বিএনপির এখন জ্বালা, মির্জা ফখরুলের মনে বড় জ্বালা: কাদের

সময়: 6:33 pm - November 19, 2022 | | পঠিত হয়েছে: 3 বার

মাছুদ পারভেজ,গাজীপুর প্রতিনিধি: বিএনপির এখন বড় জ্বালা, মির্জা ফখরুলের মনে বড় জ্বালা, তারা কিছুই দেখে না। পদ্মা সেতু তো হয়েই গেলো এখন বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেলও হয়ে গেলো, মেট্টোরেলও হয়ে গেল বলে মন্তব্য করেছেন
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শনিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যের তিনি এসব কথা বলেন। শহরের রাজবাড়ী মাঠে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় এ সম্মেলন।

মন্ত্রী বলেন, বিএনপি এখন দিনের আলোতে অমাবশ্যা দেখে, পুর্ণিমার রাতেও অমাবশ্যা দেখে। তারা দেশের উন্নয়ন দেখে না। তারা বলে শুধু জনতার ঢল, অথচ তাদের সিলেটে জনতার ঢেউ নেই সেখানে আছে সুরমা নদীর ঢেউ। গাজীপুরের সম্মেলনে শুধু মহানগরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত আছেন, জেলার নেতাকর্মীরা তো বাদই আছে, আর সিলেটের বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ হচ্ছে পাঁচটি জেলা নিয়ে। দুটি অনুষ্ঠানের তুলনা করে মন্ত্রী বলেন, সিলেটের বিএনপি’র সমাবেশের চাইতে গাজীপুরে পাঁচগুণ বেশি জনসমাগম হয়েছে। মাঠে জায়গা না পেয়ে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত মানুষ দাঁড়িয়ে এ অনুষ্ঠান শুনছেন। গাজীপুরে বঙ্গোপসাগরের টেউ, আর সিলেটে সুরমার টেউ।

বিএনপি এখন বলে আমাদের নিরাপদে প্রস্থান করতে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে। অথচ কোন মুখে তারা এমন কথা বলে, তারাতো আন্দোলন করতেই জানে না। তারা মুখে দেশ নেত্রী বলে ফেনা তুলে অথচ নেত্রীর জন্য একটি মিছিলও করতে পারে না।

দেখতে দেখতে ১৩ বছর, মানুষ বাঁচে ক’বছর। এখন খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। তাই খেলার জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে বলেন তিনি।

বিএনপির সমাবেশগুলোতে খানাপিনা ভালোই হচ্ছে বলে মন্তব্য করে এ নেতা বলেন, বিএনপি মনে হয় ভালোই আছে, কাথা, বালিশ, হান্ডি, পাতিল নিয়ে ৭ দিন আগে থেকেই সমাবেশ স্থলে চলে যাচ্ছে। তারা গরুর মাংস খাচ্ছে, মুরগীর মাংস খাচ্ছে। সমসাময়িক সময়ে বিএনপির আন্দোলন রঙিন খোয়াবেই থাকবে, তারা এখন বিদেশীদের কাছে নালিশ করে নালিশ পার্টি হিসেবে পরিচিত হয়েছে। বিএনপি জনগন কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত।

ডিসেম্বর বিজয়ের মাস, তারা যদি মাঠে নামে তাহলে রাজপথে খেলা হবে। তারা শেখ হাসিনাকেও সম্মান করতে জানে না। শেখ হাসিনাকে হাসিনা বলে ডাকে অথচ শেখ হাসিনা দয়া করে তাদের নেত্রীকে দন্ডিত হওয়া সত্তে¡ও বাড়ীতে থাকতে দিয়েছে।

বিএনপি আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে, তাই তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। তাই নেতাকর্মীদের প্রস্তত হওয়ার আহবান জানান তিনি। এসময় মন্ত্রী খেলা হবে বলে শ্লোগান তুলতে সম্মেলন মাঠে উপস্থিত কর্মী সমর্থকরাও খেলা হবে বলে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করেন মাঠ।

সরকারের উন্নয়ন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার সরকার একদিনে শতাধিক সেতু উদ্ভোধন করে মাইলফলক গড়েছে, সারাদেশে উন্নয়নযজ্ঞ চলছে, বর্তমান প্রজন্মের জন্য মেট্টোরেল আমরা তৈরী করেছি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। আমাদের শেখ হাসিনা হলো ম্যাজিক ম্যান।

তিনি আরো বলেন, মোস্তাক ও জিয়াউর রহমান হলো ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার মাষ্টারমাইন্ড, তারা ৩রা নভেম্বরের হত্যার মাষ্টার মাইন্ড, এরা বিশ্বাসঘাতক। জিয়ার ছেলে তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে হত্যাচেষ্টা করেছিলো। অথচ ইতিহাসের শিক্ষা হলো কোন বিশ্বাসঘাতকের শেষ রক্ষা হয়নি।

সম্মেলন ঘিরে শুধু মহানগর নয় পুরো জেলার নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে গাজীপুর শহরের রাজবাড়ী মাঠ। দুপুরের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে সমাবেশস্থল। মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলন হলেও এটি রূপ নেয় বিশাল জনসভায়।

অপরদিকে, সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকেই জেলা শহরের যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়। নেতাকর্মীরা প্রায় কয়েক কিলোমিটার দুর হতে মিছিল সহকারে পায়ে হেঁটে সভাস্থলে আসেন। বেলা দুইটায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন শুরু হয়।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডলের স ালনায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এমপি, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি, গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবাহান গোলাপ এমপি, আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা দেলোয়ার হোসেন, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাউসার, ইকবাল হোসেন অপু এমপি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন, শাহাবউদ্দিন ফরাজি, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, সংরক্ষিত আসনের শামসুন্নাহার ভূইয়া এমপি, রুমানা আলী টুসি এমপি প্রমুখ।

সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে নেতৃত্ব বাছাই করা হয়। এসময় সভাপতি পদে দুই জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ষোল জন নিজেদের প্রার্থীতা ঘোষণা দেয়। পরে গাজীপুর মহানগরের আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আতাউল্ল্যাহ মন্ডলের নাম ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের।

সম্মেলনে এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রের শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু। এরা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সারা দেশকে নির্যাতন করে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছিল। দেশের গুণীজ্ঞানী ব্যক্তিরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের নেতাও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো। অথচ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এখন আবার সেই তত্ত্ববধায়ক সরকার বিএনপি চায়। কিন্তু তাদের জন্য স্পষ্ট জবাব বাংলাদেশে আর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আসবে না। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বিএনপি আবারও ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছে, বিদেশীদের সাথে নিয়ে নানা পরিকল্পনা করছে, তাদের সকল অপচেষ্টা দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে আওয়ামীলীগ রুখে দিবে।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেন, যারা বলছে দেশে দুর্ভিক্ষ হবে, তারা মিথ্যা বলছে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বলছেন, দেশকে বিদেশের মাটিতে হেয় করেছেন। বিশেষজ্ঞ সহ সবাই বলছে এ দেশে দুর্ভিক্ষ তো হবেই না অদূর ভবিষ্যতেও হবে না। কেননা, শেখ হাসিনা নানা পদক্ষেপ নিয়ে সকল হুমকি মোকাবেলা করছেন। কৃষকদের বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছেন। দেশ আজ খাদ্যে, সবজি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশের নানা দুর্ণাম ছিল একটি সময়, খাবারের উৎপাদন কম ছিল অথচ আওয়ামীলীগের ১৪ বছর শাসনামলে এখন আর সে অবস্থা নেই। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে বলে দাবী করেন এ মন্ত্রী।

এর আগে ২০১৫ সালে মহানগর আওয়ামীলীগের প্রথম কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর ৭ বছর পর আনুষ্ঠানিক ভাবে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর