও ভারতে গিয়ে ওইসব দেশের নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করে টাকা তুলে নেন বুথ থেকে। সেই ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে বাংলাদেশে আসেন।স্থানীয় সহযোগীর মাধ্যমে রাজধানীর পল্টন এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। এরপর ২ জানুয়ারি থেকে ৪ জানুয়ারি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন বুথে ক্লোন করা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কার্ড ক্লোন করে ৮৪ বার টাকা তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন।

আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির হোতা হাকান আরো জানান,এর আগে ২০১৯ সালে ভারতের আসাম রাজ্যের বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে কার্ড ক্লোনিং করে প্রায় ১০ লাখ রুপি আত্মসাৎ করে। এই ঘটনায় এক তুরস্কের নাগরিক ও ২ বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে আসাম পুলিশ। এরপর আসামিরা ভারতে প্রায় ২০ মাস জেলে থাকার সময় আগরতলার গোবিন্দ বল্লভ প্যান্ট হাসপাতালে পুলিশ হেফাজত থাকে। সেখান থেকে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় হাকান কৌশলে পালিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ভারতের এক নাগরিকের সহায়তায় দুই লাখ রুপির বিনিময়ে সিকিম হয়ে নেপালে পৌঁছায়। সেখান থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে তুরস্কে ফিরে যায়। আবারও নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে কার্ড জালিয়াতির তৎপরতা।

সো্শ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের কয়েকজনে জালিয়াতের সঙ্গে তার যোগযোগ হয় বলেও জবানবন্দিতে জানিয়েছেন হাকান জানবুরকান।

হাকান জানবুরকান ও সহযোগী মফিউল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ২ থেকে ৪ জানুয়ারি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন বুথে গিয়ে কার্ড ক্লোনিং স্ক্যামিংয়ের মাধ্যমে ‘৮৪ বার’ টাকা তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ইস্টার্ন ব্যাংক অ্যান্টি স্ক্যামিং টেকনোলজি ব্যবহার করায় অ্যালার্ম সিস্টেমের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারে। ফলে তারা হ্যাকারদের হাত থেকে স্কেমিং রোধ করতে সক্ষম হয়।

বৈশাখী নিউজ/ এপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর