তেল, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: November 7, 2022 |

করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক যে মন্দা দেখা দিয়েছে তার জন্য সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সবাইকে একটু সাশ্রয়ী হতে হবে, সতর্ক ও মিতব্যয়ী হতে হবে। নিজেদের সঞ্চয় বাড়াতে হবে। তেল, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করতে হবে। যেখানে খালি জমি আছে, যত বেশি পারবেন খাদ্য উৎপাদন করবেন।

দেশের ২৫ জেলায় নির্মিত ১০০ সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আজ (সোমবার) সকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ফল, তরকারি, যেটাই পারেন, উৎপাদন করবেন। হাঁস-মুরগি, ছাগল, ভেড়া পালন করবেন। নিজেদের উপার্জন নিজেদের করার চেষ্টা করতে হবে। যাতে বিশ্বব্যাপী মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশে বেশি ক্ষতি করতে না পারে। আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্যের যে অভাব দেখা দিচ্ছে, সেই অভাব থেকে বাংলাদেশের মানুষ যেন মুক্ত থাকে, সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা।

তিনি বলেন, ফল, তরকারি, যেটাই পারেন, উৎপাদন করবেন। হাঁস-মুরগি, ছাগল, ভেড়া পালন করবেন। নিজেদের উপার্জন নিজেদের করার চেষ্টা করতে হবে। যাতে বিশ্বব্যাপী মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশে বেশি ক্ষতি করতে না পারে। আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্যের যে অভাব দেখা দিচ্ছে, সেই অভাব থেকে বাংলাদেশের মানুষ যেন মুক্ত থাকে, সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে, তার ধাক্কা যেন বাংলাদেশকে খুব বেশি ক্ষতি করতে না পারে। আঘাতটা লাগবেই, কারণ পৃথিবী একটা গ্লোবাল ভিলেজ, আমরা একই সঙ্গে। কাজেই একটা জায়গায় যদি এ রকম হয়, সারা বিশ্বে দেখা দেয়। সেই অভিঘাতটা বাংলাদেশেও আসে।

তিনি বলেন, আমাদের বাংলাদেশে আমরা আজকে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি করেছি, বিদ্যুৎ দিয়েছি। যদিও প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বিদ্যুতে খুবই সাশ্রয়ী হতে হবে, অপচয় করা যাবে না, কিন্তু উৎপাদন বাড়িয়ে কোনো রকম আন্তর্জাতিকভাবে যে খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে, নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেই সমস্যা থেকে বাংলাদেশের মানুষ যাতে মুক্ত থাকে, সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা। সেই সঙ্গে আমি মনে করি, প্রতিটি পরিবার, তাদের নিজেদেরও সেই চেষ্টা করতে হবে। আজকে বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়নের যে ধারাটা আমরা সৃষ্টি করেছি, সেটা যেন অব্যাহত থাকে। উৎপাদন বাড়ানো, নিজেরা সাশ্রয়ী হন, নিরাপদ থাকেন।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশটাকে উন্নয়নের জন্য আমরা ২০২১ রূপকল্প ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেটাই লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করা। একই সঙ্গে শত সেতু নির্মাণ করা এবং তার উদ্বোধন করা আশ্চর্যের বিষয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে মোবাইল ফোনও ছিল না, মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না, আমরা সেটাও তৈরি করে দিয়েছি। আমরা আজ একই সাথে সমস্ত বাংলাদেশের যোগাযোগ করে এই সেতু উদ্বোধন করার সুযোগ পেয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা সিলেট ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করে দিয়েছি। এখন কক্সবাজার বিমানবন্দরের কাজ চলছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সমগ্র বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। করোনা ভাইরাস, তারপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে শুধু আমাদের না, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। এর মাঝেও সেতুগুলো নির্মাণ করে কাজ যে সম্পন্ন করেছে, সেজন্য যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং সেতুর কাজের সাথে যারা সম্পৃক্ত ছিল তাদের ধন্যবাদ জানাই।

ডেঙ্গুর বিষয়ে সতর্ক থাকার নিদের্শ দিয়ে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে। মশারি টানিয়ে শোয়ার ব্যবস্থা অথবা কোথাও যেন পানি না থাকে। মশার প্রজনন জায়গাগুলো ধ্বংস করে দেওয়া, নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যা করার আমরা তা করব। আপনাদের পাশে আমরা আছি। সারা বাংলাদেশের উন্নয়নটাই আমাদের লক্ষ্য। জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নের কাজ করে। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছি।

ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জনগণকে সচেতন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যেখানে যেখানে ডেঙ্গুর প্রভাব যাচ্ছে। নিশ্চয়ই নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে। মশারি টানিয়ে শোয়ার ব্যবস্থা করা, কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, মশার প্রজনন কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করে দেয়া, নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজেদের করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যা করার, সেটা আমরা করব। আমরা আছি আপনাদের পাশে। সারা বাংলাদেশের উন্নয়ন আমাদের লক্ষ্য।

দেশের যোগাযোগব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ২৫টি জেলায় নির্মাণ করা ১০০টি সেতুর নাম পড়ে শোনান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় দেশবাসীকেও শুভেচ্ছা জানান তিনি।
উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, শত সেতু উদ্বোধন করা একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার। এ রকম ঘটনা কিন্তু হয়নি।
জনগণের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ, সুন্দরভাবে ব্যবহার করা, এটার নিরাপত্তা দেয়া, আপনাদের নিজ নিজ দায়িত্ব। আমি মনে করি, এই সেতু নির্মাণের ফলে প্রতিটি অঞ্চলে আর্থসামাজিক উন্নতি আরও ঘটবে।

সরকারের আমলে নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর বিভিন্ন সড়কে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০৩ মিটার সেতু পুনর্র্নিমাণ, ২১ হাজার ২৬৭ মিটার কালভার্ট নির্মাণ করেছি। বহু সড়ক আজকে আমরা মহাসড়কে রূপান্তর করে দিচ্ছি, যাতে যোগাযোগব্যবস্থা আরও উন্নত হয়। চার লেন বা ছয় লেন করেও আমরা সেতু করে দিচ্ছি।

কারণ আমরা চাই যোগাযোগব্যবস্থা আরও উন্নত হোক।
নিজস্ব অর্থায়নের পদ্মা সেতু নির্মাণের গৌরবগাথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমনভাবে করে দিচ্ছি যেন বাংলাদেশ শুধু দেশের অভ্যন্তরে না, এশিয়ান হাইওয়ে ও এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গেও যুক্ত হতে পারি। ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ যেন আমাদের এগিয়ে যেতে পারে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে বিভিন্ন সড়ক ও রেল ব্রিজ করে দিচ্ছি।

এই সেতুগুলো নির্মাণের ফলে শুধু যোগাযোগব্যবস্থাই নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, তাদের পক্ষে সহজ হবে প্রতিটি এলাকায় দ্রুত যাওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অথবা কোনো দুর্ঘটনা-দুর্বিপাক দেখা দিলে মানুষের সাহায্য করা।

সেই দিক থেকে বিরাট একটা সুবিধা সবাই পেয়ে যাবেন। পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, বাজারজাতকরণ সহজ হবে, পণ্য পরিবহন সহজ হবে।
নৌপথ সচল রাখতে নদীগুলো নিয়মিত ড্রেজিং করা হচ্ছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, অনেকে অনেক কথা বলতে পারে, কিন্তু যে কাজগুলো করে দিয়েছি আমরা, তার সুফল পাচ্ছে দেশের মানুষ। আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের জন্য।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে সেতুগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। অনুষ্ঠানে সেতুগুলোর ওপরে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর