তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করা হবে: ফখরুল

আপডেট: November 19, 2022 |

মিজান মোহাম্মদ, সিলেট প্রতিনিধি: সারা দেশের মানুষের দাবি এক, দফা এক- বর্তমান জালিম সরকার শেখ হাসিনা পদত্যাগ। এ সমাবেশ থেকে দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাই, সবাই ঐক্যবব্ধ হয়ে বর্তমান স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই সিলেট থেকেই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। আজকে এই সৈরচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র ফেরাতে এই সিলেট থেকেই আবার যুদ্ধ শুরু হলো। এই যুদ্ধ, ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধ মুক্তি পাওয়ার যুদ্ধ।

শনিবার বিকেলে সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল ১১টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা ময়দানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় এই গণসমাবেশ।

তিনি বলেন, জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন অনিবার্য। এই সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনে আমরা নেই। অবশ্যই তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করা হবে। অবিলম্বে দেশে জনগননের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই সরকারকে আর রাতের আঁধারে ভোটের বাক্স ভরার সুযোগ দেয়া হবেনা। তাদের প্রতিরোধ করা হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১৪ বছর ধরে এই সরকার দেশকে একটি তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। সরকার যা যা করেছে তার বিচার হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবে তাদের চিহ্নিত করা হবে। আপনারা নতুন যুদ্ধে নেমেছেন। এই যুদ্ধ মুক্তির যুদ্ধ। এ যুদ্ধ নিজের অধিকার ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ। এ যুদ্ধ নিজের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ। শাহজালাল রাহ. যেভাবে যুদ্ধ করে সিলেটে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন আপনাদের সিলেট থেকেই নতুন যুদ্ধ শুরু হলো। এ যুদ্ধ শেখ হাসিনা সরকারকে হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ।

মির্জ ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। ইভিএমে কোনো ভোট বাংলাদেশে হবে না। আমরা জনগণের সরকার চাই। জনগণ এবার তাদের ভোট দেখে নেবে। দিনের ভোট রাতে দেওয়া আর চলবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা দেশে শান্তি চাই। অশান্তি চাই না। আমাদের দাবি এক- সরকারের পতন চাই। রাজপথেই এর ফয়সালা হবে। এই দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাই অভিলম্বে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। মধ্যবর্তী সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। ‘সকল দলকে আমরা আহ্বান জানাই, আসুন আমরা একাত্তরের মতো এক হই। এই দানবীয় সরকারকে সবাই মিলে পরাজিত করি।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকীর যৌথ সঞ্চালনায় সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গায়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান, যুগ্ন মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ফজলুর রহমান, তাহসিনা রুশদীর লুনা ও ড. এনামুল হক চৌধুরী, সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

গণসমাবেশের প্রধান বক্তা বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু খেলার ডাক দেয়। তবে তারা তো দরজা বন্ধ করে খেলায় পারদর্শী। যে কারণে পাপিয়ারা ধরা পড়লে ওবায়দুল কাদের আর তার দলের নেতাদের বুক ধড়ফড় করে। সরকার পুলিশ ও পেটোনা বাহিনী দিয়ে হামলা করে, বাস ট্রাক বন্ধ করে সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু জনগণকে আটকে রাখা যায়নি। তারা ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। জনগণ সমাবেশ করেছে। বাস ট্রাক বন্ধ করে প্রতিদিন দেশের কত কোটি টাকার ক্ষতি করা হল তার জবাব সরকারকে দিতে হবে।

ওবায়েদুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলে, তিনি বলছেন খেলা হবে। কিন্তু দরজা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে যে খেলা এটা ছাড়া আর খেলা তিনি জানেন না। যখন পাপিয়া-পরীমণিরা ধরা পরে তখন আওয়ামী লীগ নেতাদের বুক ধরফর করে। বিএনপি আনাড়ি খেলোয়াড়দের সাথে খেলে না। খেলা শিখে আসেন। নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে খেলেন। শেখ হাসিনাও জামানত হারাবেন।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, যত টাকা ঋণ করা হয়েছে সেই টাকার সুদ দেয়ার মতো টাকাও কোষাগারে নেই। সরকার লুটে নিয়েছে। আজকে গণতন্ত্রের অবস্থা ইলিয়াস আলীর মতো। ইলিয়াস গুম, গণতন্ত্রও গুম। আমরা ইলিয়াস আলীর মতো গণতন্ত্রকেও খুঁজছি। ১০ ডিসেম্বরের পর সরকার পতনের আন্দোলনে নামবো। সাহস থাকলে ক্ষমতা ছাড়েন। জিয়াউর রহমান খুনের সাথে শেখ হাসিনা জড়িত কি না তা আমরা খুঁজে বের করবো। সব গুম খুনের বিচার হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সিলেটবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এ কারণে যে, আজকের গণসমাবেশে সিলেটের আলিয়া মাদরাসার মাঠ কানায় ভর্তি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের দলের নেতা কামালকে খুন করা হয়েছে। আসামীরা এখনো অধরা। আমি তাকে স্মরণ করছি। আমরা তার হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসবো।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, মানুষের বয়স বাড়েলে মিথ্যা কথা কম বলে, গোনা কম করে, কিন্তু আমাদের দেশের সরকার মিথ্যা কথা বলতে চোখ কাপে না।এরা দাবি করে ২০১৮ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে।এরা নিজেদের ছাড়া অন্য কারো প্রতি তাদের কোনো মুল্যবোধ নাই।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলীর পত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ১ হাজার নেতাকর্মীকে গুম করেছে। অজস্র নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড করে এ সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। তাদের বিচার এ দেশের মানুষ করবে।

সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেটের জনগণ সরকারকে দেখিয়ে দিয়েছে, সিলেটে মাঠি বিএনপির ঘাটি। সিলেটবাসী বিএনপি, বিএনপির চলমান আন্দোলনের সবগুলো দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। সিলেটবাসীসহ দেশের সব মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্তি করবো। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবো।সভাপতির বক্তব্যে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সমাবেশে উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, সকল বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম প্রমান করে দেশের মানুষ আর এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে চায় না।

উল্রেখ্য, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংসদকে বিলুপ্ত, সরকারের পদত্যাগ, চাল-ডাল, জ্বালানি তেল, গ্যাস-বিদ্যুৎ, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দুর্নীতি, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে হত্যার প্রতিবাদে এবং নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারে দাবিতে এই গণসমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর