হতাশ নগরবাসী: কবে ফিরবে জাহাঙ্গীর আলম?

আপডেট: August 28, 2022 |

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পরধীর গতিতে চলছে সিটির উন্নয়নমূলক কাজ। অনেক কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। এ নিয়ে হতাশ নগরবাসী।

এ দিকে সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র ও উন্নয়নের নায়ক জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে ফিরবে ? এমন প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে।

দল থেকে বহিষ্কার, মেয়র পদ হারানো জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে প্রকাশ্যে মানুষ কিছু বলছে না। তবে গোপনে গোপনে গাজীপুর নগর জুড়েই জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে চলছে আলোচনা। কি বলবো আর কি হবে এমন চিন্তা করে নগরবাসী নিশ্চুপ। মানুষ এখন বুঝতে পারছে এলাকার উন্নয়নের জন্য জাহাঙ্গীর আলমকেই প্রয়োজন।

জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে মেয়র হন মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।

এরপর তিনি সিটি করপোরেশন এলাকায় রাস্তাঘাট ও ড্রেনসহ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করেন। নগরবাসীর কাছে জনপ্রিয় ও উন্নয়নের নায়ক হয়ে উঠেন জাহাঙ্গীর আলম।

এরমধ্যে অনেক কাজ সম্পূর্ণ হলেও বেশিরভাগ কাজই অসমাপ্ত হয়ে রয়েছে। গত বছরে (২০২১ সাল) জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠায় তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এসব ঘটনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর থেমে যায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন রাস্তা-ড্রেনসহ উন্নয়নমূলক কাজ। তবে কিছু কিছু কাজ চললেও তা খুবই ধীরগতিতে চলছে। এ কারণে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। অসমাপ্ত কাজগুলো কবে শেষ হবে এ নিয়ে হতাশ নগরবাসী।

দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৮ মাস পর চলতি বছরের ১৪ আগস্ট মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন জাহাঙ্গীর আলম। পরে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

দুই সপ্তাহের মধ্যে এলজিআরডি সচিব, উপ-সচিব, আইন সচিব ও গাজীপুর জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করার পর তিন সদস্যের মেয়র প্যানেল গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মেয়র প্যানেলে মনোনীত হয়ে সিটি করপোরেশনের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সিটি করপোরেশন আইনের ধারা ১২ (১) অনুযায়ী, সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

এদিকে গত ২০ আগস্ট‌ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি গাজীপুর নগর ভবনে যান। পরে নথিপত্র যাচাই, তথ্য সংগ্রহ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এছাড়া বিভিন্ন নথিপত্রের ছায়ালিপি তারা নিয়ে যায়। এছাড়া তদন্ত কমিটি বিভিন্নভাবে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন।

কোনাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে না থাকায় নগরের উন্নয়ন থমকে গেছে। তিনি মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত না হলে এতদিনে গাজীপুরের প্রায় সকল রাস্তাঘাট সম্পূর্ণ হয়ে যেত।

এসব রাস্তাঘাট ও উন্নয়নের জন্য জাহাঙ্গীর আলমকেই মেয়র হিসেবে প্রয়োজন। তিনি উন্নয়নের নায়ক। তিনি যেভাবে নগরের উন্নয়নের কাজ শুরু করেছেন তা অব্যাহত থাকলে দ্রুত সময়েই গাজীপুর একটি আধুনিক শহর গড়ে উঠতো। রাস্তাঘাটের জন্য মানুষের কোন দুর্ভোগ থাকতো না।

চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হক বলেন, বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর অনেকেই তাকে খারাপ মনে করেছে।

কিন্তু এখন মানুষ বুঝতে পারছে জাহাঙ্গীর আলম না থাকায় এলাকার উন্নয়ন কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ভারপ্রাপ্ত মেয়র গত ৮ মাসে কি উন্নয়ন করেছে তা আমরা দেখতে পারছি। কাজের কোন অগ্রগতি নেই। গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার উন্নয়নের জন্য জাহাঙ্গীর আলমের বিকল্প নেই।

মানুষ এখন বুঝতে পারছে উন্নয়নের জন্য জাহাঙ্গীর আলমকে কতটা প্রয়োজন।

বাইমাইল এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন বলেন, রাস্তা প্রশস্ত করণ করতে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতি পূরণ দেয়া হয়নি। এতে অনেকেই ক্ষোভ ছিল জাহাঙ্গীর আলম উপর।

মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করার পর অনেকেই ভালোই হয়েছে মনে করতো। এখন আমরা বুঝতে পারছি মেয়রকে বরখাস্ত করায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এলাকার উন্নয়নমূলক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। যা হচ্ছে তা খুব ধীরগতিতে।

উল্লেখ্য- গত বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মোধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে। পরে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ ও দলের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। এরপর ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আজমত উল্লাহ খানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে মেয়র পদে নির্বাচিত হন বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান।

দ্বিতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে মেয়র পদে নির্বাচিত হন মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর