‘বাতিল হচ্ছে’ নওয়াজ শরিফের সাজা

ক্ষমতার চেয়ার আসীন হয়েই বড় ভাইয়ের সাজা বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। বর্তমানে লন্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপন করা নওয়াজ শরিফকে নতুন পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে শাহবাজের নির্দেশে। এবার সাজা বাতিল করে ভাইয়ের রাজনীতিতে ফেরার পথও সুগম করতে চলেছেন তিনি। ঈদের পরেই পাকিস্তানে ফেরার কথা রয়েছে নওয়াজের।

সোমবার (২ মে) পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সাজা বাতিল বা স্থগিত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে ক্ষমতাসীন দল মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। এ তথ্য জানিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ।

স্থানীয় একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সানাউল্লাহ বলেছেন, কোনো অভিযুক্তের সাজা বাতিল বা স্থগিত করা এবং এর আগে ‘ভুলভাবে’ দণ্ডিত হলে তার মামলা একটি আদালতে নতুন শুনানির সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ও পাঞ্জাব প্রাদেশিক সরকার উভয়ের রয়েছে। এই বিধান পিএমএল-এন সুপ্রিমোসহ অন্যদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হতে পারে।

২০১৭ সালে পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারি মামলায় পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন নওয়াজ। এরপরেই তার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ দুর্নীতি মামলার তদন্ত শুরু করে ইমরানের সরকার। ২০১৮ সালে অ্যাকাউন্টেবিলিটি কোর্ট আল-আজিজিয়া স্টিল মিল দুর্নীতি মামলায় নওয়াজকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া দেয়। পাশাপাশি অ্যাভেনফিল্ড সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলায় সব মিলিয়ে মোট ১১ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। সঙ্গে ১৩০ কোটি রুপি জরিমানাও করা হয়।

পরে ২০১৯ সালে লাহোর হাইকোর্ট নওয়াজের সাজা স্থগিত করে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেন। কিন্তু লন্ডনে গিয়ে তিনি আর স্বদেশে ফেরেননি।

সম্প্রতি নওয়াজের নাম এক্সিট কন্ট্রোল লিস্ট (ইসিএল) থেকে বাদ দিয়ে তাকে নতুন পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তবে আগের মতো কূটনৈতিক লাল পাসপোর্ট নয়, নতুন সবুজ পাসপোর্ট পেয়েছেন তিনি, যার মেয়াদ থাকবে আগামী ১০ বছর। জিও টিভি জানিয়েছে, গত ২৩ এপ্রিল পাসপোর্টটি ইস্যু করা হয়েছে। এটি পাওয়ার পর নওয়াজের পাকিস্তানে ফিরতে আর কোনো বাধা থাকলো না।

তবে পাকিস্তানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যের ওপর ভিত্তি করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নওয়াজ শরিফ নিজেই নেবেন।

নওয়াজকে কূটনৈতিক লাল পাসপোর্ট দেওয়া নিয়ে বছরখানেক ধরে পাকিস্তানে বিতর্ক চলছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র ডনকে জানিয়েছে, নওয়াজ নিজেই সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন। তাকে সেটিই দেওয়া হয়েছে।

২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, নওয়াজের কূটনৈতিক পাসপোর্ট ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির পর বাতিল হয়ে যাবে।

মন্ত্রী এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য না দিলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, নওয়াজকে লাল পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। ওই পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। তিনি যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সময় ওই পাসপোর্টই নিয়ে গিয়েছিলেন। নিয়মমতো তার লাল পাসপোর্টের মেয়াদ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়। কিন্তু তারপর ইমরান খানের সরকার নওয়াজকে আর কূটনৈতিক পাসপোর্ট দেয়নি।

সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বহুবার অভিযোগ করেছেন, স্বাস্থ্য সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নওয়াজ শরিফ লন্ডনে বসে রয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে ইমরান বলেছিলেন, নওয়াজকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দিয়ে সরকার ভুল করেছে।

২০১৮ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে সংসদীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এতে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখেছিলেন অনেকেই। কিন্তু শাহবাজ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে সেই দৃশ্য বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভাইকে রাজনীতিতে ফেরাতে বেশ আটঘাট বেঁধেই নেমেছেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী। সূত্র: ডন, ডয়েচে ভেলে

বৈশাখী নিউজ/ জেপা