শ্রীলঙ্কার পর নেপালের অর্থনীতিতে সংকটের কালোমেঘ!

আপডেট: April 14, 2022 |

চরম অর্থসংকটে শ্রীলঙ্কায় যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, তখন দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ নেপালের অর্থনীতিতেও ঘনিয়ে আসছে আশঙ্কার কালোছায়া। অনেকের মতে, অদূর ভবিষ্যতে নেপালের অবস্থা হতে পারে শ্রীলঙ্কার চেয়েও ভয়াবহ। আসন্ন এই বিপদ এড়াতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা।

পমফা খত্রী নামে কাঠমান্ডুর একজন সবজি বিক্রেতা বলেন, “আমরা আমাদের খরচ চালাতে সংগ্রাম করছি। কারণ, প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার স্বামী কাজ করে না। তাই, আমার উপার্জনের ওপরেই আমার পরিবার নির্ভর করে এবং আমার দুই ছেলের স্কুলের খরচও আমাকে দিতে হয়। অথচ মৌলিক জিনিসপত্র এবং পরিবহনের দাম বাড়ছে এবং জীবন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।”

এই মুহুর্তে বিশ্বের অনেক অংশে এটি একটি পরিচিত চিত্র- সাধারণ মানুষ জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সঙ্গে লড়াই করছে।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে ভুগছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির চারদিকে এখন শুধুই হাহাকার। চলছে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট। কাগজের অভাবে স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। কারণ, কাগজ আমদানির মতো বৈদেশিক মুদ্রা তাদের কাছে নেই। বিদেশি ঋণের ভারে জর্জরিত দ্বীপরাষ্ট্রটি। সেই ঋণের কিস্তি পরিশোধেরও অবস্থা নেই তাদের। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না দেশটি। ফলে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে।

হিমালয় কন্যা নেপালও ধীরে ধীরে শ্রীলঙ্কার মতো এমন গভীর অর্থনৈতিক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (সিপিএন-ইউএমএল)।

চলতি সপ্তাহে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দলটির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা বিষ্ণু পাউদেল, সুরেন্দ্র পাণ্ডে ও ড. যুবরাজ খতিবাদা বলেছেন, নেপালের অর্থনীতি সংকটে রয়েছে এবং দ্রুত আরও বাজে পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে।

তাৎক্ষণিক ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন সিপিএন-ইউএমএলের ভাইস চেয়ারম্যান বিষ্ণু পাউদেল। নেপালের অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হওয়া ঠেকাতে অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির আরেক শীর্ষনেতা সুরেন্দ্র পাণ্ডে বলেন, সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়া, ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সক্ষমতার অভাব, বেসরকারি খাতের দুর্বল মনোবল ও সরকারের ক্রমহ্রাসমান উন্নয়ন ব্যয়ের কারণে নেপাল মূলধন ব্যয় বাড়াতে পারবে না।

সাবকে অর্থমন্ত্রী যুবরাজ খতিবাদা বলেছেন, দেশটির অর্থনীতি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে এবং বাহ্যিক খাতের ভারসাম্যহীনতা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।

গত ১০ এপ্রিল নেপাল সরকার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মহা প্রসাদ অধিকারীকে বরখাস্ত করেছে। অর্থনীতিকে সংকটময় অবস্থা টেনে তুলতে ব্যবস্থা না নেয়া এবং নেপালি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধের জেরে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংকের (এনআরবি) তথ্যমতে, হিমালয়ান দেশটির মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ৯৭৫ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় অন্তত ১৭ শতাংশ কম। ক্রমবর্ধমান আমদানি এবং রেমিট্যান্স, পর্যটন ও রপ্তানি থেকে আয় কমে যাওযায় ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকেই নেপালের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নমুখী।

এই ধারা ঠেকাতে সম্প্রতি গাড়িসহ বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে দেশটি। সূত্র- বিবিসি।

বৈশাখী নিউজ/ জেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর