গাজীপুরে জমি লিখে মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল ছেলে

সময়: 6:50 pm - October 3, 2022 | | পঠিত হয়েছে: 2 বার

গাজীপুর প্রতিনিধি: স্ত্রী, ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে ছিল আনসার আলী সংসার। হঠাৎ তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বিয়ে
করেন রইমন নেসাকে (৭০)। দীর্ঘদিন সংসার করার পরও রইমন নেসার ঘরে কোন সন্তানের জন্ম হয়নি। সৎ ছেলে ও মেয়েদের নিয়েই ছিল তার সংসার। পনের বছর আগে স্বামী আনসার আলীর মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পদ ছিল তার শেষ ভরসা। সেই শেষ ভরসার সম্পদই বৃদ্ধ বয়সে রহিমনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর সৎ সন্তান আফাজ উদ্দিন ও নাতী মোস্তফা তার অংশের জমি লিখে নিয়েছে বৃদ্ধ বয়সে দেখভাল করার কথা বলে। কিন্তু দেখভাল তো
দুরের কথা ৬ মাস আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তার সৎ ছেলে ও নাতী। প্রতিবেশীরা রহিমনকে আশ্রয় দিয়েছিল, কিন্তু আশ্রয়দাতাকে হুমকি দেয়ার প্রতিবেশীরাও তাকে ঠাঁই দিচ্ছে না।

এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামে। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে মনুষ্যত্ববিহীন বাবা-ছেলে কর্মকান্ড দেখলেও তাদের কাছে অসহায় তারা।৭৫ বছর বয়সী রইমন বিবি উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত আনসার আলীর স্ত্রী। তিনি তার সৎ ছেলে আফাজ উদ্দিন (৭২) ও নাতি মোস্তফা কামাল (৫০) এর বিরুদ্ধে জমি লিখে নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ এনেছেন।

ভুক্তভোগী রইমন বিবি জানান, স্বামী যখন তাকে বিয়ে করে বাড়িতে আনেন তখন ওই সন্তানরা অনেক ছোট। তিনি নিঃসন্তান হওয়ায় আগের ঘরের এক ছেলে ও তিন মেয়েকে নিজ সন্তানের মত করে বড় করেছেন। কিন্তু শেষ  বয়সে তার সাথে এমন আচরণ করবে তা তিনি ভাবতেও পারেননি। সৎ ছেলে আফাজ উদ্দিন ও নাতী মোস্তফা বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর এখন বিভিন্ন জনের বাড়িতে রাত যাপন করে বেড়ায়। খাওয়া দাওয়া হয় অন্যের ঘরে।

নাতি মোস্তফা কামলাল জানান, দাদির তার জমি আমাকে লিখে দিলেও বাবা আমাকে জমির দখল দেয় না। দাদিও আমাকে ওই জমির দখল বুঝিয়ে দেয় না। এনিয়ে দাদির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বাবার সঙ্গে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জেরেই দাদিকে বাবা বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

রোববার সকালে (২ অক্টোবর) রাতে বরমী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামের সহিদের এর দোকানের সামনে গিয়ে কথা রহিমনের সাথে, এসময় তিনি নির্বাক হয়ে পড়েন, চোখ থেকে অঝড়ে পানি ঝড়ছিল। সাংবাদিক আসার খবরে সেখানে ভিড় জমান ৩০ থেকে ৪০জন গ্রামবাসী। তাদের একজন ইসমাইল।

তিনি জানান, সম্প্রতি রহিমনকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর উদ্যোগ নেন সৎ ছেলে আফাজ। এনিয়ে তারা বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে জানায়, বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হলে কোভিড সনদ থাকতে হবে। তাই শনিবার আরেক নাতনী শারজিন রিক্সা যোগে কোভিড ভ্যাকসিনের টিকা দেয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হলে তাদের সন্দেহ হয়।

তিনি বলেন,টিকা দেয়ার কথা বলে রহিমনকে অন্য কোথাও ছেড়ে আসতে পারে তারা। তাই আমরা বাধা দিয়েছি। এনিয়ে ছেলে আফাজের সাথে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতন্ডা হয়েছে। বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর দীর্ঘদিন ছিলেন পার্শ্ববর্তী সাহেরা খাতুনের আশ্রয়ে।

সাহেরা খাতুন জানান, রহিমনকে আশ্রয় দেয়ার কারণে প্রায় তার সৎ ছেলের পরিবারের লোকজন নানা ধরণের বিদ্রূপ কথাবার্তা বলতো। আমার স্বামী নাই, তাই রহিমন খালাকে নিয়ে থাকতে চেয়েছিলাম, সেখানেও তার ছেলে-নাতী তাকে আশ্রয় না দিতে নারা ধরণের পরামর্শ দিতো। বরমী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল কাশেমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে
তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে একই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য জাকির হোসেন মাস্টার বলেন, জমিজমা ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো। আমি ইউপি সদস্য থাকাকালীন বিষয়টি একাধিকবার সমাধান করেছিলাম। এখন কি অবস্থায় আছে তা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। আমি খোঁজ খবর নিয়ে রহিমনকে সার্বিক সহযোগিতা করবো।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, জমি লিখে নিয়ে বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া খুবই অমানবিক। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি বিষয়টি জেনে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পাশাপাশি বৃদ্ধাকে সরকারি যাবতীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর