মুকিত পরিবারের জামায়াত সম্পৃক্ততা খুজতে গিয়ে বাধার মুখে তদন্ত কমিটি (ভিডিওসহ)

সময়: 10:19 pm - May 2, 2022 | | পঠিত হয়েছে: 5 বার

গাইবান্ধা পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন ঘোষিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান মুকিতের পরিবারের সঙ্গে জামায়াত ইসলামের সম্পৃক্ততা নিয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর কেন্দ্রের নির্দেশে গঠিত হয় ৫ সদস্যের এক তদন্ত কমিটি।

গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের গঠিত সেই কমিটি তদন্তের জন্য পলাশবাড়ী এলাকায় গেলে সেখানে বাধার মুখে পড়ে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, মাহমুদুজ্জামান প্রান্ত নামের সাবেক এক শ্রমিক লীগ নেতা তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে এসে চিৎকার করছে। এদিকে তদন্ত কমিটি গঠনের পর মুখ খুলছে স্থানীয়রা।

এ সময় তিনি বলেন, শুরুতে তো মুকিত ভাইয়ের পক্ষে সবাই ছিলেন। সুমন (স্থানীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) বলতেছিলো, আগে আমরা সবাই মুকিত ভাইয়ের পক্ষে ছিলাম। কিন্তু ঐ জামায়াত শিবির শোনার পর থেকে বিপক্ষে অবস্থান নিলাম। এ সময় এই সাবেক শ্রমিক লীগ নেতা চিৎকার করে আরো বলেন, কেবল আমি মুকিত ভাইয়ের পক্ষে আছি।

এদিকে তদন্তকালীন সময় এমন ঘটনা প্রসঙ্গে তদন্ত দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুলতান আলী মণ্ডল বলেন, প্রান্ত নামের কেউ একজন চিৎকার করেছে। বিষয়টা আমি জানি। তবে কোন মারামারি বা হতাহত হয়নি। সেখানে প্রথমবার স্পটে গিয়ে তদন্ত করেছি। আমরা আসার আগে বলে এসেছি। জামায়াত সংশ্লিষ্ট কারোরই আওয়ামী লীগে স্থান নেই।

কি ধরণের অভিব্যক্তি জানিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি তার উত্তর না দিয়ে সুলতান আলী মণ্ডল বলেন, দেখুন, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করা উচিত নয়। তবে আমরা শুনেছি, যিনি অভিযোগ করেছেন তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তিনি থানায় জিডিও করেছেন।

তবে তিনি আরো একবার বলেন, জামায়াত সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি আওয়ামী লীগের সদস্য পদও পাবে না। এটি নিশ্চিত করে আমি বলতে পারি। এটি আমাদের দলীয় আদর্শ। আমি কথা দিতে পারি, এই তদন্তের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না।

এদিকে মুকিতের বিরুদ্ধে চলা তদন্ত কর্মসূচি প্রসঙ্গে গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি প্রস্তাবিত কমিটি। এটি এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি নয়। আর একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত কমিটি এলাকা পরিদর্শনও করে এসেছে।

অবশ্য মুকিতের পরিবারের জামায়াত সংশ্লিষ্টতা বা এ সম্পর্কে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। শুধু জানান, তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শেষে প্রতিবেদন দেবে। তবে ‘এটি পূর্ণাঙ্গ বা আহ্বায়ক কমিটি নয়, বরং একটি প্রস্তাবিত কমিটি’- এ বিষয়টি স্পষ্ট করে জানান তিনি।

এর আগে, গত ২৫ এপ্রিল পলাশবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) দায়ের করেন মুকিতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করা আমিনুল ইসলাম।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, মুকিতের ভাই আত্মীয় স্বজনরা আমাকে হুমকি দিয়েছে। তারা আমাকে দেখে নেবে। শেষ করে দেবে এসব কথা বলেছে। মুকিত জামায়াত অধ্যুষিত পরিবারের সদস্য। এসব আমি আগেও বলেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবা শান্তি কমিটির সদস্য ছিল। এখন তাদের মুখোশ খুলে দেওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। এ জন্য জিডি করেছি।

এদিকে পরিবারের জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে নিজের বাবার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার কথা ফোনে সাংবাদিকদের জানান মুকিত। এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার কমান্ডার ও সরকার ঘোষিত মুক্তিযোদ্ধাদের সত্যায়নকারী হিসেবে কাজ করা পলাশবাড়ী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রহমান জানান, মুকিতের বাবার নাম হাবিব। তিনি কখনও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। বরং তার নিজের (মুকিতের বাবার) এবং শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে জামায়াতের দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে।

মুকিতের পরিবারের সঙ্গে জামায়াত সংশ্লিষ্টতা নিয়ে একই রকম অভিযোগ করেন পলাশবাড়ী আওয়ামী লীগ কমিটির সহ-সভাপতি সাইফুল্লাহ রহমান তোতা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘তার (মুকিতের) বাবা পলাশবাড়ী কলেজ সরকারি হওয়ার আগে থেকে চাকরি করত। ১৯৯৪ সালের দিকে চাকরি ছেড়ে জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। পরে মারাও গেছেন। আমি ৭০ এর নির্বাচনে মুকিতের নানার বিরুদ্ধে ভোটের কাজ করেছি। আমি সব জানি, তাদের সবাইকে চিনি। মুকিতও কখনও এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেনি।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক-সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর ২০০৪ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতির পদে থাকা সাইফুল্লাহ রহমান বলেন, ‘জামায়াত পরিবারের এই সদস্যকে সহকর্মী হিসাবে নিয়ে কাজ করা খুবই কঠিন হবে।

এদিকে মুকিতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে যতবারই যোগাযোগ করা হয় প্রত্যেকবার এগুলো মিথ্যা দাবি করে তিনি জানান, ২০০৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের ক্যাম্পাস ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অংশ ছিলেন। অবশ্য ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এতো দীর্ঘদিন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় থাকার কোন সুযোগ নেই বলে মত প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর